শনিবার, ৫ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

বিনামূল্যের বই নিয়ে বাণিজ্য

অভিযোগ পেলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা: নাহিদ

আকতারুজ্জামান

বিনামূল্যের বই নিয়ে বাণিজ্য

উৎসব করে বছরের প্রথম দিনে সারা দেশে বিনামূল্যের বই বিতরণ করা হয়েছে। বই বিনামূল্যে বিতরণ করার নিয়ম থাকলেও দেশের বিভিন্ন স্থানে অনেক স্কুলে অর্থের বিনিময়ে বই দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। রীতিমতো বাণিজ্য করেছেন অনেক স্কুলের শিক্ষক ও পরিচালনা পর্ষদ সদস্যরা। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শতভাগ শিক্ষার্থী এখন পর্যন্ত বই পায়নি বলেও অভিযোগ। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে যাচ্ছে। সেজন্য অভিযুক্ত স্কুল ও শিক্ষকদের তালিকা তৈরি   করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র বলছেন, বিনামূল্যে বই বিতরণ সরকারের বড় এক সফলতা। সরকারের এ সফলতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতেই শিক্ষকদের কেউ কেউ বিনামূল্যের বই দিয়ে অর্থ আদায় করছেন। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘শতভাগ শিক্ষার্থীকে স্কুলে আনতে সরকার গত ১০ বছর ধরে বিনামূল্যে বই বিতরণ করে আসছে। নির্বাচনী ব্যস্ততা সত্ত্বেও সরকার এ শিক্ষাবর্ষে পয়লা জানুয়ারি ৩৫ কোটির বেশি বই বিনামূল্যে বিতরণ করেছে। কোনো শিক্ষক যদি বই বিতরণকে কেন্দ্র করে অর্থ আদায় করেন তবে অভিযোগ পেলে তার বিরুদ্ধে অবশ্যই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ প্রতিটি শিক্ষার্থী নতুন বই পাবে উল্লেখ করে নাহিদ আরও বলেন, কোনো ছাত্রছাত্রী অসতর্কতাবশত বই ছিঁড়ে ফেললেও সে নতুন বই পাবে। নাটোরের সিংড়ায় মহিষমারী উচ্চবিদ্যালয়ে টাকার বিনিময়ে ছাত্রছাত্রীদের বই দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্কুল ম্যানেজিং কমিটি ও প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। স্কুলের ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত ৪৫০ জন শিক্ষার্থীর প্রত্যেককে বই নিতে গুনতে হয়েছে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা। এমনকি টাকা দিতে না পারায় কয়েক শিক্ষার্থীকে বই দেওয়া হয়নি বলে জানা গেছে। লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার ভেলাবাড়ী উচ্চবিদ্যালয়ে সেশন ফি ও অগ্রিম কয়েক মাসের বেতন ছাড়া নতুন বই না দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ক্ষেত্রে যারা অগ্রিম বেতন ও সেশন ফি পরিশোধে ব্যর্থ হচ্ছে তাদের হাতে পৌঁছেনি নতুন বই। তারা বঞ্চিত হচ্ছে নতুন বই পাওয়ার আনন্দ থেকে। পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় খেপুপাড়া মডেল সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, খেপুপাড়া বালিকা বিদ্যালয়, মহিপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়, খেপুপাড়া নেছারউদ্দিন ফাজিল মাদ্রাসাসহ অন্তত ১০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নতুন বই বিতরণের ক্ষেত্রে অর্থ আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। নতুন ভর্তিসহ সেশন ফি বাবদ ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা নেওয়া হয়েছে উপজেলাটির বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানান, বই উৎসবের সময় অন্য কোনো পাওনাদিও আদায় করা নিষেধ রয়েছে। মাসিক বেতন ও সেশন চার্জের টাকা বই বিতরণের সময় নেওয়া যাবে না।

ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীতে মোড়লহাট জনতা উচ্চবিদ্যালয়ে বিনামূল্যের বই বিতরণে টাকা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। নতুন বইয়ের জন্য সেটপ্রতি প্রায় আড়াই শ টাকা নেওয়া হয়েছে এ স্কুলে। সেশন ফি বাবদ এ টাকা নেওয়া হয়েছে বলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। রাজধানীর গুলশানে অবস্থিত সরকারি কালাচাঁদপুর হাইস্কুলের অধিকাংশ শিক্ষার্থী নতুন বই পায়নি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বছরের প্রথম দিন অনেক শিক্ষার্থী বই আনতে প্রতিষ্ঠানে গেলে তাদের পরে বই দেওয়া হবে বলে ফিরিয়ে দেওয়া হয় এমন অভিযোগ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের। তবে এ অভিযোগের ব্যাপারে প্রতিষ্ঠানটির সহকারী প্রধান শিক্ষক এম এ রশিদ মিয়া বলেন, জাতীয় নির্বাচনের কেন্দ্র থাকায় শিক্ষার্থীদের বই দিতে বিলম্ব হয়েছে। শিক্ষার্থীদের জন্য বইয়ের কোনো স্বল্পতা নেই, সব শিক্ষার্থীকে বই দেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর