মঙ্গলবার, ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

অন্তঃসত্ত্বা ইউএনওকে ওএসডি সংসদে ক্ষোভ, তদন্ত দাবি

পয়েন্ট অব অর্ডারে শামীম ওসমান ও চুমকি

নিজস্ব প্রতিবেদক

অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার কারণে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হোসনে আরা বেগম বীণাকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করায় জাতীয় সংসদে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এমপিরা। এ সময় ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বি মিয়া নিজেও বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। গতকাল পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে প্রথমে এ বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে সংসদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন সাবেক মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি। পরে এ বিষয়ে বক্তব্য দেন নারায়ণগঞ্জ সদরের এমপি শামীম ওসমান। মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, ‘হোসনে আরা বেগম বীণা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছিলেন। তার সহকর্মীরা তার কাজের প্রশংসা করেন। মা হওয়ার আকাক্সক্ষা একজন নারীর চিরন্তন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে আজ নারীর ক্ষমতায়নের মডেল। সেখানে একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, একজন নির্বাহী কর্মকর্তা, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি দায়িত্বে আছেন। তিনি যদি সেই দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে থাকেন তাহলে শুধু     সন্তানসম্ভবা বলে তাকে কেন ওএসডি করা হলো? বিষয়টি আমাদের কাছে ক্লিয়ার (স্পষ্ট) নয়। বিষয়টি স্পর্শকাতর।’ এ ঘটনা তদন্তে একটি বিভাগীয় কমিটি গঠনের দাবি জানান তিনি। এ সময় শামীম ওসমান ফ্লোর নিয়ে বলেন, ‘এ ঘটনার জন্য আমি অত্যন্ত দুঃখিত ও লজ্জিত। ওই সময় আমি ওমরায় ছিলাম। আমার নির্বাচনী এলাকা হিসেবে আমি সার্টিফায়েড করতে চাই- ওই কর্মকর্তা অত্যন্ত কর্মঠ ও যোগ্য ছিলেন। নির্বাচনের সময় অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার কারণে নির্বাচনী দায়িত্ব পালনে কষ্ট হবে বলে তাকে আমি অন্য জায়গায় বদলি হয়ে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিলাম। তিনি রাজি না হয়ে বলেছিলেন, কাজ করতে পারলেই তিনি ভালো থাকবেন।’ তিনি বলেন, ‘এই নারী আমার বোনের মতো। এ ঘটনা আমার এলাকায় হওয়ায় আমিও প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছি। কেন, কীভাবে তাকে ওএসডি করা হলো তা জানতে চাই। আশা করি জনপ্রশাসনমন্ত্রী এ ব্যাপারে সংসদে বক্তব্য দেবেন। তাকে কেন ওএসডি করা হলো তা তদন্ত করে বের করুন। আমি আল্লাহর কাছে দোয়া করি তার বাচ্চাটা যেন হায়াত দারাজ করেন। বাচ্চাটার যদি কিছু হয় আমি নিজেকেও ক্ষমা করব না।’ এরপর ডেপুটি স্পিকার বলেন, ‘আশা করি জনপ্রশাসনমন্ত্রী এ ব্যাপারে বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।’

প্রসঙ্গত অন্তঃসত্ত্বা হওয়ায় ৪ ফেব্রুয়ারি হোসনে আরা বেগম বীণাকে ওএসডি করা হয়েছে। এরপর ৮ ফেব্রুয়ারি রাতে বীণা তার ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়ে বিষয়টি নজরে আনেন। তার সন্তান প্রসবের সম্ভাব্য তারিখ ২০ এপ্রিল। ৪ ফেব্রুয়ারি বিকালে রেগুলার চেকআপ করার সময় খবর পান কর্তৃপক্ষ তাকে ওএসডি করেছে। তার অপরাধ তিনি সন্তানসম্ভবা। খবর শোনার পর তিনি মানসিক চাপ সহ্য করতে পারেননি। অ্যাজমার রোগী হওয়ায় প্রচণ্ড মানসিক চাপে তার ফুসফুসে ব্লাড সার্কুলেশন অস্বাভাবিকভাবে কমে যায়। এতে তার পেটের সন্তানের অক্সিজেন সাপ্লাই বন্ধ হয়ে যায় এবং হঠাৎ করেই পেটের সন্তানের নড়াচড়া বন্ধ হয়ে যায়। এরপর তৎক্ষণাৎ হাসপাতালে ভর্তি হয়ে ৩১ সপ্তাহ বয়সী প্রি-ম্যাচিউর বেবিকে সিজার করে বের করে ফেলা হয়। বর্তমানে সে স্কয়ার হাসপাতালের এনআইসিওতে বেঁচে থাকার জন্য প্রাণপণ যুদ্ধ করে যাচ্ছে।

 

সর্বশেষ খবর