মঙ্গলবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

ধর্মীয় বিশেষ দিনে খোলা যাবে না মদের বার

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে আসছে নতুন বিধিমালা

আনিস রহমান

অ্যালকোহলের বিক্রয় ও ব্যবহার সম্পর্কে নতুন করে একটি বিধিমালা তৈরি করছে সরকার। যাতে শুক্রবারসহ সব ধর্মীয় বিশেষ দিনে বার বা অফ শপ ও দেশি মদের দোকান বন্ধ রাখা, দেশি ও বিদেশি মদ, বিয়ার বা এই জাতীয় অ্যালকোহলের বোতলে ‘মদ্যপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর’ কথাগুলো লাল কালিতে লেখা থাকা ব্যতীত মদ্যপান দ-নীয় অপরাধ, একই ব্যক্তির নামে দেশি ও বিদেশিদের লাইসেন্স না দেওয়া, লাইসেন্সপ্রাপ্ত মদ বিয়ার বা এই জাতীয় মাদকদ্রব্যের দোকান, বার বা ক্লাবে কোনো রকম বিনোদনমূলক সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড  পরিচালনা না করা এবং ২১ বছরের নিচে কারও কাছে অ্যালকোহল বিক্রি না করার বিধিবিধান আরোপ করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৮ আলোকে নতুন বিধিমালার খসড়া তৈরি করেছে সরকার। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, অ্যালকোহলের ব্যবহার ও বিক্রয়ের বিষয়ে সুষ্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতেই এই বিধিমালা তৈরি করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর সূত্রে পাওয়া তথ্য ও বিধিমালার খসড়া থেকে জানা গেছে, দেশে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন থাকলেও এই আইন কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবে বিশেষ করে অ্যালকোহলের বিষয়ে কোনো সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা ছিল না। এ কারণে সরকার অ্যালকোহল জাতীয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি বিধিমালা প্রণয়ন করতে যাচ্ছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গঠিত একটি কমিটি বিধিমালার খসড়াটি তৈরি করেছে। যাতে তারা বিভিন্ন বিষয়ে নানা মত দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই বিধিমালার মাধ্যমে মূলত মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন পাস হওয়ার পর এখন কীভাবে তা বাস্তবায়ন করা হবে সে বিষয়ে দিকনির্দেশনা থাকবে এই বিধিতে। খসড়া বিধিমালার একেবারে শেষ ধারায় বলা হয়েছে, সাপ্তাহিক বন্ধের দিন শুক্রবারে বার/অফ শপ ও দেশি মদের দোকান বন্ধ থাকবে। তাছাড়া মহররম, শবে বরাত, ঈদে মিলাদুন্নবী, শবে কদর, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা এবং সরকার কর্তৃক সময়ে সময়ে নির্ধারিত দিনে বার বা অফ শপ ও দেশি মদের দোকান বন্ধ থাকবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, অ্যালকোহল নিয়ন্ত্রণ বিধিমালায় কোনো ধরনের প্রতিষ্ঠানে কতটি বিলাতি মদ বা বিলাতি মদ জাতীয় পানীয়র বার বা অফ শপ লাইসেন্স দেওয়া যাবে এমন ধারায় বলা হয়েছে উপযুক্ততা ও বাস্তবতার নিরীখে দুই তারকা মানসম্পন্ন হোটেলে একটি বার লাইসেন্স, তিন তারকা মানসম্পন্ন হোটেলে সর্বোচ্চ তিনটি, চার তারকা হোটেলে চারটি, পাঁচ তারকা হোটেলে সাতটি (ততোধিক বারের প্রয়োজন হলে তার যৌক্তিকতা প্রমাণ সাপেক্ষে মন্ত্রণালয়ের অনুক্রমে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে)। পর্যটন বা কূটনৈতিক এলাকার রিসোর্টে একটি বার, রেস্টুরেন্টে একটি, বার ক্লাবে একটি বারের লাইসেন্স দেওয়া যেতে পারে। তবে কোনো ব্যক্তির নামে একাধিক বার লাইসেন্স দেওয়া হবে না। তবে ওই ব্যক্তি একাধিক কোম্পানির শেয়ার হোল্ডার হলে তার ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য হবে না। খসড়ার একটি ধারায় স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, কারা বা প্রতিষ্ঠান বার বা অফ শপ লাইসেন্স পাওয়ার জন্য আবেদন করতে পারবে। ওই ধারায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশ হোটেল ও রেস্তোরাঁ (নিবন্ধন লাইসেন্স ও নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাদেশ ১৯৮২ এবং বাংলাদেশ হোটেল ও রেস্তোরাঁ (নিবন্ধন, লাইসেন্স ও নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা ১৯৮৬ এর আওতায় লাইসেন্সপ্রাপ্ত ও পরিচালিত হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট এবং রেস্টুরেন্ট মালিক আবেদন করতে পারবেন।

এ ছাড়া সোসাইটি রেজিস্ট্রেশন অ্যাক্ট ১৮৬০ ও কোম্পানি আইন ১৯৯৪-এর অধীনে রেজিস্ট্রেশনকৃত ক্লাবের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বা ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবেদন করতে পারবেন। অফ শপের ক্ষেত্রে যে কোনো বাংলাদেশি নাগরিক লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে পারবেন। খসড়ার অষ্টম ধারায় বলা হয়েছে, একই ব্যক্তির নামে একই মেয়াদে বিলাতি মদ এবং দেশিী মদের পারমিট ইস্যু করা যাবে না। নবম ধারায় বলা হয়েছে, মদ বা মদজাতীয় পানীয় আমদানির অনুমতি কোনো অবস্থায় প্রদত্ত লাইসেন্সের বরাদ্দের অতিরিক্ত হবে না এবং প্রত্যেকবার আমদানির আগে মহাপরিচালকের অনুমতি নিতে হবে।

খসড়ার ৫৫ ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে, প্রত্যেক দেশি মদ ও বিলেতি মদ, বিয়ার বা এই জাতীয় মাদকদ্রব্যের বোতল মোড়ক বা পাত্রের গায়ে ‘মদ্যপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর’ ‘আইনের বিধান ব্যতীত মদ্যপান দ-নীয় অপরাধ’ কথাগুলো লাল কালিতে সুস্পষ্টভাবে মুদ্রিত থাকতে হবে। লাইসেন্সপ্রাপ্ত মদ বিয়ার বা এই জাতীয় মাদকদ্রব্যের দোকান বার বা ক্লাবে কোনো রকম বিনোদনমূলক সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা যাবে না। অ্যালকোহলে সেবনের ক্ষেত্রে যাদের পারমিট দেওয়া যেতে পারে ওই ধারায় বলা হয়েছে, দুই প্রকারের পারমিট ইস্যু করা যাবে।

এক, অ্যালকোহল বা মদ্যজাতীয় পানি পানের জন্য পারমিট ও দুই অ্যালকোহলের বৈধ মাদকদ্রব্যের ব্যবহার ও প্রয়োগের পারমিট। এতে আরও বলা হয়েছে, ২১ বছরের নিচের কাউকে মদ্যপানের জন্য কোনো পারমিট দেওয়া যাবে না। বিদেশি নাগরিক, অমুসলিম ব্যক্তি, চা-বাগানের শ্রমিক, সুইপার, মুচি, মেথর, ডোম, ধাঙর বা এ জাতীয় পেশার ব্যক্তিদের মদ বিয়ার বা এই জাতীয় মাদকদ্রব্য পান করার পারমিট দেওয়া যেতে পারে।

অ্যালকোহল পরিবহনের ক্ষেত্রে খসড়ার ৫৭ ধারায় বলা হয়েছে, পরিবহন পাস ছাড়া যে কোনো বৈধ মাদকদ্রব্য এক স্থান থেকে অন্য স্থানে বহন বা পরিবহন করা যাবে না।  আর মহাপরিচালকের কাছ থেকে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ছাড়া অন্য কেউ পরিবহন পাস ইস্যু করতে পারবেন না।

বিধিমালা সম্পর্কে জানতে চাইলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. জামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, যে কোনো আইন বাস্তবায়ন করতে গেলে বিধিমালার প্রয়োজন। সেই প্রয়োজনীয়তা থেকেই আমরা অ্যালকোহলের বিক্রয় ও ব্যবহার সম্পর্কে বিধিমালা প্রণয়ন করছি। এ জন্য কয়েকটি কমিটির মাধ্যমে প্রস্তাবনা নিয়ে এখন খসড়া তৈরি করা হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর