মঙ্গলবার, ২৩ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

ইয়াবা-হেরোইন কেনাবেচায় সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড

সংসদে বিল

নিজস্ব প্রতিবেদক

ইয়াবা (অ্যামফিটামিন), কোকেন, হেরোইন পরিবহন, কেনাবেচা, ব্যবসা, সংরক্ষণ, উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, হস্তান্তর, সরবরাহ ইত্যাদি অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ মৃত্যুদণ্ড এই বিধান রেখে সংসদে উত্থাপিত হয়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ বিল-২০১৮। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের ২৩তম অধিবেশনে গতকাল সম্পূরক কর্মসূচিতে বিলটি উত্থাপন করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। এ সময় তিনি জানান, মাদকদ্রব্যের নিয়ন্ত্রণ, সরবরাহ ও চাহিদা হ্রাস, অপব্যবহার ও চোরাচালান প্রতিরোধ এবং মাদকাসক্তদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনকল্পে বিলটি আনা হয়েছে। পরে বিলটি দুই দিনের মধ্যে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে সংসদে প্রতিবেদন প্রদানের জন্য বিলটি সংশ্লিষ্ট সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে প্রেরণ করা হয়। প্রস্তাবিত আইনে মাদকদ্রব্যের অপরাধের ৩৪টি তফসিল বর্ণনা করে সর্বনিম্ন এক বছর থেকে সর্বোচ্চ মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। বিলে মাদকপ্রবণ জেলা সদর বা মেট্রোপলিটন এলাকায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক মাদক অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল স্থাপনের বিধান রাখা হয়েছে। এই ট্রাইব্যুনাল মাদক অপরাধের বিচার করবে। মাদক অপরাধে গ্রেফতারের পর তদন্তে নির্দোষ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত কোনো অপরাধীকে আদালত বা ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক জামিন প্রদানে বারিত রাখা হয়েছে। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এই আইনের অধীন অপরাধ সংঘটনে অর্থ বিনিয়োগ, সরবরাহ, মদদ ও পৃষ্ঠপোষকতা দিলেও একই ধরনের শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। প্রস্তাবিত আইনে কোকেন, কোকো মাদক চাষাবাদ, উৎপাদন বা প্রক্রিয়াজাতকরণের ক্ষেত্রে ২৫ গ্রামের বেশি হলে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে। আর ২৫ গ্রামের নিচে হলে কমপক্ষে দুই বছর ও সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ডের বিধান আছে। ইয়াবা বহনের ক্ষেত্রে ২০০ গ্রামের বেশি হলে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড অথবা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ড। তবে ১০০ গ্রাম বা মিলিলিটার হলে সর্বনিম্ন পাঁচ বছর এবং সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। মাদকাসক্ত ব্যক্তির ডোপ টেস্টে ইতিবাচক ফল পাওয়া গেলে কমপক্ষে ছয় মাস ও সর্বোচ্চ পাঁচ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হবে। কেউ যদি সজ্ঞানে কোনো মাদকদ্রব্য অপরাধ সংঘটনের জন্য তার মালিকানাধীন অথবা দখলি কোনো বাড়িঘর, জায়গাজমি, যানবাহন, যন্ত্রপাতি অথবা সাজসরঞ্জাম কিংবা অর্থ সম্পদ ব্যবহারের অনুমতি দেন তাহলে তিনি সর্বোচ্চ ৫ বছরের কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ড ভোগ করবেন। এ ছাড়া লাইসেন্সপ্রাপ্ত না এমন কোনো ব্যক্তির কাছে অথবা তার জায়গায় যদি মাদকদ্রব্য উৎপাদনে ব্যবহারযোগ্য কোনো যন্ত্রপাতি, ওয়াশ অথবা অন্যান্য উপকরণ পাওয়া যায় তাহলে তিনি সর্বনিম্ন দুই বছরের কারাদণ্ড ও সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ড হবে।

শিশু (সংশোধন) বিল সংসদে পাস : দায়রা আদালতের সব ক্ষমতা প্রয়োগ ও কার্যাবলি সম্পাদনের ক্ষমতা দিয়ে শিশু আদালত প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনার বিধান রেখে শিশু (সংশোধন) বিল ২০১৮ সংসদে পাস হয়েছে। আইনে ফৌজদারি অপরাধ সংঘটনে একই সঙ্গে কোনো শিশু জড়িত থাকলেও পুলিশি তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিদের সঙ্গে একসঙ্গে প্রতিবেদন না দিয়ে শিশুর জন্য পৃথক প্রতিবেদন তৈরি করার এবং অপরাধ আমলে নেওয়ার ক্ষেত্রে শিশু হিসেবে পৃথকভাবে আমলে নেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে।

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের ২৩তম অধিবেশনে গতকাল কণ্ঠভোটে বিলটি পাস হয়। বিলটি পাস করার প্রস্তাব করেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন। এর আগে বিলের ওপর আনীত জনমত যাচাই, বাছাই কমিটিতে প্রেরণ ও সংশোধনী প্রস্তাবগুলো কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়। আইনের সঙ্গে সংঘাতে জড়িত শিশু কর্তৃক সংঘটিত যে কোনো অপরাধের বিচার করার জন্য প্রতি জেলায় এক বা একাধিক শিশু আদালত থাকবে। যেসব জেলায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের অধীনে গঠিত নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল আছে তা শিশু আদালত হিসেবে গণ্য হবে। তবে সেই ট্রাইব্যুনাল না থাকলে জেলার জেলা ও দায়রা জজ শিশু আদালত হিসেবে গণ্য হবেন। শিশু আদালত দায়রা আদালতের সব ক্ষমতা প্রয়োগ ও কার্যাবলি সম্পাদন করতে পারবে।

বিলের ১৫ ধারায় বলা হয়েছে, পুলিশ রিপোর্ট বা অনুসন্ধানী প্রতিবেদন বা তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার ক্ষেত্রে ফৌজদারি কার্যবিধি বা আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইনে যা-ই থাকুক না কেন, কোনো অপরাধ সংঘটনে প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি ও শিশু জড়িত থাকলে, পুলিশ রিপোর্ট (জিআর মামলার ক্ষেত্রে), অনুসন্ধান প্রতিবেদন (সিআর মামলার ক্ষেত্রে) বা তদন্ত প্রতিবেদনে প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি ও শিশুর জন্য পৃথকভাবে প্রস্তুত করে দাখিল করতে হবে।

বিলে বলা হয়েছে, মামলা স্থানান্তরের ক্ষেত্রে যে আদালতে নিষ্পন্নাধীন সেই আদালত উদ্যোগ গ্রহণ করে স্থানান্তর প্রক্রিয়া শিশু (সংশোধন) আইন ২০১৮ কার্যকর হওয়ার ৯০ কার্য দিবসের মধ্যে সম্পন্ন করবে। তবে ওই সময়ের মধ্যে মামলা স্থানান্তর সম্পন্ন করা সম্ভব না হলে স্থানান্তরকারী শিশু আদালতের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট দায়রা জজ আদালত আরও ৪৫ কার্য দিবস সময় বৃদ্ধি করতে পারবে।

আইনের উদ্দেশ্য ও কারণ সংবলিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে শিশু আইন, ১৯৭৪ যুগোপযোগী করে শিশু আইন, ২০১৩ প্রণয়ন করা হয়। এই আইন কার্যকর হওয়ার পর এর কিছু প্রায়োগিক সমস্যার সৃষ্টি হওয়ায় এর কতিপয় ধারা সংশোধনের নিমিত্তে শিশু (সংশোধন) আইন, ২০১৮ শীর্ষক বিলটি সংসদের বিবেচনার জন্য আনা হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর