বৃহস্পতিবার, ১ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

রাস্তার ধারে ধারে রক্তাক্ত লাশ

কিনারা মেলে না কোনো রহস্যের অন্ধকারে পুলিশ

মাহবুব মমতাজী

২১ অক্টোবরের কাক ডাকা ভোর। দিনটি শুরু হয়েছিল অন্যদিনের মতোই স্বাভাবিক। খেটে খাওয়া মানুষরা কেবল ঘর থেকে বেরিয়েছেন। ঢাকার অদূরে আড়াইহাজার উপজেলার পাঁচরুখী এলাকার চিত্র পাল্টে যায় হঠাৎ। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে লাশ। একটি নয় দুটি। আশপাশের লোকজন ছুটে আসছে সেখানে। রাস্তার ওপার থেকে মানুষের চিৎকার-এখানেও আরও দুটি। একটি নয়, দুটি নয়, সব মিলিয়ে চারটি লাশ পড়ে আছে রাস্তার ধারে। মুহূর্তেই ওই এলাকায় ভিড় জমে শত মানুষের। খবর পেয়ে পুলিশ আসে। পুলিশ নিশ্চিত করল, চারজনের শরীরেই গুলির ক্ষত। এই চার লাশ নিয়ে যখন আতঙ্ক চারপাশে তখন খবর পাওয়া গেল আর দুটি লাশের। এ দুটি লাশ অবশ্য পাওয়া গেল উত্তরার দিয়াবাড়ির রাস্তার ধারেই। উত্তরা দিয়াবাড়ী থেকে লাশ দুটি উদ্ধার করে তুরাগ থানা পুলিশ। এর আগে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে গত ১৪ সেপ্টেম্বর তিন যুবকের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধারের ঘটনার এক মাস পার হলেও কোনো ক্লু পাওয়া যায়নি এখনো। তিন বন্ধুকে কারা, কী কারণে হত্যা করেছে-সে ব্যাপারে পুরোপুরি অন্ধকারে পুলিশ। রাস্তার ধারে লাশ-মানুষের মনে নতুন এক আতঙ্ক। মাত্র দেড় মাসেই ঢাকা ও ঢাকার অদূরে মিলল মোট ৯টি লাশ। সবগুলোই উদ্ধার হয়েছে রাস্তার পাশ থেকে। কিন্তু রহস্য এখনো কাটেনি কোনোটারই। কিভাবে ঘটে এসব হত্যাকাণ্ড, কারাই বা নেপথ্যের পরিকল্পনাকারী। এ নিয়ে পুলিশ প্রশাসনও সুনির্দিষ্ট করে তাত্ক্ষণিক কোনো তথ্য জানাতে পারছে না। তারা শনাক্ত করতে পারছে না কে বা কারা কী কারণে খুন করে লাশ নির্জন স্থানে ফেলে রাখছে। একের পর এক এসব খুনে অনেকেই ভুগছেন আতঙ্কে। পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, চলতি অক্টোবর মাসে ২৫ দিনে সারা দেশে খুন হয়েছে ২০৬ জন। আর সেপ্টেম্বরে এ সংখ্যা ছিল ৩১৩ জন। এর আগের মাস আগস্টে খুনের ঘটনা ঘটে ২৮০টি। সূত্র জানায়, গত ২১ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার পাঁচরুখী এলাকায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের দুই পাশ থেকে গুলিবিদ্ধ চারজনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তাদের মাথায় গুলির ক্ষত ছিল। পাশাপাশি ভারী কিছু দিয়ে তাদের মাথা থেঁতলে দেওয়া হয়। লাশগুলোর পাশেই পাওয়া গেছে দুটি দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্র ও একটি মাইক্রোবাস। নিহতরা হলেন-মাইক্রোবাস চালক লুত্ফুর রহমান মোল্লা, বাসচালক ফারুক হোসেন, বেকার শ্রমিক সবুজ সরদার ও জহিরুল ইসলাম। শেষের  তিনজনের বাড়ি পাবনা আতাইকুল ইউনিয়নে। নিহতদের স্বজনের দাবি জিন্স প্যান্ট ও শার্ট পরা কিছু অস্ত্রধারী গত ২০ অক্টোবর বিকালে ফারুকসহ চারজনকে ধরে নিয়ে যায়। তাদের রাখা হয় ভুলতা পুলিশ ফাঁড়িতে। পরের দিনই ৪ জনের লাশ পাওয়া যায়। তবে ভুলতা ফাঁড়ি ও জেলা পুলিশ এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। এদিকে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলায় গত ১৪ সেপ্টেম্বর তিন যুবকের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধারের ঘটনার এক মাস পার হলেও কোনো ক্লু পাওয়া যায়নি এখনো। তিন বন্ধুকে কারা, কী কারণে হত্যা করেছে-সে ব্যাপারে পুরোপুরি অন্ধকারে পুলিশ। ঘটনার পর নিহতদের পরিবারের অভিযোগ-ডিবি পরিচয়ে তুলে নেওয়া হয়েছিল তাদের। এ তিন যুবকের খুনের রহস্য কাটতে না কাটতেই নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে আরও ৪ যুবকের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধারের ঘটনাটি ঘটে। এ ছাড়া একই দিনে ঢাকার তুরাগের দিয়াবাড়ী এলাকা থেকেও দুজনের অর্ধগলিত লাশ পাওয়া যায়। এরা হলেন-কামাল ও ইমন।   এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন এ প্রতিবেদককে জানান, দেড় মাস আগে রূপগঞ্জে পাওয়া লাশগুলোর কোনো রহস্য এখনো পাওয়া যায়নি। আর আড়াইহাজারে গুলিবিদ্ধ ৪ লাশ উদ্ধারের ঘটনায় ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। তারা কাজ শুরু করেছে।

তদন্ত রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত কিছু বলা যাবে না। জানা যায়, গত ২ অক্টোবর রাজধানীর কামরাঙ্গীচর এলাকায় দিনেদুপুরে ছুরিকাঘাতে নিহত হন আরিফ হোসেন নামে এক যুবক। টঙ্গী এলাকায় পিটুনিতে নিহত হন যুবক শহিদুল ইসলাম শাহিন। ৪ অক্টোবর ঢাকার ধামরাই এলাকায় গণপিটুনিতে নিহত হন হাসেম আলী নামে এক ব্যক্তি। নরসিংদী জেলা সদরের চরাঞ্চল করিমপুরে গ্রামবাসীর টেঁটাযুদ্ধে নিহত হন আনোয়ার আলী ও আবদুল মোতালিব। ৮ অক্টোবর পুরান ঢাকায় শামীম আলম নামে এক যুবক দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে নিহত হন। একই দিন কুমিল্লার আদালতে একটি মামলায় সাক্ষ্য দিতে যাওয়ার সময় বাস থেকে নামিয়ে রড ও হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে সাজ্জাদ হোসেন নামে এক ছাত্রলীগ নেতাকে হত্যা করা হয়। ৯ অক্টোবর কুষ্টিয়া সদর উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার নূর মোহাম্মদকে নিজ বাসায় হাত-পা-মুখ বেঁধে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ১৩ অক্টোবর যশোরের পুরাতন কসবা এলাকায় তাইজুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তির রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। একই দিন কক্সবাজারের রামু উপজেলার খাদ্যগুদাম এলাকা থেকে ছাদের রেজা নামে এক বিএনপি নেতার লাশ উদ্ধার হয়। ১৫ অক্টোবর রাজধানীর শ্যামপুর আইজিগেট ব্যাংক কলোনি বাজার এলাকায় দুর্বৃত্তদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আবদুর রাজ্জাক নামে এক ব্যবসায়ী নিহত হন। ১৬ অক্টোবর নরসিংদী জেলা সদরের ভগীরতপুরের একটি বাড়িতে পুলিশের অভিযানে এক নারীসহ দুই ব্যক্তি নিহত হন। পুলিশ জানিয়েছে, নিহতরা জঙ্গি সংগঠন নব্য জেএমবির সদস্য। এছাড়া গত ২৪ অক্টোবর জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলায় হালিম মিয়া (৪০) নামে এক কৃষক খুন হন। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার গাজীপুরের শ্রীপুরে ওমর ফারুক নামে এক শ্রমিক লীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর