রবিবার, ২৮ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

বুদ্ধিজীবী শ্রেণি পথরুদ্ধ মৃত্যুকূপে

গুণীজন বক্তৃতায় হাসান আজিজুল হক

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

প্রখ্যাত কথা সাহিত্যিক ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক হাসান আজিজুল হক বলেছেন, বাংলাদেশে আজ শিক্ষিত বুদ্ধিজীবীসহ সাধারণভাবে একটা সুস্থিত মধ্যবিত্ত শ্রেণির বিকাশের বাস্তব ভিত্তি ও বাস্তব শর্তগুলো নষ্ট হচ্ছে। ফলে, শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান সর্বক্ষেত্রেই আমরা দেখতে পাচ্ছি সংকট আমূল, অনুর্বরতা সর্বব্যাপী ও অপ্রতিকার্য। পাকিস্তান আমলে জাতিগত শোষণ ও নিপীড়নটা এত অসহনীয়ভাবে প্রত্যক্ষ ছিল যে, উঠতি মধ্যবিত্ত শ্রেণি নিজ শ্রেণির বিকাশের স্বার্থেই প্রতিবাদী ভূমিকা গ্রহণ করতে পেরেছিল, গণতান্ত্রিক সংগ্রামে অংশ নিয়েছিল। কিন্তু পরিস্থিতি আজ এতই বদলে  গেছে যে বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত শ্রেণি—বিশেষ করে শিক্ষিত বুদ্ধিজীবী অংশ—এখন ‘এক নিরুদ্ধসে াত, সম্ভাবনাহীন, বহির্গমন পথরুদ্ধ মৃত্যুকূপে আটক হয়ে গেছে। গতকাল বাংলা একাডেমির আবদুুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ‘সমাজে বুদ্ধিজীবীর দায়’ শীর্ষক ৭ম জ্ঞানতাপস আব্দুর রাজ্জাক গুণীজন বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন জ্ঞানতাপস আব্দুর রাজ্জাক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক ড. আহরার আহমদ এবং হাসান আজিজুল হকের জীবনকীর্তির মূল্যায়ন করে সংক্ষিপ্ত প্রবন্ধ পাঠ করেন কালি ও কলম-এর সম্পাদক আবুল হাসনাত। উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক রেহমান সোবহান, বদরুদ্দীন উমর, অধ্যাপক ড. রওনক জাহান, অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, ড. আকবর আলি খান প্রমুখ।

অধ্যাপক হাসান আজিজুল হক বলেন, উনিশ শতকের বাংলায় উৎপাদন প্রণালীর বিকাশ ঘটেনি বা ভিন্নতর বণ্টন ব্যবস্থার ভিতর দিয়ে নতুন সমাজ গড়ে ওঠেনি, পরিবর্তন যা ঘটেছিল ইংরেজের উপনিবেশী স্বার্থেই। পঞ্চাশের দশকে ভাষা আন্দোলনকে সর্বব্যাপী পরিবর্তন ও সার্বিক মুক্তি-আন্দোলনের দিকে নিয়ে যেতে পারতেন বিপ্লবী রাজনীতিকরা। কিন্তু তারা তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচিকে সেই পথে পরিচালিত করতে পারেননি। স্বাধীনতার কয়েক বছরের মধ্যে সাম্রাজ্যবাদী পুঁজির প্রয়োজনে আমাদের সমাজে ভাঙন-প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায়। বিশ্বায়ন ও বাজার অর্থনীতির যুগে সাম্রাজ্যবাদী পুঁজির দাপট বর্তমানে এমনি প্রকট আকার নিয়েছে যে, মধ্যবিত্ত শ্রেণির একাংশ সরাসরি তার কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। সেই অংশ এখন নানারকম বহিরাগত পুঁজির সেবায় থেকে আত্মসেবায় রত। অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক সম্পর্কে তিনি বলেন, তিনি (রাজ্জাক) ছিলেন আমাদের সময়ের বিদ্যাসাগর। বিদ্যাসাগর যেমন একা হাতে ঊনবিংশ শতকের বাংলায় দ্রোহ, জ্ঞান ও প্রজ্ঞার আলো জ্বেলে সমাজকে পথ দেখিয়েছিলেন— বিংশ শতকের ঢাকা শহরেও যেন এই চিরকুমার পন্ডিত তাই করে গেছেন।

জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান বলেন, হাসান আজিজুল হক আমাদের সমাজের যে চেহারা অংকন করেছেন, তার সত্যতা আছে বটে। তবে আমরা বলতে পারি, আমাদের সমাজ কিন্তু এক জায়গায় দাঁড়িয়ে নেই। বাংলাদেশে নিশ্চয় পরিবর্তন হয়েছে। এ পরিবর্তনে বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা খুবই সামান্য, তবে একেবারে নাই এ কথা বলা যাবে না। আমরা যদি বাংলাদেশ রাষ্ট্রের কথাই ভাবি, তাহলে এ কথা পরিষ্কার হবে যে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের  পেছনে বাস্তব ঘটনা, রাজনীতিবিদ, শিক্ষক, সমাজকর্মীদের মতো বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা আছে। তাই বাংলাদেশের সমাজ পরিবর্তনে বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা নেই একথা বলা যাবে না।

সর্বশেষ খবর