সোমবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা
গভীর শ্রদ্ধায় শহীদদের স্মরণ

দেশকে এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যয়

সাংস্কৃতিক প্রতিবেদক

সারা দেশের মতো রাজধানীতে আয়োজিত মহান বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানগুলোতেও গভীর শ্রদ্ধায় একাত্তরের শহীদদের স্মরণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে ঘোষণা করা হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ায় প্রত্যয়। নানা স্থানে ভোর থেকে সন্ধ্যারাত পর্যন্ত এ প্রত্যয়ে করা হয়েছে অসংখ্য অনুষ্ঠানমালা।

সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম : গতকাল বিজয়ের ৪৭ বছর পূর্তি উপলক্ষে ‘সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম-মুক্তিযুদ্ধ ৭১’ শিরোনামের অনুষ্ঠানে ফুটিয়ে তুলেছিল ১৯৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের চিত্রটি। সোহরাওয়ার্দী  উদ্যানের শিখা চিরন্তর চত্বরে আয়োজিত এ বিজয়ক্ষণটি ফুটিয়ে তোলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের ছাত্ররা। এর আগে বিকাল ৩টা ৪০ মিনিটে এ অনুষ্ঠানের উদ্বোধন ঘোষণা করেন সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের সহ-সভাপতি নাট্যজন ম. হামিদ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন ফোরামের মহসচিব হারুন হাবীব। এরপর ‘ধনধান্যে পুষ্পে ভরা, তীর হারা এই ঢেউয়ের সাগর পারি দেবোরে, দস্যু এলো মেলা, পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে ও মুক্তির মন্দিরে’ গানগুলোর অংশবিশেষের সঙ্গে লায়লা হাসানের পরিচালনায় দলীয় কোলাজ নৃত্য পরিবেশন করে নাচের দল নটরাজ। শামসুর রাহমানের ‘তোমাকে পাওয়ার জন্য হে স্বাধীনতা’ আবৃত্তি করেন বাচিকশিল্পী ড. শাহাদাৎ হোসেন নিপু। দলীয়ভাবে ‘নোঙ্গর তোল তোল’ গানটি পরিবেশনের পর নতুন প্রজন্মের কাছে জাতীয় পতাকা হস্তান্তর করেন সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) কে এম সফিউল্লাহ। ফোরামের সহ-সভাপতি মোহাম্মদ নূরুল আলমের পরিচালনায় এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন ফোরামের সদস্যরা। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ঢাকা (দক্ষিণ) সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকনসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। সবশেষে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে বিজয়ের এ আয়োজনের সমাপ্তি ঘটে। শিল্পকলা একাডেমি : নাচ, গান, আবৃত্তিসহ নানা আয়োজনে বিজয়ের ৪৭ বছর উদযাপন করেছে শিল্পকলা একাডেমি। দুই দিনের অনুষ্ঠানমালার অংশ হিসেবে গতকাল সন্ধ্যায় একাডেমির উন্মুক্ত প্রাঙ্গণের নন্দনমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় শেষ দিনের আয়োজন। একাডেমির শিল্পীদের সম্মেলক কণ্ঠে ‘দাম দিয়ে কিনেছি বাংলা’ গানটির পরিবেশনার মধ্য দিয়ে বিজয় দিবস উদযাপনের শেষ দিনের অনুষ্ঠানমালা শুরু হয়।

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় : এদিন বিকালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের স্বাধীনতা জাদুঘর মিলনায়তনে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি সচিব মো. নাসির উদ্দিন আহমেদ। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক মো. রিয়াজ আহমেদ, মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নিজাম উদ্দিন ও আবদুুল মান্নান ইলিয়াস প্রমুখ। ছায়ানট : ছায়ানটের আয়োজনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে জাতীয় পতাকার লাল-সবুজ রঙের পোশাকে অনুষ্ঠানস্থলকে দেশাত্মবোধক করে তোলা হয়। অনুষ্ঠানের পুরো আয়োজনে ছিল লাল সবুজের বাংলাদেশ, জাতীয় পতাকা, জাতীয় সংগীত। এতে পরিবেশিত হয় আটটি সম্মেলক গান ও সম্মেলক নৃত্য। একক গান পরিবেশন করেন ডালিয়া নওশিন ও সেমন্তি মঞ্জরী। আবৃত্তি করেন আবদুুস সবুর খান চৌধুরী। সাংস্কৃতিক জোট : সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট এদিন সকালে বিজয় র‌্যালি ছাড়াও বিকালে আটটি মঞ্চে বিজয়োৎসব পালন করেছে। উৎসবের মূল বিষয় ছিল গান, নৃত্য, নাটক, আবৃত্তি। অনুষ্ঠানগুলো একযোগে হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, ধানমণ্ডির রবীন্দ্র সরোবর, রায়েরবাজারের শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ মঞ্চ, মিরপুরের কবি বেলাল চৌধুরী ও আবৃত্তিশিল্পী রণজিৎ রক্ষিত মঞ্চ, দনিয়ার মুক্তিযোদ্ধা তারামন বিবি ও মেজর কামরুল হাসান ভূঁইয়া মঞ্চ, উত্তরার অধ্যাপক মুস্তাফা নূর উল ইসলাম ও সাংবাদিক গোলাম সারোয়ার মঞ্চে।

বাংলা একাডেমি : একক বক্তৃতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বিজয় দিবস উদযাপন করেছে বাংলা একাডেমি। সকাল ৮টায় সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় দিবস উদযাপনের কার্যক্রম। এরপর বিকাল ৪টায় একাডেমির নজরুল মঞ্চে অনুষ্ঠিত ‘বিজয় কথা শীর্ষক’ একক বক্তৃতানুষ্ঠানে বক্তৃতা প্রদান করেন অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। বাংলা একাডেমির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের সভাপতিত্বে এতে স্বাগত ভাষণ দেন একাডেমির মহাপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন। চ্যানেল আই : বিজয় দিবসে বরাবরের মতো এবারও বিজয় মেলার আয়োজন করে চ্যানেল আই। সকালে লাল সবুজের বেলুন উড়িয়ে এ মেলার উদ্বোধন করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন নাট্যজন আতাউর রহমান, মামুনুর রশিদ, সঙ্গীতজ্ঞ আজাদ রহমান, এয়ার ভাইস মার্শাল সুলতান মাহমুদ, চ্যানেল আইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর, পরিচালক ও বার্তাপ্রধান শাইখ সিরাজ, পরিচালনা পর্ষদ সদস্য জহির উদ্দিন মাহমুদ মামুন এবং মুকিত মজুমদার বাবু প্রমুখ প্রতিনিধিরা।

সর্বশেষ খবর