বুধবার, ৩ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

আবারও মিঠাপুকুরে ফিরতে মরিয়া সেই শিক্ষা কর্মকর্তা

এই খবরে ভীতসন্ত্রস্ত শিক্ষকরা

নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর

শিক্ষকদের নানাভাবে হয়রানি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অবৈধভাবে নিয়োগসহ নানা অভিযোগে বদলি হওয়া সাবেক মিঠাপুকুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম আবারও পুরনো কর্মস্থলে ফিরতে মরিয়া। এর আগে চারবার বদলি ঠেকিয়ে ছয় বছর মিঠাপুকুরেই ছিলেন এই শিক্ষা কর্মকর্তা। তার বিরুদ্ধে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরেও একাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে। সাধারণ শিক্ষকরা তার ভয়ে ছিলেন ভীতসন্ত্রস্ত। মিঠাপুকুরে থাকা অবস্থায় এই কর্মকর্তার রোষানলের কথা ভুলেননি অনেক শিক্ষক। বর্তমানে গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলায় কর্মরত এই শিক্ষা কর্মকর্তা আবারও মিঠাপুকুরে বদলি হয়ে আসার পাঁয়তারা করছেন। এ খবর জানাজানি হলে তাকে মিঠাপুকুরে বদলি না করার জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক কাছে লিখিত আবেদন করেছে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (মাধ্যমিক) মিঠাপুকুর উপজেলা শাখা।  উপজেলার একাধিক শিক্ষক এই প্রতিনিধির কাছে অভিযোগ করে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে মিঠাপুকুরে কর্মরত থেকে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম সরকারি দলের নেতাদের নাম ভাঙিয়ে বিভিন্ন তদবিরে ব্যস্ত ছিলেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো পরিদর্শন ও তদারকি করতেন না। শিক্ষকদের নিয়ে মাসিক সভা করেননি দীর্ঘদিনেও। শিক্ষক নিয়োগে বাণিজ্য বেশি, তাই তার নজর থাকত শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার জন্য। এ ছাড়াও ছয় বছরে নিয়োগ বাণিজ্য, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের জিম্মি করে ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন, অনলাইনে শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিও পাঠিয়ে মোটা দাগে অর্থ হাতিয়ে নেন জাহিদুল ইসলাম।  অবশ্য, শিক্ষা কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম দাবি করেন, যারা সুবিধা পাননি তারাই মিথ্যা অভিযোগ করছেন। নিয়মের বাইরে ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠনের সুযোগ নেই। আর শিক্ষক নিয়োগ কমিটিতে পাঁচজন সদস্য থাকে। যদি কোনো অনিয়ম হয়ে থাকে তার দায়ভার শুধু আমার নয়। কমিটির সবারই হবে। জানা যায়, জাহিদুল ইসলাম ২০১২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি মিঠাপুকুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেন। ২০১৪ সালের ২৫ মে বদলি হন কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ি উপজেলায়। সেখানে তিনমাস দায়িত্ব পালন করে আবারও ২০১৪ সালের ১৯ আগস্ট ফিরে আসেন মিঠাপুকুরে। ছিলেন ২০১৮ সালের ৯ মে পর্যন্ত। ২০১৭ সালের জুলাই-সেপ্টেম্বর তিনমাস বদলি হন নড়াইলের কালিয়া উপজেলায়। পরে নানা কৌশলে বদলি আদেশ বাতিলের চেষ্টা করে সফল হন তিনি।

আবারও একটি বদলি আদেশ হলে সেটিও বাতিল করে মিঠাপুকুরে থেকে যান জাহিদুল ইসলাম। ২০১২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের ৯ মে পর্যন্ত চারবার বদলি হলেও প্রায় ছয় বছর মিঠাপুকুরে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে তিনি গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলায় কর্মরত আছেন।

উপজেলার বুজরুক সন্তোষপুর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সাবেক সভাপতি বোরহান আহমেদ বলেন, মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলামের সহায়তায় প্রধান শিক্ষক সভাপতির স্বাক্ষর জাল করে পাঁচজন শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছিলেন। পরে বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়। ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহিদুল ইসলাম বলেন, নিয়োগ দেওয়ার পর সেটি বাতিল হয়েছে।

রূপসী উচ্চ বিদ্যালয়ের অভিভাবক সদস্য আবদুর রাজ্জাক অভিযোগ করেন, এই বিদ্যালয়ে নির্বাচন না করে গোপনে ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করা হয়েছিল। শুধু কাগজ-কলমে প্রিসাইডিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করেন মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জাহিদুল ইসলাম। ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রেজাউল হক বলেন, ব্যবস্থাপনা কমিটি নির্বাচনে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার প্রিসাইডিং ছিলেন। পরে শিক্ষাবোর্ড ওই কমিটি ভেঙে দেয়। গোপনে ফকিরহাট পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ে ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করতে গিয়ে হামলার শিকার হন জাহিদুল।

উপজেলা শিক্ষক সমিতির (মাধ্যমিক) সভাপতি আজিজুল ইসলাম বলেন, জাহিদুল ইসলাম ছয় বছর মিঠাপুকুরে দায়িত্ব পালনকালে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেছেন। তিনি আবারও এলে তার দৌরাত্ম্য যেমন বাড়বে, তেমনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে। যে কারণে তাকে মিঠাপুকুরে বদলি না করার জন্য গত ২৩ সেপ্টেম্বর মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালকের কাছে লিখিতভাবে আবেদন করা হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর