বুধবার, ১০ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

ডিজিটাল হচ্ছে রাজস্ব প্রশাসন

করদাতারা ঘরে বসেই পাবেন সব সুযোগ-সুবিধা

রুহুল আমিন রাসেল

দেশের করদাতারা সেবা পাবেন ইমেইলে। ইতিমধ্যে অফিস বা বাসাবাড়িতে বসেই বেশকিছু সুবিধা পাচ্ছেন তারা। আরও সুবিধা নিশ্চিত করতে অটোমেশন বা ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো হচ্ছে। প্রস্তাবিত বাজেটেও বিশেষ উদ্যোগের কথা বলা হয়েছে। নেওয়া হচ্ছে কিছু সংস্কার। আয়কর, মূল্য সংযোজন কর (মূসক বা ভ্যাট) ও শুল্ক বিভাগের সব সেবা করদাতাদের হাতের মুঠোয় পৌঁছে দিতেই এ উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। জানা গেছে, রাজস্ব আদায়ব্যবস্থা আধুনিকায়ন করায় কর প্রদান যেমন সহজ হয়েছে, সেই সঙ্গে তাদের উৎসাহও বেড়েছে। অনলাইনে আয়কর নিবন্ধন (ই-টিআইএন) ও ভ্যাট নিবন্ধন (ই-বিআইএন) কার্যক্রম চালুর ফলে এনবিআর হয়েছে ডিজিটাল। এখন ঘরে বসেই করসংক্রান্ত সব সেবা মিলছে। ভ্যাট অনলাইন প্রকল্পের আওয়তায় ভ্যাট কল সেন্টার চালু করেছে এনবিআর। এখন ১৬৫৫৫ নম্বরে কল করেই ভ্যাটসংক্রান্ত যে কোনো সেবা মিলছে।

এ প্রসঙ্গে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বাজেটে যে রাজস্বের টার্গেট তা এনবিআরের কিছু সংস্কার না করলে অর্জন করা সম্ভব হবে না। একই সঙ্গে করদাতাদের যারা হয়রানি করবেন, তাদের শক্ত হাতে দমন করা হবে। এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন বলেন, রাজস্ব প্রশাসন আধুনিকায়ন প্রকল্পগুলো দ্রুত শেষ করতে হবে। ভ্যাট অনলাইন প্রকল্পে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বাড়বে। শুল্ক ও কর বিভাগ কম্পিউটারাইজড করতে হবে। এনবিআর জানিয়েছে, রাজস্ব প্রশাসনের আয়কর, মূসক ও শুল্ক বিভাগের সব সেবা করদাতাদের হাতের মুঠোয় পৌঁছে দিতে চায় সরকার। এখন ঘরে বসে অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল ও কর পরিশোধের সুবিধা পাচ্ছেন করদাতারা। তারা কত টাকা আয়কর দেবেন, তাও জানাতে পারেন মুঠোফোনে। মোবাইল অ্যাপসে আয়-ব্যয়ের হিসাব করে দিচ্ছে ট্যাক্স ক্যালকুলেটর। উন্নত বিশ্বের মতো এবার বাংলাদেশেও চালু হবে ‘ই-মূসক’। বিশ্বের ১২৪টি দেশে অনলাইনে ভ্যাট দেওয়ার ব্যবস্থা আছে। বাংলাদেশ  এ ক্ষেত্রে অনেকটাই পিছিয়ে। ২০১২ সালে ইন্টিগ্রেটেড ভ্যাট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সিস্টেম (আইভিএএস) স্থাপনের মাধ্যমে ব্যবস্থাটি ডিজিটাল করার প্রকল্প ‘ভ্যাট অনলাইন’ হাতে নেওয়া হয়। ফলে ভ্যাট নিবন্ধন, ভ্যাটের ফরম পূরণ ও জমাদান, নির্ধারিত ভ্যাট পরিশোধ, প্রতি মাসে ভ্যাট রিটার্ন বা দাখিলাপত্র (মূসক-১৯) জমা দেওয়াসহ সবকিছু ই-মূসক সিস্টেমের আওতায় অনলাইনে করা যাবে। ব্যাংকে না গিয়ে অনলাইনে মূসক পরিশোধের ব্যবস্থা থাকবে। একই জায়গায় ভ্যাট নিবন্ধন ও দাখিলাপত্র জমা দেওয়া যাবে। ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ড, ট্রেজারি চালান ও ফান্ড ট্রান্সফারের মাধ্যমে অনলাইনে ভ্যাট দিতে পারবেন ব্যবহারকারীরা। ভ্যাট পরিশোধের পাশাপাশি লেনদেনের সব তথ্য অনলাইনে পাওয়া যাবে। তবে শুধু ভ্যাট অনলাইন নয়, এনবিআরের অনলাইন সেবার (ই-সার্ভিস) আওতায় ই-আয়কর ও ই-কাস্টমস সেবা যুক্ত হয়েছে। ই-আয়কর সেবায় ই-টিন নিবন্ধন ও অনলাইনে আয়কর দেওয়া যাবে। এ ছাড়া ই-কাস্টমস সেবায় অনলাইন ম্যানিফেস্টো, অনলাইন বিল অব এন্ট্রি ও অনলাইন শুল্ক পরিশোধের সুবিধাও থাকছে। অনলাইনে মূসক পরিশোধ, আয়কর, শুল্ক পরিশোধ নিরাপদ করা হচ্ছে। আছে এনবিআরের অ্যাপ। ই-ভ্যাট সিস্টেমের আওতায় এরই মধ্যে ভ্যাট চেকার নামের একটি অ্যাপ করেছে এনবিআর। এর মাধ্যমে কেউ ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগ করলে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে নেওয়া ব্যবস্থা অ্যাপটিতে প্রকাশ করা হয়।

অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল ব্যবস্থা চালু করেছে এনবিআর। সংস্থাটি জানিয়েছে, এখন করদাতারা ঘরে বসেই অনলাইনে রিটার্ন দাখিলের পাশাপাশি আয়কর পরিশোধের সুবিধা পাচ্ছেন। যারা ভাবছেন, কত টাকা আয়কর দিতে হবে— এই ভাবনার অবসান ঘটিয়ে করযোগ্য আয়-ব্যয়ের হিসাব করে দিচ্ছে মোবাইল অ্যাপসের ট্যাক্স ক্যালকুলেটর। আপনার মুঠোফোনই জানাবে আপনি কত টাকা আয়কর দেবেন।

তথ্যমতে, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সহায়তায় ট্যাক্স ক্যালকুলেটরবিষয়ক একটি মোবাইল অ্যাপস তৈরি করেছে এনবিআর। এই অ্যাপস ব্যবহার করে করদাতারা বার্ষিক আয়-ব্যয়ের হিসাব-নিকাশ করতে পারবেন। ই-পেমেন্ট ব্যবস্থার মাধ্যমে যে কেউ অনলাইনে কর প্রদান করতে পারছেন। এর পাশাপাশি যে কোনো করদাতা প্রচলিত পদ্ধতিতেও কর অফিসের সব সেবা পাচ্ছেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর