বৃহস্পতিবার, ৪ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

একক বিনিয়োগ সুযোগ চায় ইইউ

সচিবালয়ে ক্লাইমেট ডায়ালগ আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশের লজিস্টিক খাতে একক (শতভাগ) বিনিয়োগের সুযোগ চাইছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দেশগুলো। একই সঙ্গে তারা পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে ন্যূনতম মূল্য ধরে যে কর আরোপ করা হয় সেটি সব দেশের জন্যই সমান করার প্রস্তাব দিয়েছে। এসব প্রস্তাব নিয়ে আজ সচিবালয়ে ইইউ-বাংলাদেশ বিজনেস ক্লাইমেট ডায়ালগ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠেয় এই সংলাপে ইইউ-এর রাষ্ট্রদূত মিস রেনেসি তেরিংকসহ আরও আট দেশের রাষ্ট্রদূত এবং ইউরোপের বিভিন্ন কোম্পানির নির্বাহী কর্মকর্তারা অংশ নেবেন। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের ওই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করার কথা রয়েছে।  বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো জানায়, মোট আটটি ইস্যুতে আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছে ইইউ। এর মধ্যে বিনিয়োগ, পণ্যের নমুনা ছাড়করণ, আমদানি পণ্য দ্রুত পরীক্ষা করা এবং আমদানি পণ্যের ক্ষেত্রে যে কর বৈষম্য বিদ্যমান সেসব ইস্যুগুলোই গুরুত্ব পাচ্ছে। সূত্র জানায়, বাংলাদেশে জাহাজ ব্যবসাসহ লজিস্টিক খাতে শতভাগ বিদেশি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স দেওয়া হয় না। এই আইন হওয়ার আগে থেকে এ খাতে শতভাগ মালিকানা থাকা ইইউ কোম্পানিগুলো তাদের লাইসেন্স নবায়নের ক্ষেত্রে বেকায়দায় পড়েছিল। এ অবস্থায় এর আগের বৈঠকে ইইউ-এর প্রস্তাব অনুযায়ী আইনের আগে যেসব কোম্পানির বিনিয়োগ ছিল তাদের লাইসেন্স নবায়নের সুযোগ দিয়েছে এনবিআর। এ ছাড়া লজিস্টিক খাতে বিনিয়োগে কোনো কোম্পানির সর্বোচ্চ ৪০ শতাংশ বিদেশি মালিকানা ও ৬০ শতাংশ দেশীয় মালিকানা থাকার বাধ্যবাধকতা ছিল। ইইউ বিদেশি মালিকানার অংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করে। এ পরিপ্রেক্ষিতে বিদেশিদের সর্বোচ্চ ৪৯ শতাংশ শেয়ার নির্ধারণ করা হয়। এখন ইইউ লজিস্টিক খাতে বিনিয়োগ শতভাগ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। এ ছাড়া এশিয়ার দেশগুলোর তুলনায় ইউরোপ থেকে পণ্য আমদানিতে শুল্ক গুনতে হয় অনেক বেশি। পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে কাস্টমস ন্যূনতম মূল্য ধরে তার ওপর ট্যারিফ আদায় করে। দেখা যাচ্ছে, চীন থেকে কোনো পণ্য আমদানির পর ওই পণ্যটির যে ন্যূনতম মূল্য ধরা হয়, একই ধরনের পণ্য ইউরোপের কোনো দেশ থেকে আনা হলে ন্যূনতম মূল্য বেশি ধরে ওই মূল্যের ওপর আমদানি কর আদায় করা হয়। এর ফলে ইউরোপ থেকে আমদানি পণ্যের ট্যাক্স বেশি পড়ে বলে অভিযোগ করেছে ইইউ। তাদের দাবি ডব্লিউটিও-এর নীতি অনুযায়ী আমদানি পণ্যের ওপর অঞ্চলভেদে এ ধরনের কর বৈষম্যের কোনো সুযোগ নেই। আমদানি খাতে সেই কর বৈষম্য প্রত্যাহারের প্রস্তাব দিয়েছে ইইউ। এ ছাড়া বিদেশ থেকে আসা পণ্যের নমুনা ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দিনের পর দিন আটকে থাকায় বিরক্ত বাংলাদেশে বিনিয়োগকারী ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) ব্যবসায়ীরা। গ্লোবাল ব্র্যান্ড এইচঅ্যান্ডএম ও ইনডিটেক্স তাদের কাছে অভিযোগ করেছে, পণ্য নমুনার ৪১ শতাংশই ছাড় করাতে শাহজালালে গড়ে সাত দিনের বেশি সময় লাগে। এ সমস্যা সমাধানে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। এ সমস্যা সমাধানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশে বিমানবন্দরের কাস্টমস ও কার্গো হ্যান্ডলিং সপ্তাহে প্রতিদিন ২৪ ঘণ্টা সচল রাখার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানান বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (এফটিএ) শফিকুল আলম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ইইউভুক্ত দেশগুলো বাংলাদেশের রপ্তানির সবচেয়ে বড় অংশীদার। গত অর্থবছরে সেসব দেশে ২০ বিলিয়ন ডলারের বেশি পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা বাংলাদেশের মোট রপ্তানির প্রায় ৫২ শতাংশ। বাংলাদেশকে অস্ত্র ব্যতীত বাকি সব পণ্যে (ইবিএ) জিএসপি সুবিধা দিচ্ছে ইইউ। এ কারণে ইউরোপের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক দ্রুত সম্প্রসারণ হচ্ছে। তবে ইউরোপের দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ ও বাধাও লক্ষ্য করা গেছে। এসব বাধা দূর করার পাশাপাশি ব্যবসায়িক কার্যক্রম দ্রুততর করার লক্ষ্যে ২০১৬ সালে প্রথম ইইউ-বাংলাদেশ বিজনেস ক্লাইমেট ডায়ালগ অনুষ্ঠিত হয়। সেই সংলাপের পর সুনির্দিষ্ট বিষয়ে আলোচনার জন্য পাঁচটি ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করা হয়েছে। বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে এরই মধ্যে আরও তিনটি সংলাপ হয়েছে। এবার ৪র্থ রাউন্ডের সংলাপেও ইইউ-এর ইস্যুগুলো যাতে দ্রুত সমাধান করা যায় সেজন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও সংস্থার প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর