শুক্রবার, ১৬ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা
সাক্ষাৎকারে ভারতের দুই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক

সচেতনতা-প্রাযুক্তিক দক্ষতা রুখবে ক্যান্সার

নিজস্ব প্রতিবেদক

সচেতনতা-প্রাযুক্তিক দক্ষতা রুখবে ক্যান্সার

সচেতনতার অভাবে ক্যান্সারের শেষ পর্যায়ে গিয়ে শনাক্ত হচ্ছে রোগীরা। এর মধ্যে প্রাথমিকভাবে শনাক্ত হওয়া অধিকাংশ রোগী প্রাযুক্তিক দক্ষতার অভাব ও পর্যাপ্ত চিকিৎসা না পেয়ে হার মানছেন ক্যান্সারের কাছে। এর মধ্যে যাদের আর্থিক সঙ্গতি আছে তারা চিকিৎসা নিতে যাচ্ছেন ভারতে। ক্যান্সারের বর্তমান চিত্র এবং চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে এসব কথা বলেন ভারতের হেলথ কেয়ার গ্লোবাল এন্টারপ্রাইজ (এইচসিজি) ইকো ক্যান্সার সেন্টারের রেডিয়েশন অনকোলজি বিভাগের প্রধান ডা. অয়ন বসু এবং সার্জিক্যাল অনকোলজি সার্জেন ডা. রাহুল চৌধুরী। প্রতি বছর ভারতের এইচসিজি ইকো ক্যান্সার সেন্টারে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে ৩৪ হাজারেরও বেশি রোগী চিকিৎসা নিতে আসে। বেঙ্গালুরুতে সবচেয়ে বড় ক্যান্সার হেলথ কেয়ার সেন্টার ছাড়াও ভারতের বিভিন্ন জায়গা এবং আফ্রিকার বেশ কয়েকটি দেশ মিলিয়ে মোট ১৯টি ক্যান্সার কেয়ার সেন্টার রয়েছে এইচসিজির। রোবোটিক রেডিওসার্জারি, স্টেরিওটিক রেডিওসার্জারি ছাড়াও এই বিশেষায়িত হাসপাতালে রয়েছে ক্যান্সার চিকিৎসায় উন্নত প্রযুক্তি এবং দক্ষ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার। এশিয়ায় প্রথম বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্টেশন শুরু হয় এই হাসপাতাল থেকে। ক্যান্সারের কারণ এবং লক্ষণ বিষয়ে ডা. অয়ন বসু বলেন, দুই দশক আগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ক্যান্সারের সাতটি লক্ষণ নির্ণয় করেছিল। শরীরে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষত, গুটি হয়ে থাকা, রক্তক্ষরণ, প্রায় ডায়রিয়া হওয়াসহ বেশি কিছু লক্ষণ ছিল। এখনো লক্ষণগুলো একই রকম আছে। তাই এ ধরনের কোনো লক্ষণ দেখা গেলে অপ্রয়োজনে ওষুধ না খেয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি। ক্যান্সারের বিষয়ে তিনি বলেন, তামাক সেবন ফুসফুস এবং কণ্ঠনালির ক্যান্সারের প্রধান কারণ। এ ছাড়া স্থূলতা থেকে তৈরি হচ্ছে স্তন ক্যান্সার। খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন, খাবারে কীটনাশকের উপস্থিতি এবং আর্সেনিকের কারণে লিভার, যকৃৎসহ বিভিন্ন রকমের ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। বাংলাদেশসহ ভারতের কলকাতা, আসাম, উড়িষ্যা এই অঞ্চলের মানুষের ক্যান্সারের ধরন এক রকম বলে জানান এই বিশেষজ্ঞ। এই অঞ্চলে ক্যান্সার আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। এই পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে কলকাতায় নতুনভাবে ক্যান্সার কেয়ার সেন্টার চালু করছে এইচসিজি।

ক্যান্সার চিকিৎসায় প্রযুক্তির ব্যবহার অল্প কিছু হাসপাতালে থাকা এবং এই প্রযুক্তি খুব অল্পসংখ্যক চিকিৎসক ব্যবহারের সুযোগ পাওয়ায় বাংলাদেশে চিকিৎসা ব্যয় বাড়ছে বলে জানান তারা। এক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার প্রান্তিক পর্যায়ে পৌঁছলে সেবার মান এবং চিকিৎসকদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবে বলে জানান ডা. রাহুল চৌধুরী। তিনি বলেন, প্রয়োজনে নিজেরা প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা যেতে পারে। ভারতের মাল্লাটে ক্যান্সার কেয়ার সেন্টারে বিশাল রাও নামে একজন সার্জিক্যাল অনকোলজিস্ট কণ্ঠনালির ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদের জন্য ভোকাল যন্ত্র আবিষ্কার করেছিলেন। তিনি মাত্র ৫০ রুপিতে এই যন্ত্র রোগীদের দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন। আগে অন্য দেশ থেকে আমদানি করা এই যন্ত্র কিনতে রোগীদের ৩০ হাজার রুপি খরচ করতে হতো। বাংলাদেশে যথেষ্ট দক্ষ চিকিৎসক রয়েছেন। তবে রোগীর সংখ্যা যে হারে বাড়ছে তাই পর্যাপ্ত সেবা দিতে হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা এবং দক্ষ চিকিৎসকের সংখ্যা বৃদ্ধিতে নজর দিতে হবে।   

সর্বশেষ খবর