সোমবার, ২৯ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

বিশুদ্ধ পানির সংকট চরমে

মোস্তফা কাজল

বিশুদ্ধ পানির সংকট চরমে

কয়েক দিন পর সারা দেশে বিরাজ করবে শুষ্ক মৌসুম। তার আগেই পানির জন্য রাজধানীতে হাহাকার সৃষ্টি হয়েছে। প্রায়  দেড় থেকে দুই কোটি মানুষের এই শহরে বিশুদ্ধ পানি পাওয়াটা দুষ্কর হয়ে পড়ছে। রাজধানীতে পানির সংকট নতুন কোনো বিষয় না হলেও শীত আগমনের শুরুতেই এমন সংকট ভাবিয়ে তুলেছে নাগরিকদের। ওয়াসার পানি উৎপাদনে ঘাটতি নেই। তবুও পানির সংকট দেখা দিয়েছে। আর যেসব এলাকায় পানির সংকট নেই, সেখানকার পানিও ময়লা-দুর্গন্ধের কারণে খাবারের অযোগ্য, এমনটাই বলছেন নাগরিকরা। এমতাবস্থায় চলতি শুষ্ক মৌসুমে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ওয়াসার জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঢাকা ওয়াসার উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (প্রশাসন) মো. আতাউর রহমান বলেছেন, রাজধানী ঢাকায় পানি সংকট নিরসনে কাজ করছে ওয়াসা। ফলে  ধীরে ধীরে সংকট কেটে যাবে।

ঢাকা ওয়াসা কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রতিদিন ২৪৫ কোটি লিটার পানি উৎপাদন করতে সক্ষম তারা। বর্তমানে ২৪০ কোটি লিটার পানির চাহিদা রয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদনও হচ্ছে। সেই অনুযায়ী রাজধানীতে পানি সংকট থাকার কথা নয়। কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন। সম্প্রতি ওয়াসা নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) গণশুনানিতেও পানি সংকটের কারণে গ্রাহকরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তবে ঢাকা শহরে পানি সংকট রয়েছে, এ কথা অস্বীকার করেছেন ওয়াসার কর্মকর্তারা। তবে পানিতে ময়লা-দুর্গন্ধ থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তারা বলেছেন, ওয়াসার পানির অনেক চোরাই সংযোগ রয়েছে। অবৈধ সংযোগ করতে গিয়ে লাইনে ছিদ্র হয়ে যায়। সেই ছিদ্র দিয়েই পানিতে ময়লা ঢুকে গন্ধ ছড়াতে পারে। এ ছাড়া নদীর পানিতে খুব বেশি পরিমাণ ময়লা আবর্জনা থাকে। এ কারণেও দুর্গন্ধ হতে পারে। ঢাকা ওয়াসার তথ্য মতে, দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় ওয়াসার প্রায় পৌনে ৪ লাখেরও বেশি গ্রাহকের সংযোগ রয়েছে। তবে একটি বাড়িতে একটি সংযোগ থাকলেও সেখানে একাধিক পরিবার বাস করছে। ফলে বাস্তবে গ্রাহকের সংখ্যা কয়েকগুণ বেশি। জানা গেছে, রাজধানীর পূর্ব রামপুরা পুলিশ ফাঁড়ি এলাকায় পানি মিলছে না। হঠাৎ মাঝে মধ্যে একবার পানি দেওয়া হয়। মগবাজার এলাকায় দিনে মাত্র দুই থেকে তিন ঘণ্টার জন্য পানি আসে। একই অবস্থা রাজধানীর জোয়ার সাহারা, কালাচাঁদপুর, নতুন বাজার, বাউনিয়া বাঁধ, উত্তর ইব্রাহিমপুর, মিরপুর-৬, ১০, ১১ ও ১৪ নম্বর সেকশনে। আরও আছে পীরেরবাগ, বড়বাগ, কাজীপাড়া, মাজাররোড, আগারগাঁও, আরামবাগ, মানিকনগর, কালাপানি, কালশী, পশ্চিম মনিপুর, মোহাম্মদপুর ও বাড্ডাসহ অনেক এলাকার। এ ছাড়া ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১৭নং ওয়ার্ড জুড়ে কয়েক মাস ধরে বিরাজ করছে পানি সমস্যা। কিছু দিন আগে ঢাকা দক্ষিণ সিটির ২২ জন কাউন্সিলর ওয়াসার এমডিকে পানি সমস্যার কথা জানিয়েছেন। ওইসব এলাকার ৯০ ভাগ বাসিন্দাই নিরাপদ পানি পান না। বড়বাগ এলাকার পপুলার হাউজিংয়ের বাসিন্দা খোরশেদ আলম অভিযোগ করে বলেন, এক মাস ধরে এ সমস্যা চলছে। অভিযোগ করেও কোনো লাভ হয়নি। পূর্ব রামপুরা এলাকার বাসিন্দা সুমি খাতুন জানান, এক সপ্তাহ যাবৎ পানি নেই পূর্ব রামপুরা এলাকায়। একবার পানি দিলেও সেই পানি দিয়ে কোনো কিছুই ভালোভাবে করা যায় না। এক বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা লিজা বেগম বলেন, শীত আসতে না আসতেই ঢাকায় শুরু হয়েছে ওয়াসার পানি সংকট।

সংকট নিরসনে পদ্মার পানি আসছে ঢাকায় : এদিকে, পানি সংকট নিরসনে মুন্সীগঞ্জ থেকে পানি এনে রাজধানী ঢাকার চাহিদা মেটানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ কর্মসূচির অধীনে মুন্সীগঞ্জ জেলার লৌহগঞ্জ উপজেলার যশলদিয়া এলাকার পদ্মা নদী থেকে পানি পরিশোধন করে রাজধানীতে আনা হবে। এ লক্ষ্যে সরকার একটি পৃথক প্রকল্প হাতে নিয়েছে। ওয়াসা সূত্র জানায়, ভূ-গর্ভস্থ পানি উত্তোলনের ফলে প্রতি বছর এর স্তর ২ থেকে ৩ মিটার নিচে নেমে যায়। এর ফলে শুধু পরিবেশের জন্য নয়, ভবিষ্যতে খাবার পানির জন্যও হুমকি। এসব দিক বিবেচনায় নিয়ে ভূ-পৃষ্ঠের পানি ব্যবহারের লক্ষ্যে যশলদিয়া প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর