শুক্রবার, ২ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

পাদুকা শিল্পে অপার সম্ভাবনা

রপ্তানি ৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়াবে ২০২১ সালে

রুহুল আমিন রাসেল

পাদুকা শিল্পে অপার সম্ভাবনা

দেশের বিকাশমান চামড়াজাত পাদুকা শিল্পের রপ্তানিতে বিশাল সম্ভাবনা দেখছে সরকার। আগামী ২০২১ সালে রপ্তানি ৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। এই শিল্পের রপ্তানি প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বাড়াতে বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতা সমাধানের উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। এরই আলোকে কাঁচামাল আমদানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধাসহ একগুচ্ছ বিশেষ আর্থিক সুবিধা প্রদানের সুপারিশ করেছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। দেশের চামড়াজাত পাদুকা শিল্পের প্রতিবন্ধকতা ও সমাধানের প্রস্তাবনাসমূহ নিয়ে সাম্প্রতি এক সভার সুপারিশমালায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় বলেছে, এ শিল্পের জন্য ২০১৮ সালের মধ্যে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা তৈরি করতে হবে। চামড়া, পাদুকা ও চামড়াজাত পণ্য খাতের জন্য বন্ড ব্যবস্থাপনার নীতি ও সুবিধাসমূহ তৈরি পোশাকশিল্পের মতো হওয়া প্রয়োজন। অগ্নি-নিরাপত্তা সামগ্রী আমদানির ক্ষেত্রে তৈরি পোশাকশিল্প খাতের মতোই চামড়া, পাদুকা এবং চামড়াজাত খাতের জন্য শুল্কমুক্ত করা উচিত। পোশাকশিল্পের মতো এই শিল্পেও কর্পোরেট কর ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১২ শতাংশ করা উচিত। একই সঙ্গে চামড়া খাত কর অবকাশ সুবিধার আওতায় আনা যেতে পারে। উেস কর ২০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১২ শতাংশ নির্ধারণ করা দরকার।

বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহীন আহমেদ গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, পাদুকা শিল্পে সম্ভাবনা আছে অনেক। কিন্তু সহায়তা নেই। সরকারি নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোতেই বড় সমস্যা। বন্ড সুবিধা পোশাকশিল্প পেলেও, আমরা পাই না। এ ধরনের বৈষম্য দূর করতে হবে। চামড়া ছাড়া অন্যান্য সব কাঁচামাল আমদানি নির্ভর। এ সংকট উত্তরণে প্রয়োজন দেশীয়ভাবে কাঁচামাল প্রস্তুত করা। এটা করতে হলে বিদেশি বিনিয়োগ আনতে হবে। সরকারি তথ্যমতে, চামড়াজাত পাদুকা শিল্পের সঙ্গে জড়িত কমপক্ষে ৬ হাজার ২০০টি প্রতিষ্ঠানে প্রায় ১০ লাখ শ্রমিক কাজ করছেন, যাদের বেশির ভাগই নারী শ্রমিক। এক দশক ধরে বাংলাদেশে জুতার উৎপাদন প্রতি চার অথবা পাঁচ বছরে দ্বিগুণ হারে বাড়ছে। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য এই খাতের সঙ্গে দেশের তৈরি পোশাক শিল্পের নেতিবাচক দিকগুলোর অত্যন্ত মিল রয়েছে। প্লাস্টিক ও হালকা যন্ত্রসামগ্রী উৎপাদন সেক্টর ট্যানারি শিল্পসহ অন্যান্য অনেক শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ তৈরি করছে। তবে অনেক ক্ষেত্রেই এসব কারখানা তাদের উৎপাদিত পণ্য সরাসরি বিদেশে রপ্তানি করছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়— চামড়া খাত হচ্ছে, পাঁচ দশকের পুরনো প্রতিষ্ঠিত খাত। এটি সরাসরি আমাদের কৃষি অর্থনীতির সঙ্গে যুক্ত। যেখানে আমরা বৈশ্বিক ব্র্যান্ডের জন্য ফ্যাশন পণ্য প্রস্তুত করতে পারছি। কয়েক বছরে চামড়াজাত পণ্য ও পাদুকা রপ্তানি অনেক বেড়েছে। চামড়াজাত পণ্য মোট রপ্তানির ৩৩ দশমিক ৪৩ শতাংশ। আর পাদুকা মোট রপ্তানির ৪২ দশমিক ৬২ শতাংশ। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে— তৈরি পোশাকের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরতা কমিয়ে বহুমুখী পণ্য থেকে ৩০ শতাংশ আয় অর্জন করা সম্ভব। আর ৩০ শতাংশ আয়ের মধ্যে চামড়াজাত পণ্য থেকেই ১০ শতাংশ আয় অর্জন করা সম্ভব। ২০২১ সালের মধ্যে এর রপ্তানির পরিমাণ ৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। চামড়া খাত এখন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রপ্তানি আয়ের খাত হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। আর জিডিপিতে এর অবদান দাঁড়িয়েছে ১ শতাংশের ওপরে।

চামড়াসহ চামড়াজাত পণ্য খাতের রপ্তানি বর্তমানে ১ দশমিক ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০১৯ সালে বৃদ্ধি পেয়ে তা দাঁড়াতে পারে ২ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

প্রতিবেদনে সম্ভাবনার চামড়াজাত এই শিল্পকে বিবেচনায় নিয়ে বেশ কিছু সুপারিশ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে রয়েছে— ২০২১ সাল পর্যন্ত পাদুকা আর চামড়াজাত পণ্য রপ্তানিতে নগদ অর্থ প্রণোদনা ১৬ দশমিক ৫ শতাংশে উন্নীত করা। পাশাপাশি একটি ডিজাইন সেন্টার স্থাপন করা। এ ছাড়াও বন্ড সমস্যা সমাধান, কাস্টমস থেকে দ্রুত ছাড়পত্র প্রদান, পরিবেশ অধিদফতরের কাছে কারখানাগুলোকে কমলা রং শ্রেণি থেকে সবুজ রঙে উন্নীত করা, রপ্তানি ঋণের জটিলতা দূরীকরণ ইত্যাদি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর