শনিবার, ৩ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

আগ্রহ নেই নির্বাচনী দায়িত্ব পালনে

নেপথ্যে সহিংসতার আশঙ্কা ও ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁসের শঙ্কা

সাইদুল ইসলাম, চট্টগ্রাম

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দায়িত্ব পালনে অনীহা প্রকাশ করেছেন বেশির ভাগ চাকুরে। নির্বাচনে সংঘাত-সহিংসতার আশঙ্কা ও ব্যক্তিগত তথ্য চাওয়ায় অনেকে দায়িত্ব পালনে অনাগ্রহী বলে জানা গেছে। এজন্য অসুস্থতা, ব্যক্তিগত সমস্যাসহ নানা অজুহাত দেখিয়ে বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারী দায়িত্ব পালনের জন্য দেওয়া চিঠির জবাবে এসব উল্লেখ করেছেন। বিভিন্ন সমস্যার উল্লেখ করলেও যৌক্তিক কারণ ছাড়া কেউ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দায়িত্ব পালন করা থেকে পার পাবেন না বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এর আগে নির্বাচনী দায়িত্ব পালনের জন্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন দফতরের আট শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী চেয়ে চিঠি দেয় চট্টগ্রাম নির্বাচন কমিশন। চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মুনীর হোসাইন খান বলেন, ‘কর্মকর্তা চেয়ে পাঠানো চিঠির জবাবে অনেকেই দায়িত্বে না থাকার কথা জানিয়েছেন। এখানে অসুস্থতা, আবার কেউ কেউ ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়েছেন। যারা নানা সমস্যা বা অজুহাত দেখিয়েছেন তাদেও দেওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করবে নির্বাচন কমিশন। যৌক্তিক কারণ ছাড়া কোনো কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন না করে পার পাবেন না বলেও জানান তিনি। চট্টগ্রাম নির্বাচন অফিসের কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, নির্বাচনে সংঘাতের আশঙ্কায় দায়িত্ব পালনে অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী আগ্রহী হচ্ছেন না। এজন্য তাদের অনেকে কৌশলে অজুহাত হিসেবে অসুস্থতা, ব্যক্তিগতসহ নানা কারণ দেখিয়ে চিঠির জবাব দিয়েছেন কমিশনে। অনেকে তালিকায় নাম দিলেও গোপনে তা বাদ দিতেও নানাভাবে তদবির করছেন। নির্বাচন নিয়ে দেশে এক ধরনের ভীতিকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। নানা কারণে নির্বাচনে সংঘাতের আশঙ্কা করছেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারী। অনুসন্ধানে জানা গেছে, অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী সরকারবিরোধী বিভিন্ন রাজনৈতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত। নির্বাচন কমিশন তদন্ত করলে গোপন বিষয়গুলো বেরিয়ে এলে ক্ষতি হতে পারে— এ আশঙ্কায় তারা নির্বাচনী দায়িত্ব পালনে অনীহা প্রকাশ করছেন। উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা বলেন, ইতিমধ্যে   অনেক প্রতিষ্ঠানই কর্মকর্তার তালিকা পাঠিয়েছে। তালিকায় কিছু কিছু কর্মকর্তা অসুস্থতার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। কেউই কেবল অসুস্থতা দেখিয়ে ছাড় পাবেন না। যিনি দায়িত্ব পালনে সক্ষম নন বলে উল্লেখ করেছেন তাকে সেই কারণের পেছনে কাগজপত্র দিতে হবে। তালিকায় সমস্যা উল্লেখ করা কর্মকর্তাদের যাবতীয় বিষয় যাচাই-বাছাই করে দেখা হবে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে নির্বাচন কমিশন জবাব চাইবে।তালিকায় নানা অজুহাত উল্লেখ করা কয়েকজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আগামীতে আরও ভয়াবহ হবে। নির্বাচনের দিন সংঘাত হতে পারে। দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর নেতিবাচক মনোভাবের কারণে দায়িত্ব পালনে ভয় পাচ্ছি। এসব কারণে দায়িত্ব পালনে আগ্রহী হচ্ছি না।

নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনে ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য সম্প্রতি কর্মকর্তার তালিকা চেয়ে চট্টগ্রামের আট শতাধিক দফতরে চিঠি দেয় চট্টগ্রাম নির্বাচন কমিশন। চিঠিতে কর্মকর্তাদের নাম, পদবি, বয়স, কর্মরত প্রতিষ্ঠানের নাম, ঠিকানা, মোবাইল নম্বর, বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা, বেতন স্কেল, বর্তমান মূল বেতন, মন্তব্যসহ ব্যক্তিগত যাবতীয় বিষয় উল্লেখপূর্বক তালিকা পাঠাতে নির্দেশনা দেওয়া হয় চিঠিতে। গত ৩০ অক্টোবর তালিকা জমা দেওয়ার শেষ সময় ছিল। কর্মকর্তাদের প্রাপ্ত তালিকার ভিত্তিতে প্রিসাইডিং, সহকারী প্রিসাইডিং, পোলিং, সহকারী রিটার্নিংসহ ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা নির্বাচন করবে কমিশন। ৫ নভেম্বরের মধ্যে প্যানেল প্রস্তুত করার কথা।

সর্বশেষ খবর