শুক্রবার, ১২ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

পাঁচ হাজারের বেশি ‘মডেল শিক্ষক’ ঝরে পড়ার শঙ্কায়

আকতারুজ্জামান

দারিদ্র্যপীড়িত ও দুর্গম এলাকায় মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার মানোন্নয়ন, শিক্ষার্থী ঝরে পড়া কমাতে ২০১৫ সালে ইংরেজি, গণিত ও বিজ্ঞান বিষয়ে নিয়োগ দেওয়া হয় ৫ হাজার ২০০ শিক্ষক। চাকরির বিজ্ঞপ্তিতে মডেল শিক্ষক হিসেবেই আখ্যা দেওয়া হয়েছিল এই অতিরিক্ত শ্রেণি শিক্ষকদের (এসিটি)। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে সেকেন্ডারি এডুকেশন কোয়ালিটি অ্যান্ড একসেস এনহান্সমেন্ট (সেকায়েপ) নামে এ প্রজেক্টে অর্থায়ন করে বিশ্বব্যাংক। প্রকল্পের মেয়াদ ছিল গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত। শিক্ষক ম্যানুয়ালে দেওয়া হয়েছিল প্রকল্পের মেয়াদ শেষে নিয়মিত শিক্ষক হিসেবে এমপিওভুক্তির আশ্বাসও। কিন্তু প্রকল্প শেষ হওয়ার পর এই পাঁচ হাজারের বেশি মডেল শিক্ষক এখন ঝরে যাওয়ার শঙ্কায়। মেয়াদ শেষ হওয়ার পর দশ মাস পার হতে চললেও এসব শিক্ষক নিয়মিতকরণ বা এমপিওভুক্তির কোনো সিদ্ধান্তই নিতে পারেনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়নে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন মো. আবদুল বাতেন। গত ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার খেরখেটি দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে বিজ্ঞানে অতিরিক্ত শ্রেণি শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন তিনি। গত ডিসেম্বরে সেকায়েপ প্রকল্প শেষ হওয়ার পর চাকরি এমপিওভুক্ত না হওয়ায় বেকার হয়ে পড়েছেন বাতেন। এমন হাজারো তরুণ-তরুণী তাদের চাকরি এমপিওভুক্তির জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা অধিদফতর কর্মকর্তাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। এসিটি শিক্ষকরা জানান, সেকায়েপ প্রজেক্টের এসব অতিরিক্ত শিক্ষককে পরবর্তী সমন্বিত প্রকল্পে রাখার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করা হয়েছিল। তাই এসিটি শিক্ষকদের স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠানে ক্লাস চালিয়ে যাওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন প্রকল্প পরিচালক। কিন্তু মাসের পর মাস বিনা বেতনে পাঠদানের পর অতিরিক্ত শ্রেণি শিক্ষকরা আজ ক্লান্ত। এখন তারা ক্লাস ছেড়ে রাজপথের আন্দোলনে নেমেছেন। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বেশ কয়েকদিন অবস্থান কর্মসূচিও পালন করেছেন তারা। জানা গেছে, ঝরে পড়া শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে ফিরিয়ে আনা, অতিরিক্ত ক্লাসের মাধ্যমে কোচিং নিরুৎসাহিত করা, বাল্যবিবাহ ও শিশু নির্যাতনসহ নানা ধরনের কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত ছিল এসিটি শিক্ষকরা। সেকায়েপ শিক্ষকদের কারণে দুর্গম এলাকার স্কুলগুলোতে পাসের হার বেড়েছিল।

নীলফামারীর শিমুলবাড়িতে লক্ষ্মীমারী আহমাদিয়া দাখিল মাদ্রাসার অতিরিক্ত ইংরেজি শিক্ষক মাহবুবুর রহমান বলেন, দুর্গম এলাকাগুলোতে শিক্ষার আলো জ্বালাতে গিয়ে আমরাই আজ অন্ধকারে। চাকরি স্থায়ী না হওয়ায় সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবেও হেয়প্রতিপন্ন হয়ে পড়েছি।

২০১৫ সাল থেকে ২১৫ উপজেলায় এর কার্যক্রম শুরু হয়। ২০১৭ সাল পর্যন্ত প্রায় দুই হাজার স্কুলে এসিটি শিক্ষক নিয়োগ করা হয়। এই শিক্ষকরা নিয়মিত ক্লাসের আগে এবং প্রত্যেক শুক্রবার বা অন্য ছুটির দিনে ক্লাস নিতেন। অতিরিক্ত ক্লাস শিক্ষক কর্মসূচি (এসিটি) অপারেশন ম্যানুয়ালে বলা হয়, যোগ্য এসিটি শিক্ষকরা একই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত শিক্ষক হিসেবে এমপিওভুক্ত হতে পারে। প্রকল্প শেষে এসিটিদের এমপিও সিস্টেমে অন্তর্ভুক্তিসহ যাবতীয় ব্যবস্থা নেবে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর।

শেষ হওয়া সেকায়েপ প্রকল্পের পরিচালক ও বর্তমানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মাহামুদ-উল-হক গতকাল বলেন, সেকায়েপের অতিরিক্ত শ্রেণিশিক্ষক (এসিটি) কনসেপ্ট এসইডিপিতে (সেকেন্ডারি এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম) অন্তর্ভুক্ত আছে। পাঁচ বছর মেয়াদের এ প্রোগ্রামে এসিটি শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্ত করার চিন্তা-ভাবনা করছে সরকার। তবে তাদের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি।

বাংলাদেশ এসিটি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কৌশিক চন্দ্র বর্মণ বলেন, আমরা বিনাশর্তে চাকরি এমপিওভুক্তি চাই।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর