সোমবার, ৫ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

চট্টগ্রামে অকার্যকর ওয়াসা

৫৬ বছরেও হয়নি ড্রেনেজ ও পয়ঃপ্রণালি ব্যবস্থা

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামে অকার্যকর ওয়াসা

৫৬ বছর আগে ‘পানি সরবরাহ  ও পয়ঃপ্রণালি কর্তৃপক্ষ’ নাম দিয়েই যাত্রা করে চট্টগ্রাম ওয়াসা। কিন্তু অদ্যাবদি চট্টগ্রাম মহানগরে ড্রেনেজ ও পয়ঃপ্রণালিব্যবস্থাই চালু করতে পারেনি সংস্থাটি। ফলে নগরবাসী ওয়াসার এ মৌলিক সেবা থেকেই বঞ্চিত হচ্ছে। সম্প্রতি ওয়াসা ‘চিটাগাং ওয়াটার সাপ্লাই ইম্প্রুভমেন্ট অ্যান্ড স্যানিটেশন’ শীর্ষক প্রকল্প গ্রহণ করে। এর মধ্যে ৩৮০ কোটি ৮৫৮ লাখ ৭৭ হাজার টাকার এ প্রকল্পে সরকার দেবে ৩৭৫ কোটি ৮৫৮ লাখ ৭৭ হাজার টাকা। আর ওয়াসা দেবে ৫ কোটি টাকা। ২০১৫ সালের ৪ জানুয়ারি বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ড্রেনেজ ও পয়ঃপ্রণালিব্যবস্থার মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের কাজ শুরু করে। ইতিমধ্যে পুরো নগরকে ছয় ভাগে ভাগ করা হয়। এগুলো হলো হালিশহর, কালুরঘাট, ফতেয়াবাদ, পূর্ব বাকলিয়া, উত্তর কাট্টলি ও পতেঙ্গা। প্রথম পর্যায়ে হালিশহর প্রকল্পের অধীনে প্রায় ২০ লাখ মানুষকে ড্রেনেজ ব্যবস্থার আওতায় আনার কাজ শুরু হবে। এ অংশের কাজের প্রকল্পটি একনেকে  অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে বলে জানা যায়। পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার মাস্টার প্লান প্রকল্পের উপ পরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘প্রণীত মাস্টার প্লানটি পূর্ণ বাস্তবায়নের পর ২০৬০ সাল নাগাদ শহরের ৬৫ শতাংশ এলাকা পাইপ লাইন সিস্টেমের মাধ্যমে পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার আওতায় আসবে। অবশিষ্ট ৩৫ শতাংশ এলাকা পদ্ধতিগত উন্নয়ন সাধিত হবে। ২০২৩ সালে এ কাজ শেষ করার কথা রয়েছে। বর্তমানে প্রকল্পটি একনেক সভায় অনুমোদনের অপেক্ষায়।’ তিনি বলেন, ‘প্রথম পর্যায়ের কাজের মাধ্যমে প্রায় ২০ লাখ মানুষকে প্রচলিত পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার আওতায় আনা, স্যানিটেশন ফেসিলিটিজ নির্মাণ করে নগরের পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার সূচনা, পরিবেশের উন্নতির জন্য সোক-ওয়েল ব্যবহারের ওপর নির্ভরশীলতা কমানো, শহরের অভ্যন্তর ও চারপাশের এলাকায় উৎপাদিত বিপুল পরিমাণ পয়ঃপরিশোধন, সেক্টরাল গ্রোথ ও প্রকল্প এলাকায় স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করা এবং দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে আমরা আশা করছি।’ ওয়াসা সূত্রে জানা যায়, ‘চিটাগাং ওয়াটার সাপ্লাই ইম্প্রুভমেন্ট অ্যান্ড স্যানিটেশন প্রজেক্টে’র (প্রথম পর্যায়) আওতায় নগরীর পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার মাস্টার প্লান তৈরি করা হয়। প্রকল্পে শহরের স্যানিটেশন ও ড্রেনেজের অবস্থা নিরূপণ, কর্মকৌশল, প্রাতিষ্ঠানিক বিন্যাস ও কর্ম পরিকল্পনা প্রণয়ন, ঐকমত্য প্রতিষ্ঠায় সহায়তা, চট্টগ্রাম নগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ১৯৯৫ সালে প্রণীত মাস্টার প্লান হালনাগাদ এবং ২০০৮ সালে চট্টগ্রাম ওয়াসার স্যানিটেশন মাস্টার প্লানের স্টাডি হালনাগাদ করার বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। জানা যায়, ঢাকায় পয়ঃপ্রণালি ব্যবস্থা চালু হলেও বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রাম নগরে নানা অজুহাতে সেটি চালু করা হয়নি। অথচ পয়ঃপ্রণালি চালুর বিষয়টি নগরবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি।

কেবল পয়ঃপ্রণালি নয়, এখন পর্যন্ত নগরবাসীর পানির চাহিদাও পূরণ করতে পারেনি। পুরো বছর ধরেই থাকতে হয় পানি সংকটে। তার ওপর পয়ঃপ্রণালি ব্যবস্থা চালু করতে না পারায় ওয়াসার ওপর নগরবাসীর ক্ষোভ ও হতাশা বাড়ছে।

ওয়াসা সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম নগরে পানি সরবরাহের উন্নতি ও নিশ্চিতের লক্ষ্যে ১৯৬৩ সালে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল থেকে চট্টগ্রাম ওয়াসার যাত্রা। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল ও চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যালিটির ২৫টি গভীর নলকূপ থেকে তৎকালীন দৈনিক পানি উৎপাদন হতো মাত্র ২০  এমএলডি। যা নগরীরবাসীর চাহিদার তুলনায় ছিল অপ্রতুল।

সর্বশেষ খবর