শুক্রবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

জামায়াতের গঠনতন্ত্রবিরোধী ধানের শীষ প্রতীকে ভোট

দলের একাংশ ক্ষুব্ধ

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

ধানের শীষ প্রতীকে ভোটে অংশ নেওয়ায় ক্ষুব্ধ জামায়াতে ইসলামীর একাংশ। তাদের অভিমত, এর মাধ্যমে বিএনপিতে বিলীন হয়ে গেছে জামায়াত। অমান্য করা হয়েছে দলীয় গঠনতন্ত্র। দলের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন জামায়াতের এই অংশটি বলছে, ধানের শীষে ভোট করে নির্বাচনের মাঠে কিছু লাভ হলেও ভবিষ্যতের জন্য ক্ষতি হলো। জোটগতভাবে ২৫ আসন জামায়াতকে ছাড় দিলেও প্রতীক বরাদ্দের সময় বিএনপি চিঠি না দিলে তাদের প্রার্থিতা বাতিল হবে। এতে জামায়াতের আসন আরও কমতে পারে। এর মাধ্যমে জামায়াত বিএনপির হাতে বন্দী হয়ে পড়েছে। তবে কোনো নেতা এ বিষয়ে নাম প্রকাশ করে কথা বলতে রাজি হননি। জামায়াতের মনোনয়ন পাওয়ার প্রথম শর্ত হলো দলের সদস্য (রুকন) হওয়া। দলীয় গঠনতন্ত্রের ৭ ধারায় রুকন পদে বহাল থাকার যোগ্যতা বর্ণনা করা হয়েছে। ৭(৫) ধারায় বলা হয়েছে, রুকনরা এমন কোনো দল বা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারবেন না যার মূলনীতি, উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য জামায়াতের উদ্দেশ্য, লক্ষ্য ও কর্মনীতির পরিপন্থী। এ ধারা লঙ্ঘনে দলের সদস্যপদ বাতিলের বিধান রয়েছে গঠনতন্ত্রে। রুকন পদ বাতিল হলে কেউ জামায়াতের কোনো দায়িত্বে থাকতে পারবেন না। বিএনপির প্রার্থী হয়ে জামায়াত নেতারা ৭(৫) ধারা লঙ্ঘন করেছেন বলে অভিযোগ দলটির একাংশের। তাদের কেউ নির্বাচিত হলে বিএনপির এমপি হিসেবে গণ্য হবেন। সংসদে বিএনপির সংসদীয় দলের সদস্য হয়ে থাকবেন। সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের কারণে তারা বিএনপির সিদ্ধান্তের বাইরে যেতে পারবেন না। জানা যায়, বিএনপির প্রত্যয়ন নিয়ে ২৫ আসনে নিবন্ধন হারানো জামায়াত নেতারা জোটের মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। জোটের কাছে ৫৩টি আসন চেয়েছিল জামায়াত। ২০০১ সালে ৩০ এবং ২০০৮ সালে ৩৩টি আসনে জোটের মনোনয়ন পেয়েছিল জামায়াত। ২০১৩ এবং ২০১৫ সালে নির্দলীয় সরকারের অধীনে বিএনপি জোটের আন্দোলনে ‘ত্যাগের’ কারণে জামায়াতের নেতা-কর্মীদের প্রত্যাশা ছিল অতীতের চেয়ে বেশি সংখ্যক আসনে ছাড় পাবে। কিন্তু ২০০৮ সালে যে ৩৩ আসনে জোটের মনোনয়ন পেয়েছিল জামায়াত এবার তার ১১টিই পায়নি জামায়াত।

মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দণ্ডিত প্রয়াত দলের আমির মতিউর রহমান নিজামীর পাবনা-১ আসনও পায়নি দল। দলের শীর্ষ নেতাদের দুর্বল দরকষাকষির কারণে জামায়াত এ অবস্থায় পড়েছে বলে মনে করছেন ছাত্রশিবিরের একজন সাবেক সভাপতি। তিনি বলেন, বিএনপি জোটের কর্মসূচিতে জামায়াত যতটা ত্যাগ স্বীকার করেছে ততটা মূল্যায়ন পায়নি এবার। নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় জামায়াতের দলীয় পরিচয় ও প্রতীকে ভোটে অংশ নেওয়ার সুযোগ নেই। জামায়াতের সিদ্ধান্ত ছিল স্থানীয় সরকারের নির্বাচনের মতো সংসদের ভোটেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হবেন দলের প্রার্থীরা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ধানের শীষ প্রতীকে ভোট করার সিদ্ধান্ত নেয় জামায়াতের শীর্ষ নেতৃত্ব। দলটির একজন নেতা বলেছেন, এ পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত ছিল না জামায়াত। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে এক শতাংশ ভোটারের সই জোগাড়ের মতো সময় ছিল না। তাই বাধ্য হয়ে ধানের শীষে নির্বাচন করতে হয়েছে। তবে জামায়াত নেতাদের বিএনপির প্রার্থীকে গঠনতন্ত্রের লঙ্ঘন মনে করছেন না দলের কর্মপরিষদ সদস্য এহসানুল মাহবুব জোবায়ের। তিনি বলেছেন, কারও একক সিদ্ধান্তে নয় দলের সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামত নিয়ে জামায়াত জোটের বাকি শরিকদের মতো বিএনপির প্রতীকে ভোটে অংশ নিচ্ছে। তবে জোটের বাকি শরিকরা ধানের শীষ প্রতীকে ভোট করলেও তারা নিজ দলের প্রার্থী হিসেবেই গণ্য হবেন। কিন্তু নিবন্ধন না থাকা জামায়াত নেতারা বিএনপির প্রার্থী হিসেবে গণ্য হবেন না।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর