বৃহস্পতিবার, ১ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

সহযোগী হত্যায় ফাঁসি দুই ছিনতাইকারীর

সাংবাদিক মিঠু খুনে তিন আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল

নিজস্ব প্রতিবেদক ও আদালত প্রতিবেদক

ছিনতাইয়ের ৭০ হাজার টাকা ভাগাভাগি নিয়ে দ্বন্দ্বে রাজধানীর মতিঝিল থানার লতিফ হত্যা মামলায় দুই ছিনতাইকারীর ফাঁসি ও চারজনের যাবজ্জীবন কারাদাণ্ড দিয়েছে আদালত। পাশাপাশি যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্তদের ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। গতকাল ঢাকার ৪ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক আবদুর রহমান সরদার এ রায় দেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন— মোয়াজ্জেম হোসেন ও মো. বাবু ওরফে কানা বাবু। আর যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত আসামি হলেন— আকির হোসেন, মো. মনির হোসেন, আমির হোসেন ও আবদুল আজিজ ওরফে আজির। যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্তরা পলাতক।

এ ছাড়া রায়ে মামলার প্রধান আসামি ফেরদৌস ওরফে ফেদু, মো. রাশেদ ও সুমনের নাম-ঠিকানা সংগ্রহ করে যত দ্রুত সম্ভব সম্পূরক চার্জশিট দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি এ মামলায় তিন আসামির বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকার পরেও অভিযোগপত্রে তাদের অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন করায় এসআই সাহাবুদ্দিনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। মামলা সূত্রে জানা গেছে, ২০০৫ সালের ২৩ মার্চ তৎকালীন মতিঝিল থানার শাহজাহানপুর  রেলওয়ে কলোনির এ/৫০ নম্বর ভবনের ৪র্থ তলার ছাদে অজ্ঞাতনামা পুরুষের গলা ও পায়ের রগকাটা পচা-গলা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এদিকে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের ক্যামেরা পারসন শফিকুল ইসলাম মিঠুকে হত্যার দায়ে তিন আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছে হাই কোর্ট। এ মামলার ডেথ রেফারেন্স এবং তিন আসামির আপিল শুনানি শেষে গতকাল বিচারপতি ভাবানী প্রসাদ সিংহ এবং বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার হাই কোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেয়। ঢাকার জজ আদালত ২০১৩ সালে আসামি মো. রতন মিয়া, মো. সুজন ও মো. রাজু ওরফে জামাই রাজুকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। হাই কোর্টে তাদের আপিল খারিজ হওয়ার ফলে বিচারিক আদালতের রায় বহাল রয়েছে।  জানা গেছে, শফিকুল ইসলাম মিঠুকে ২০১০ সালে ৮ মে রাতে অফিস শেষে কারওয়ান বাজারে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করার সময় একটি ছিনতাইকারী চক্র গাড়িতে তুলে নেয়। একপর্যায়ে পরিচয় জানতে পেরে তাকে হত্যা করে আসামিরা।

মিঠু রাতে বাসায় না ফেরায় পরদিন সকালে তার ছোটো ভাই রহমত উল-ইসলাম দক্ষিণখান থানায় জিডি করেন। পরে তুরাগ থানার বেড়িবাঁধ এলাকায় লাশ পাওয়া যায়। তিনি অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে তুরাগ থানায় হত্যা মামলা করেন। পুলিশ ১৩ মে আসামি রতনকে গ্রেফতার করে। পরদিন হাকিম আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে মিঠু হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত বিবরণ দেন তিনি।

দুই দিন পর আরেক হত্যা মামলায় টাঙ্গাইলের মীর্জাপুরে গ্রেফতার হন অপর দুই আসামি রাজু ও সুজন। তারাও পরে হাকিম আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। আসামিদের জবানবন্দিতে মিঠু হত্যার হোতা হিসেবে রাহাতের নাম আসে। মামলার তদন্ত চলাকালে পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে তিনি নিহত হন। ২০১০ সালের ৩১ ডিসেম্বর তুরাগ থানা পুলিশ আদালতে তিন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়। ঢাকার অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. আখতারুজ্জামান ২০১৩ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি এ মামলার রায়ে তিন আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেন। ওই রায়ের পর মামলার ডেথ রেফারেন্স ও রায়ের বিরুদ্ধে আসামিদের করা আপিল হাই কোর্টে আসে।

পুলিশের এসআই মো. রফিকুল ইসলাম অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে মামলাটি করেন। মামলাটির তদন্তকালে চারজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ছিনতাইয়ের ৭০ হাজার টাকা নিহত লতিফের কাছে ছিল। ওই টাকার ভাগবাটোয়ারা নিয়ে নিহত ও দণ্ডিতদের মধ্যে দ্বন্দ্বের জেরে অব্যাহতি পাওয়া ফেরদৌস ওরফে ফেদু, আসামি মোয়াজ্জেম ও বাবু চাপাতি দিয়ে লতিফকে গলা কেটে হত্যা করে। এ সময় রাশেদ, সুমন ও আজি হাত-পা ধরে রাখেন। তদন্তের পর ২০০৭ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি আদালতে চার্জশিট দেয় পুলিশ।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর