মঙ্গলবার, ১ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা
একাদশ সংসদ নির্বাচন

সেই দুর্গ এবারও অধরা বিএনপির

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

সেই দুর্গ এবারও অধরা বিএনপির

রাজশাহীর সবগুলো আসনে আবারও ধরাশায়ী বিএনপি। দীর্ঘদিনের দুর্গে কোনো প্রার্থীই এবার বিজয়ী হতে পারেননি। রাজশাহীর ছয়টি সংসদীয় আসনের মধ্যে পাঁচটিতে ধানের শীষের প্রার্থীরা ছিলেন। একটি আসনের প্রার্থিতা স্থগিত করে আদালত। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির অংশ নেওয়া নির্বাচনগুলোর তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, রবিবার হওয়া ভোটের সঙ্গে আগের ভোটের পার্থক্য বিশাল। অতীতের যে কোনো নির্বাচনে এমন ভরাডুবি হয়নি বিএনপি প্রার্থীদের। শুধু রাজশাহী-২ (সদর) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে হেরেছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু। তাছাড়া সবগুলো আসনে ভোটের পার্থক্য লাখের ওপরে। রাজশাহী-১ আসনে মহাজোট প্রার্থী ওমর ফারুক চৌধুরী নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন ২ লাখ ৩ হাজার ৪৭৯ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ঐক্যফ্রন্টের ব্যারিস্টার আমিনুল হক পেয়েছেন ১ লাখ ১৮ হাজার ৯৮ ভোট। রাজশাহী-২ আসনে মহাজোট প্রার্থী ফজলে হোসেন বাদশা নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন ১ লাখ ১৫ হাজার ৪৭৩ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ঐক্যফ্রন্টের মিজানুর রহমান মিনু পেয়েছেন ১ লাখ ৩ হাজার ৩২৭ ভোট। রাজশাহী-৩ আসনে মহাজোট প্রার্থী আয়েন উদ্দিন নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন ২ লাখ ১১ হাজার ৩৮৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ঐক্যফ্রন্টের শফিকুল হক মিলন পেয়েছেন ৮০ হাজার ৮০৬ ভোট। রাজশাহী-৪ আসনে মহাজোট প্রার্থী এনামুল হক নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন এক লাখ ৯০ হাজার ৪১২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ঐক্যফ্রন্টের আবু হেনা পেয়েছেন ১৪ হাজার ১৫৭ ভোট। রাজশাহী-৫ আসনে মহাজোট প্রার্থী ডা. মনসুর রহমান নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন এক লাখ ৮৭ হাজার ৩৭০ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ঐক্যফ্রন্টের অধ্যাপক নজরুল ইসলাম ম-ল পেয়েছেন ২৮ হাজার ৬৮৭ ভোট। রাজশাহী-৬ আসনে মহাজোট প্রার্থী শাহরিয়ার আলম নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন এক লাখ ৯৭ হাজার ৪৬৬ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আবদুস সালাম সুরুজ হাতপাখা প্রতীকে পেয়েছেন ৭ হাজার ৮৪৬ ভোট। মহাজোটের বিজয়ীরা বলছেন, সরকারের উন্নয়নের কারণে মানুষ তাদের ভোট দিয়েছে। গত ১০ বছর তারা এলাকার উন্নয়ন করেছেন। মানুষ উন্নয়নের পক্ষে তাদের রায় দিয়েছে। এ ছাড়া নতুন প্রজন্ম আওয়ামী লীগের পক্ষ নিয়েছে। মহাজোটের প্রার্থী ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, দৃশ্যমান উন্নয়ন আর মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে রায় দিয়েছে মানুষ। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতিও একই সুরে কথা বলেছেন। রাজশাহীতে হ্যাটট্রিক জয়ের রেকর্ড গড়েছেন রাজশাহী-১ আসনের ওমর ফারুক চৌধুরী, রাজশাহী-২ আসনের ফজলে হোসেন বাদশা, রাজশাহী-৪ আসনের এনামুল হক ও রাজশাহী-৬ আসনের শাহরিয়ার আলম। দুবার বিজয়ী রাজশাহী-৩ আসনের আয়েন উদ্দিন। আর নতুন চমক রাজশাহী-৫ আসনের ডা. মনসুর রহমান। বিএনপির দুর্গ হিসেবে পরিচিত রাজশাহী। গত তিন সংসদ নির্বাচনে সেই দুর্গের বেহাল অবস্থা। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে বিএনপি মানুষের কাছ থেকে দূরে। এ ছাড়া সরকারের দৃশ্যমান উন্নয়ন মহাজোটকে বিজয়ী করেছে। রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক শাহ আজম শান্তনু বলেন, ২০০১ সালে বিএনপির যে অবস্থা ছিল, তারা মনে করে, এখনো সেই অবস্থা আছে।

কিন্তু গত ১৭ বছরে অনেক কিছু বদলে গেছে। বিএনপি সেই বদলে যাওয়ার সঙ্গে নিজেদের এগিয়ে নিতে পারেনি। ফলে তাদের এমন ভরাডুবি। রাজনৈতিক কৌশল আর নতুন ভাবনার সঙ্গে যুক্ত হতে না পারাকেও বিএনপির এমন ভরাডুবির জন্য দায়ী করেছেন এই রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক হাছানাত আলী মনে করেন, বিএনপির জনপ্রিয়তা আছে। তবে আইনের মারপ্যাঁচে পড়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ নেতা এবার প্রার্থী হতে পারেননি। ফলে এমন ভরাডুবি হয়েছে। তবে সাংবাদিক নেতা মামুন-অর-রশিদ জানান, গত ১০ বছর জনগণ থেকে বিএনপি অনেকটা বিচ্ছিন্ন ছিল। নেতায় নেতায় দ্বন্দ্ব, কর্মসূচি পালনে ব্যর্থ হওয়ায় জনগণ তাদের সঙ্গে থাকেনি। এ কারণে আবারও রাজশাহী অধরা বিএনপির কাছে।

সর্বশেষ খবর