শুক্রবার, ১৯ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

সাঙ্গ হলো বাউল সাধুদের মিলনমেলা

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

‘হেলায় হেলায় দিন বইয়ে যায়, ঘিরে নিল কালে/আর কি হবে এমন মানব জনম, বসব সাধু মেলে’— খালি গলায় আপন মনে একটানা গেয়ে চলেছেন সাঁইজির গান। সুর নয় যেন বিলাপ ঝরছে মানিকগঞ্জ থেকে আসা লালন অনুসারী জব্বার ফকিরের গলায়। দেশ-বিদেশের বাউল সাধু-গুরুদের তিন দিনের মিলনমেলা ভেঙে যাচ্ছে। সাঁইজির প্রিয় ধাম ছেড়ে এবার ফিরতে হবে আপন নীড়ে। গতকাল মধ্যরাতে সমাপনী আলোচনা সভা ও সংগীতের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ায় আখড়া বাড়িতে তিন দিনের লালন স্মরণোৎসব।

সাধু-গুরুদের বেশির ভাগ এরই মধ্যে আখড়া বাড়ি ছেড়ে গেছেন। বাউল সম্রাট ফকির লালন সাঁইয়ের ১২৮তম তিরোধান দিবস উপলক্ষে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এ উৎসবের উদ্বোধন করেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ। লালন আখড়া বাড়ি তাদের কাছে পরম ভক্তির তীর্থস্থান। উৎসব শেষে গতকাল বাড়ি ফেরার সময় তাই তাদের কণ্ঠে বিষাদের সুর বেজে ওঠে। বিদায় বেলায় ঢাকা থেকে আসা প্রবীণ বাউল নবির শাহ বলেন, ‘সাঁইজির চরণতলে কটা দিন পড়েছিলাম। এখন বিদায় ঘণ্টা বেজে গেছে, কিন্তু মন তো চাইছে না বাড়ি ফিরতে। আরও কটা দিন থেকে যেতে পারলে ভালো হতো, মনটা কেমন করছে, আর যদি আসতে না পারি কোনো দিন।’ আরেক বাউল ইসলাম শাহ বলেন, ‘বাবা বাড়ি ফিরতে মন চাইছে না, ভাবছি আরও কটা দিন গুরুধামে থেকে যাব। মহিলা বাউল করিমন খাতুন বলেন, ‘বাবা বাড়ি ফিরে যাচ্ছি ঠিকই, মনটা পড়ে রইল আখড়া বাড়িতে। এখন থেকেই ফাল্গুনের দোল উৎসবের প্রহর গুনতে থাকব। একাডেমির অ্যাডহক কমিটির সদস্য সেলিম হক জানান, ‘অনুষ্ঠান শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে। এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় লোকসমাগম ছিল আগের বছরগুলোর তুলনায় বেশি। তবে কোনো অসুবিধা হয়নি।’ তিন দিনের এ অনুষ্ঠানে দেশ-বিদেশ থেকে হাজার হাজার বাউল, সাধু আর সাধারণ দর্শনার্থী যোগ দেন। সাধুসঙ্গ, বাউল গান ও আলোচনার আয়োজন ছিল তিন দিনের এ উৎসবে। আগামীতে দোল পূর্ণিমার উৎসবে যোগ দেওয়ার প্রত্যয় নিয়ে আখড়া ছাড়েন ভক্তরা। গত মঙ্গলবার লালন একাডেমির আয়োজনে তিন দিনের উৎসব শুরু হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর