রবিবার, ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

বসবাস গ্রামে, নিজের অজান্তে তারা শহুরে ভোটার

রাহাত খান, বরিশাল

তারা বসবাস করছেন পটুয়াখালী জেলার বিভিন্ন গ্রামে। ভোটারও হয়েছেন গ্রামে। নিজ এলাকার ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিয়েছেন বিভিন্ন নির্বাচনে। কিন্তু ৩০ ডিসেম্বর সংসদ নির্বাচনে ভোট দিতে গিয়ে দেখেন, ভোটার তালিকায় নাম নেই। জানতে গিয়ে দেখেন, শহরের এমন জায়গায় তারা ভোটার হয়ে গেছেন যেখানে বাস করা দূরে থাক, জীবনে কোনো দিন যানওনি। শুধু তাই নয়, নতুন ভোটার আইডি নম্বরও হয়ে গেছে এরকম ৭ হাজার নর-নারীর। বিস্ময়-বিমূঢ় এই ভোটারদের প্রশ্ন, কেন তাদের সঙ্গে করা হলো এই প্রতারণা?

সাবিত্রী-বেল্লাল-মানিকদের কাহিনী : সদর উপজেলার মাদারবুনিয়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর হাজীখালী গ্রামের দুই সন্তানের জননী সাবিত্রী রানী (৩০)। এতকাল বিভিন্ন নির্বাচনে মাদারবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট (আইডি নম্বর-৭৮১৯৫৬৭১৯৯০৭৬) দিয়েছেন। কিন্তু একাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোট দিতে গিয়ে জানতে পারেন কেন্দ্রের ভোটার তালিকায় তার নাম নেই। তার ভোট স্থানান্তর (মাইগ্রেট) হয়েছে পটুয়াখালী পৌর শহরের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ আরামবাগ (শাহাপাড়া) এলাকায়। জাতীয় নির্বাচনে ভোট দিতে পারেননি তিনি। অথচ তার স্বামী দিনমজুর কালু চন্দ্র ধুপী মাদারবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের ভোটার এবং বিগত জাতীয় নির্বাচনেও  ওই কেন্দ্রে ভোট দিয়েছেন তিনি। সাবিত্রী রানীর অভিযোগ, ত্রাণের সাহায্য পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে একই এলাকার ২ যুবক কবির ও বেল্লাল এক বছর আগে তার জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে যায়। কিছুদিন পর কার্ডটি ফেরত দেয় তারা। গ্রামের ভোটার তালিকায় নাম না থাকায় সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সহায়তা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন তিনি। পরে সাবিত্রী খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, পটুয়াখালী পৌরসভার দক্ষিণ আরামবাগ (শাহাপাড়া) এলাকায় তার নতুন ভোটার আইডি নম্বর-২৮১৩৭৭৭২৯৫। সাবিত্রী বলেন, তিনি কোনো দিন পৌরসভার শাহাপাড়ায় যাননি, এমনকি শাহাপাড়া চেনেনও না। তিনি ভোটার স্থানান্তরের আবেদনও করেননি, কেউ তার স্বাক্ষরও নেয়নি। সাবিত্রীর পরিচয়পত্র নিয়ে কিছুদিন পর ফেরত দিয়েছিলেন যে মো. কবির, তাকে মুঠোফোনে (০১৭১২১৭৮৭৯২) ফোন দেওয়া হলে প্রথমে স্বীকার করেন তিনিই কবির। সাবিত্রীর বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, কবির টয়লেটে গেছে। এরপর একাধিকবার কবিরের মুঠোফোনে কল দেওয়া হলেও তিনি আর ফোন রিসিভ করেননি। সাবিত্রীর মতো একই বাড়ির মায়া রানীর (এনআইডি নম্বর-৬৪১৩৭৭৪৫৯৪) ভোট স্থানান্তর হয়েছে পৌরসভার পশ্চিম আরামবাগ (শাহাপাড়া), পারুল বালার (এনআইডি নম্বর-১৪৩৭৭২৭৬২) ভোটার স্থানান্তর হয়েছে পৌরসভার ৪নম্বর ওয়ার্ডের সবুজবাগ প্রথম লেন (শাহাপাড়া) এবং হরিদাসসহ একই বাড়ির ১৫ জনের ভোট স্থানান্তর (মাইগ্রেট) করে পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডে নেওয়া হয়েছে। পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক মো. মতিউল ইসলাম চৌধুরী বলেন, গতকাল বিকাল পর্যন্ত এ ধরনের একটি অভিযোগও তিনি পাননি। যে কারণে এসব অভিযোগ তিনি যাচাই-বাছাই করতে পারেননি। এ বিষয়ে কেউ যদি তার কাছে অভিযোগ করে তাহলে ভোটারদের তাদের পছন্দের জায়গায় স্থানান্তরসহ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর