শিরোনাম
রবিবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

সাত আসনেই নৌকায় চমক দেখাতে চান নেতারা

সাইদুল ইসলাম, চট্টগ্রাম

সাত আসনেই নৌকায় চমক দেখাতে চান নেতারা

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে চট্টগ্রাম উত্তরের সাতটি আসনেই চমক দিতে কাজ করছেন জেলার শীর্ষসহ তৃণমূলের নেতারা। ইতিমধ্যে উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির জরুরি সভাসহ উপজেলা পর্যায়ে সাংগঠনিক কমিটির মিটিংও করা হয়েছে। এ উত্তরের সাতটি আসনের মধ্যে দুটিতে মহাজোটের প্রার্থীও রয়েছেন। সব মিলিয়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের বিজয় নিশ্চিত করতে এক ও অভিন্ন হয়ে কাজ করবেন বলে জানান তৃণমূলের নেতারা।

ওই সাতটি আসনের মধ্যে যাদের মহাজোট বা দলীয় মনোনয়ন চূড়ান্ত হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছেন চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই) আসনে গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি, চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী এমপি, চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ) আসনে মাহফুজুর রহমান মিতা এমপি, চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) আসনে দিদারুল আলম এমপি, চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) আসনে পরিবেশ ও বনমন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসনে এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী এমপি, চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া) আসনে আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ এমপি। এই প্রার্থীরা নিজ নিজ এলাকায় হাজার হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি একাধিকবার সংসদ সদস্যও নির্বাচিত হয়েছেন। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম উত্তরের সাতটি আসন উপহার দিতে নেতা-কর্মীরা মাঠে কাজ শুরু  করেছেন। প্রতিটি উপজেলায় আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠনসহ তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা মহাজোট তথা দলীয় প্রার্থীদের নির্বাচিত করতে সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড ও প্রার্থীদের ব্যক্তিগত ইমেজ এবং কেন ভোট দেবেন এসব বিষয়ে গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করতে উঠান-বৈঠক করেছেন। এ ছাড়া প্রতীক বরাদ্দের পাশাপাশি নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা শুরু হলে ওই আসনের প্রার্থীদের বিজয়ী করতে মাঠে থাকবেন বলে জানান তৃণমূলের নেতারা। সাতটি আসনের প্রতিটিতেই হাজার হাজার কোটি টাকার উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। হয়েছে বড় বড় প্রকল্পও। চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এম এ সালাম বলেন, উত্তরের সাতটি আসনের মহাজোটসহ দলীয় প্রার্থীদের বিজয়ী করতে মাঠে কাজ করছেন নেতা-কর্মীরা। ইতিমধ্যে উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সভাসহ বিভিন্ন জরুরি সভাও হয়েছে। হয়েছে উপজেলা পর্যায়েও। এখানে আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন তথা প্রার্থীদের গ্রহণযোগ্যতাও রয়েছে প্রতিটি আসনেই। তিনি বলেন, ‘ফটিকছড়িতে স্বতন্ত্র প্রার্থী পিয়ারুল ইসলাম ও মহাজোট প্রার্থী নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারীর মধ্যে সমঝোতার চেষ্টা চালাচ্ছি। উপজেলা আওয়ামী লীগকে সঙ্গে নিয়েই একটা সমাধানে আসতে চাই।’ রাউজান উপজেলা যুবলীগের সহসভাপতি ক্রীড়া সংগঠক সুমন দে বলেন, ‘রাউজানে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে স্থানীয় এমপি এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরীর নেতৃত্বে যেসব উন্নয়ন কর্মকাণ্ড হয়েছে, তা দৃশ্যমান। সন্ত্রাসের জনপদ খ্যাত রাউজান আজ গ্রিন, ক্লিন রাউজানে পরিণত হয়েছে। রাউজানে শত শত কোটি টাকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড অব্যাহত রয়েছে। তবে রাউজানকে আধুনিক রাউজানে পরিণত করতে নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে শেখ হাসিনার হাতকে আরও শক্তিশালী করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।’ একই কথা বলেন সাবেক ছাত্রনেতা সারজু মো. নাছের। উত্তর জেলার চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি টানা দুবার এমপি হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে বিএনপির প্রার্থী নুরুল আমীন। এলাকায় তার (নুরুল আমীন) বিরুদ্ধে রয়েছে শক্তিশালী দলীয় কোন্দল। এসব কোন্দলের কারণে সাধারণ ভোটাররা সচেতন। নৌকার প্রার্থীই এখানে জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। চট্টগ্রাম-২ ফটিকছড়ি আসনে মহাজোটের প্রার্থী তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী। তিনি জোটের এমপি হলেও এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগের এ টি এম পিয়ারুল ইসলাম। এখানে গিয়াস কাদের চৌধুরীর মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ায় বিএনপি কর্নেল (অব.) আজিম উল্লাহ বাহারকে মনোনয়ন দিয়েছে। এতে ভোটের মাঠ ঠিক করতে মহাজোটের দুই প্রার্থীর সমঝোতা হলে আসনটি উদ্ধার করতে পারবে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ) আসনে আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপি মাহফুজুর রহমান মিতা। তিনি আবারও এমপি হতে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। তবে বিএনপির প্রার্থী সাবেক এমপি মোস্তফা কামাল পাশার গ্রহণযোগ্যতাও রয়েছে। এখানে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী দিদারুল আলম। তার (দিদার) বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন যুবলীগ নেতা উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল মামুনসহ নেতা-কর্মীরা। দলের স্বার্থে এক হয়ে নৌকা প্রতীকে কাজ না করলে এ আসনে বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরীর বড় ভাই বিএনপির প্রার্থী ইসহাক কাদের চৌধুরীর জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) আসনে মহাজোটের ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ আবারও এমপি হতে স্থানীয় আওয়ামী লীগসহ অঙ্গসংগঠনের নেতাদের নিয়ে কাজ শুরু করেছেন তিনি। এখানে ২০-দলীয় জোটের প্রার্থী কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম। চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী। তিনি এ আসনে বিএনপি সরকারের আমলেও এমপি হওয়ার পাশাপাশি টানা তিনবারের এমপি। তিনি এলাকায় সাধারণ মানুষের মধ্যে জনপ্রিয়তাও অর্জন করেছেন। সন্ত্রাসের জনপদ খ্যাত রাউজানকে সরকারের উন্নয়নমূলক নানা কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে আধুনিক রাউজানে পরিণত করছেন তিনি। এখন রাউজান গ্রিন, ক্লিন সিটি হিসেবেও পরিচিত। এখানে বিএনপির প্রার্থী রয়েছেন জসিম উদ্দিন শিকদার। নেই এলাকায় বিএনপির কোনো সংগঠনিক তৎপরতা। বিএনপির এ প্রার্থী এলাকায় তেমন পরিচিত না হওয়ায় এবারও রাউজানবাসী উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে নৌকা প্রতীকেই ভোট দিতে পারেন বলে জানান স্থানীয়রা। চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া-বোয়ালখালী একাংশ) আসনে আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ এবারও দলের মনোনয়ন পেয়েছেন। তিনিও এলাকায় অনেক উন্নয়ন করেছেন। বিএনপি প্রার্থী অধ্যাপক কুতুব উদ্দিন দলের মনোনয়ন পেলেও এখানে পরির্বতন হতে পারে মনোনয়ন। তাই নানা কারণে এ আসনটিও আওয়ামী লীগের ঘরে আসতে পারে বলে স্থানীয়দের অভিমত।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর