মঙ্গলবার, ৬ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

হুমকির মুখে পাহাড়িদের ‘কোমর তাঁত শিল্প’

নেপথ্যে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাব

কবির হোসেন সিদ্দিকী, বান্দরবান

হুমকির মুখে পাহাড়িদের ‘কোমর তাঁত শিল্প’

পার্বত্যাঞ্চলে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর প্রতি ঘরে ঘরে গড়ে ওঠা ‘কোমর তাঁত শিল্প’ এখন হুমকির মুখে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাব, বাজারজাতকরণের অসুবিধা এবং সুতার দাম বেড়ে যাওয়ায় পাহাড়ি লোকজন বাপ-চাচার আদি এই পেশা ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন। প্রাপ্ত্য তথ্যানুযায়ী, যুগের পর যুগ ধরে পাহাড়ি মেয়েরা কোমর তাঁতে কাপড় বুনে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হয়ে আসছিলেন। বিগত সময়ে সরকার এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে তিন পার্বত্য জেলায় ১৬টি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করেছিল। কিন্তু সরকারি অনুদান বন্ধ হওয়ায় গত বছর থেকে এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোও বন্ধ হয়ে গেছে। এ ছাড়াও তিন পার্বত্য জেলার আটটি কুটির শিল্প বিক্রয় কেন্দ্রও এক বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। ফলে আদিবাসী নারীরা তাদের উৎপাদিত কাপড় বিক্রি করতে পারছেন না। অন্যদিকে দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে সুতার দাম। পাহাড়িরা   আদিকাল থেকেই তাদের নিজস্ব তৈরি কোমর তাঁতের কাপড় পরিধান করে আসছেন। কোমর তাঁতের কাপড় তৈরি করা পাহাড়ি মেয়েদের ঐতিহ্যগত শৈল্পিক কাজও। তিন পার্বত্য জেলায় বসবাসরত চাকমা, মারমা, তঞ্চঙ্গ্যা, ত্রিপুরা, বম, খুমি, লুসাই, পাংখোয়া, চাক, খেয়াং এবং মুরুংরা তাদের নিজস্ব আলাদা বৈচিত্র্যময় পোশাক পরিধান করে আসছেন। তাদের এ পোশাক দেখেই কোন গোত্রের মানুষ— তা সহজেই চিনতে পারা যায়। কোমর তাঁতে তৈরি করা পোশাক পাহাড়ি রমণীদের ঐতিহ্যগত বৈচিত্র্য এনে দিয়েছে। অভিযোগ অনুযায়ী, পার্বত্যাঞ্চলে পাহাড়িদের প্রতিটি ঘরে ঘরে কোমর তাঁতে বোনা কাপড় তৈরি হলেও প্রয়োজনীয় পুঁজি বিনিয়োগ না হওয়া, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা না থাকা, উন্নত প্রযুক্তির শিল্প সহায়তা না থাকা, বাজারজাত ও উদ্যোক্তার অভাবসহ নানামুখী সমস্যার কারণে শিল্পটি প্রতিষ্ঠা লাভ করতে পারছে না।

জেলা কুটির শিল্প সংস্থার মতে, বান্দরবানে ১০ হাজার পাহাড়ি মেয়ে কাপড় বুনছে। তারা তৈরি করছে থামি (পরনের কাপড়), গামছা, কম্বল, রুমাল, চাদরসহ বিভিন্ন রকমারি জামা কাপড়। এক্ষেত্রে বম ও ত্রিপুরারা অনেকটা এগিয়ে রয়েছে। বম ও ত্রিপুরাদের কোনো মেয়েই ঘরে বসে নেই। প্রত্যেক পরিবারে মহিলা সদস্যরা কোমর তাঁতে কাপড় বুনে থাকে। বম অধ্যুষিত ফারুক পাড়ার ভাননুম বম জানিয়েছেন, তার পরিবারের তিনি ও দুই কন্যাসহ তিন মহিলা সদস্যই তাঁতে কাপড় বুনেন। তারা উৎপাদিত এসব কাপড় পর্যটন স্পট শৈলপ্রপাতে নিয়ে বিক্রি করে। এ শিল্পের জন্য তারা সরকারি কিংবা বেসরকারি কোনো সংস্থার সহযোগিতা পান না। তার মতে, এই শিল্পে নারীদের আর্থিকভাবে সহযোগিতা করা হলে বান্দরবানে কোমর তাঁত শিল্প প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেতে পারে। তিনি এ কোমর তাঁত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শিল্প হিসেবে গড়ে তুলতে সরকারি উদ্যোগ কামনা করেছেন। ওয়াকিবহালদের মতে, এই খাতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে কোমর তাঁত শিল্প একটি বড় ধরনের শিল্পে পরিণত হতে পারে। এ শিল্পটি পাল্টে দিতে পারে পাহাড়ি নারীদের জীবন চিত্রও।

 

সর্বশেষ খবর