বৃহস্পতিবার, ৮ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

চট্টগ্রাম রেলে বইছে সুবাতাস

দুই বছরে আয় বেড়েছে ৫৮৩ কোটি টাকা

সাইদুল ইসলাম, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রাম রেলে বইছে সুবাতাস

অবকাঠামোগত উন্নয়নের কারণে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে বাংলাদেশ রেলওয়ের আয়। টানা দুই বছরে রেলের আয় বেড়েছে প্রায় ৫৮৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলে ১৮৩ কোটি টাকা আয় বেড়েছে। এর আগের বছর আয় বাড়ে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা। রেলের লোকসানের ধারা থেকে আয়ে ফিরছে রাষ্ট্রায়ত্ত এ সংস্থাটি। তবে কয়েক বছরের মধ্যে আয়-ব্যয়ের ব্যবধান কমে এসে একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে বলে জানান পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান বাণিজ্য কর্মকর্তা (সিসিএম) সরদার শাহাদাত আলী। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বর্তমান সরকার রেলের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড অব্যাহত রেখেছে। এর মধ্যে অনেক প্রকল্পের কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়ে ট্রেন চলাচলসহ আয়ের রাস্তা বেড়েছে। বিভিন্ন লাইনে নতুন নতুন ট্রেন দেওয়া হয়েছে। এসব কারণে আগের তুলনায় কয়েক বছর ধরে রেলওয়ের সেবার মান ও আয় বাড়ছে। রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে রেলের আয় ছিল ৯৩৫ কোটি ৪৫ লাখ টাকা আর ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৯০৪ কোটি টাকা। এ ছাড়া ২০১৬-১৭ অর্থবছরে আয় করে ১ হাজার ৩০৪ কোটি ও ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১ হাজার ৪৮৬ কোটি ১৫ লাখ ৯২ হাজার টাকা; যা আগের বছরের চেয়ে ১৮২ কোটি ৩৯ লাখ ৫০ হাজার বেশি। অর্থাৎ টানা দুই বছরে প্রায় ৬০০ কোটি টাকা আয় বেড়েছে রেলওয়ের। সম্প্রতি রেলের সর্বশেষ অর্থবছরের আয়ের হিসাব শেষ হয়েছে। গত ১৯ সেপ্টেম্বর রেলওয়ের প্রধান অর্থ উপদেষ্টা ও হিসাব অধিকর্তার দফতর থেকে রেলভবনে পাঠানো প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে রেলের আয় হয়েছে ১ হাজার ৪৮৬ কোটি ১৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে পূর্বাঞ্চলে আয় করেছে ৮৯৩ কোটি ৯৭ লাখ ২১ হাজার ও পশ্চিমাঞ্চলে ৫৯২ কোটি ১৮ লাখ ৭১ হাজার টাকা। হিসাব পর্যালোচনায় দেখা গেছে, সর্বশেষ অর্থবছরে যাত্রী খাতে আয় হয়েছে ৯০৫ কোটি টাকা; যার মধ্যে পূর্বাঞ্চলে ৫৮৬ কোটি ও পশ্চিমাঞ্চলে ৩১৯ কোটি টাকা। যাত্রী ছাড়া আয় হয়েছে ১৯০ কোটি, পণ্য পরিবহন খাতে ২৮৬ কোটি ও বিবিধ ২৭৬ কোটি টাকা। যদিও বিবিধ খাতের আয় ২০১৬-১৭ অর্থবছরের চেয়ে কমেছে সর্বশেষ অর্থবছরে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বিবিধ খাতে ৩০৬ কোটি টাকা আয় হলেও এবার হয়েছে ২৭৬ কোটি। রেলের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ইন্দোনেশিয়া থেকে ১০০ মিটার-গেজ কোচ ও ভারত থেকে ১২০ ব্রড-গেজ কোচ আমদানির মাধ্যমে দীর্ঘদিন পর রেলের বিভিন্ন আন্তনগর ট্রেনে নতুন করে কোচ সংযোজন শুরু হয়। এরপর পূর্বাঞ্চল রেলওয়েতে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ও সোনার বাংলা এক্সপ্রেস ট্রেন চালুর পাশাপাশি পশ্চিমাঞ্চলে সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেস চালু করা হয়। আন্তনগর ও লোকাল বেশ কয়েকটি ট্রেন বেড়ে যাওয়ায় যাত্রী খাতে আয়ের প্রভাব পড়েছে বেশি। তারা বলেন, সর্বশেষ এক বছরে মাত্র ২২০টি কোচ আমদানি করায় রেলের আয়ে বড় ধরনের পরিবর্তন হয়েছে। রেলের সব ট্রেনে পর্যাপ্ত কোচ ছাড়াও চাহিদা অনুযায়ী ইঞ্জিন আমদানি করা গেলে রেলের আয় আরও দ্রুত বাড়ানো সম্ভব বলে মনে করছেন তারা। রেলওয়ের তথ্যমতে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশ রেলওয়ের নিট লোকসান ছিল ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। ওই সময়ে রেলের ব্যয় ৩ হাজার ১০০ কোটি টাকা। সর্বশেষ অর্থবছরেও রেলের ব্যয় হয়েছে ৩ হাজার ২০০ কোটি টাকা। এ হিসাবে ধীরে ধীরে হলেও রেলের আয়-ব্যয়ের ব্যবধান কমে আসছে। চলতি অর্থবছরে রেলওয়ে ২ হাজার কোটি টাকার আয় লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়ন হলে রেলের লোকসান এক তৃতীয়াংশে নেমে আসবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সর্বশেষ খবর