বৃহস্পতিবার, ৪ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

পরিবর্তনের ছোঁয়ায় রেলওয়ে

এক দৃষ্টিতেই ১২৯ কিলোমিটার

সাইদুল ইসলাম, চট্টগ্রাম

আধুনিকায়ন ও পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে বাংলাদেশ রেলওয়েতে। পরিবর্তন হয়েছে রেলওয়ের গতানুগতিক ধারার। শুরু হয়েছে সেন্ট্রাল ট্রেন কন্ট্রোল (সিটিসি) রুমের কার্যক্রম। ভারত, চীনসহ বাইরের প্রতিটি দেশেই এমন কার্যক্রমে ট্রেন চলছে। বাংলাদেশের মধ্যে প্রথম এই সিটিসি চলছে পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের পাহাড়তলী থেকে। এখানে প্রদর্শিত হচ্ছে চট্টগ্রাম থেকে লাকসাম পর্যন্ত ১২৯ কিলোমিটার ডাবল লাইনের। এক দৃষ্টিতেই ১২৯ কিলোমিটার সরাসরি মনিটর করা হচ্ছে সিটিসি অফিসের মাধ্যমে। নিয়ন্ত্রণে থাকছে লেভেল ক্রসিংও। এ অফিসে বসানো হয়েছে কম্পিউটার, স্বয়ংক্রিয় মেশিন, বিশালাকারের চারটি এলইডি মনিটরও। এগুলোর মাধ্যমে চট্টগ্রাম টু লাকসামের ২৫টি স্টেশনের চিত্র (আউটার টু আউটার) মনিটরিংয়ে দেখা হচ্ছে। রেলমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, রেলকে আরও গতিশীল ও যাত্রীসেবা নিশ্চিত করতে ট্রেন কন্ট্রোলিংয়ের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। কোন ট্রেন কোন স্থানে অবস্থান করছে, তা আরও কঠোর মনিটরিংয়ে রাখতে আধুনিক কন্ট্রোল সিস্টেম ব্যবস্থা বাড়ানো হবে পর্যায়ক্রমে। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে লেভেল ক্রসিংয়ে নিরাপত্তা-প্রহরীর পাশাপাশি সিসিটিভিও বসানো হবে। ইতিমধ্যে ফেনীতে সিসিটিভি বসানো হয়েছে, যা চট্টগ্রাম সেন্ট্রাল কন্ট্রোল রুম থেকে সরাসরি মনিটর করা হচ্ছে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় রেলের উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ অব্যাহত আছে। সম্প্রতি রেলভবন পরিদর্শন শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রেলকে আরও গতিশীল ও শক্তিশালী করতে বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছিলেন। ফলে কক্সবাজার-দোহাজারী রেললাইনের কাজসহ বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। রেলওয়ের মহাপরিচালক (ডিজি, চলতি দায়িত্ব) কাজী মো. রফিকুল আলম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, লাকসাম থেকে আখাউড়া পর্যন্ত বাকি ৭০ কিলোমিটার সিঙ্গেল লাইনটি ডাবল লাইনে উন্নীত করার প্রকল্প চলমান রয়েছে। দ্রুত শেষ করার কাজও চলছে। এ কাজটি শেষ হলে একইভাবে ডিসপ্লের মাধ্যমে সিটিসির কার্যক্রমের আওতায় আনা হবে। রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালের ১২ জুলাই শুরু হয়েছে সিটিসি রুমের কার্যক্রম। পাহাড়তলীর এ অফিসে প্রধান ট্রেন কন্ট্রোলার, প্রধান পাওয়ার কন্ট্রোলারসহ মঞ্জুরিকৃত ২৩ জনের মধ্যে ১৭ জন স্টাফ কর্মরত আছেন। এত বড় একটা গুরুত্বপূর্ণ অফিসে টিএনএল, ডিটিএনএল, সিটিএনএল, পিয়নসহ নেই ছয়জন স্টাফ। ট্রেন চলা প্রতিনিয়ত স্বাভাবিক রাখতে বিভিন্ন স্থান থেকে প্রেষণে সিটিসি অফিসে কাজ করছেন অনেকেই। বর্তমান সরকারের আমলে করা আধুনিকায়নের ছোঁয়ায় এ কার্যক্রমে নতুন করে বসানো মনিটর দেখেই ট্রেন কন্ট্রোলাররা লাল-সবুজ পেনসিলের কালিতে গ্রাফ আঁকছেন। প্রতি আট ঘণ্টা পরপর গ্রাফ চার্ট পরিবর্তন করে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংরক্ষণ করা হচ্ছে। প্রতিজন কন্ট্রোলারের সামনে বসানো হয়েছে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন টেলিফোন। একমাত্র সাইবার বিপর্যয় ছাড়া এটির সংযোগ বিচ্ছিন্ন হবে না। পূর্বাঞ্চলের প্রধান ট্রেন কন্ট্রোলার মো. শাহাবুদ্দিন বলেন, আধুনিক কন্ট্রোল ব্যবস্থা ও ডাবল লাইনের সুফল পাওয়ায় রেল চলাচলে গতি এসেছে। কন্ট্রোলে বসানো মনিটরে ট্রেনের অবস্থান দেখেই চট্টগ্রাম থেকে আখাউড়া পর্যন্ত রেললাইন সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা দেওয়া যাচ্ছে। তবে রেলের গতি আনতে স্টেশন যেমন প্রয়োজন, তেমন রেল নিয়ন্ত্রণে সারা দেশে সিটিসি সিস্টেম প্রয়োজন। সিটিসি চালুর ফলে ট্রেন চলাচলে নাশকতা, দুর্ঘটনাসহ নানাবিধ তথ্য আগাম পেতে সুযোগ হবে। এতে রেলের যেমন সুফল হবে, তেমন ট্রেন চলায়ও গতি বাড়বে। সিটিসি সিস্টেমে চট্টগ্রাম থেকে লাকসাম পর্যন্ত ২৩টি স্টেশন সরাসরি মনিটর করা হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন, চট্টগ্রাম জংশন কেবিন, পাহাড়তলী, কৈবল্যধাম, ফৌজদারহাট, ভাটিয়ারি, কুমিরা, বাড়বকুণ্ড, সীতাকুণ্ড, বারৈয়ারহাট, নিজামপুর কলেজ, বড়তাকিয়া, মিরসরাই, মস্তাননগর, চিনকি আস্তানা, মুহুরীগঞ্জ, ফাজিলপুর, কালীদহ, ফেনী জংশন, শর্শদী, গুণবতী, হাসানপুর, নাঙ্গলকোট, নাওঢী ও লাকসাম জংশন। রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম থেকে আখাউড়া পর্যন্ত মোট ৩৭টি স্টেশন আছে। এ রুটে প্রতি ১০ মিনিট পরপর একটি করে স্টেশন। সিটিসি সিস্টেম চালু হওয়ার আগে স্টেশনমাস্টারদের সহযোগিতায় সিবিএস সিস্টেমে রেললাইন নিয়ন্ত্রণ করা হতো। সিটিসি সিস্টেমে সরাসরি পর্যবেক্ষণ করায় রেলে গতি এসেছে। এখন প্রতি ঘণ্টায় গড়ে ৬০ থেকে ৭৫ কিলোমিটার বেগে রেল চলছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর