বৃহস্পতিবার, ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

বসিলায় উচ্ছেদ আরও ৪৯ স্থাপনা

বুড়িগঙ্গা দখলমুক্ত অভিযান অব্যাহত

নিজস্ব প্রতিবেদক

নদীর সীমানা নির্ধারণ করতে ‘আমিন মোমিন হাউজিংয়ের’ ভিতরেই প্রাচীরের পাশে একটি বাঁশের খুঁটি পুঁতে রাখা হয়েছে। তার মাথায় লাল ফিতা। সেদিকে নজর অনেকের। সামনে ইটের সড়ক। তার সামনে পুরোটাই নদীর জায়গা দখল করে গড়ে উঠেছে আরও কয়েকটি হাউজিং। এর মধ্যে গ্রিন সিটি-২ নামে একটি হাউজিংয়ের দখলে কয়েক একর জমি। গতকাল রাজধানীর বসিলায় বুড়িগঙ্গা নদীতীরের এই জমিতেই উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে আরও ৪৯টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)।

গতকাল সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত সেখানে থেকে দেখা যায়, প্রভাবশালীদের বাধা উপেক্ষা করে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান চলছে। গতকাল ছিল চতুর্থ ধাপে তৃতীয় দিনের অভিযান। এ সময় বুলডোজার দিয়ে একের পর এক অবৈধ স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। বেলা ২টা পর্যন্ত একে একে ৪৫টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে বিআইডব্লিউটিএ। এ নিয়ে গত ১৯ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া এই অভিযানে এক হাজার ৮৩০টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হলো। গতকালের অভিযানে গুঁড়িয়ে দেওয়া সবচেয়ে বড় স্থাপনাটি ছিল একটি বিশাল কনস্ট্রাকশন স্টোর। সেখানে ‘দ্য বিল্ডার্স ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েট লি.’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের লোহা ও স্টিলের বিভিন্ন সরঞ্জাম রাখা হয়েছিল। প্রতিষ্ঠানটির মালিকপক্ষের প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমানের সামনেই ওই গুদাম বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছিল। তিনি প্রাথমিকভাবে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা এখানে ১০ কাঠা জমি কিনেছি গ্রিন সিটি-২ নামের হাউজিং প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে। প্রতি কাঠার দাম পড়েছে ২৫ লাখ  টাকা। ১০ কাঠা জমি কিনতে দিতে হয়েছে আড়াই কোটি টাকা। নদীর জমি কেন কিনেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগে বুঝিনি। জমির মালিক বলেছিলেন বৈধ জমি। দলিলসহ সব কাগজপত্র ঠিক আছে। কিন্তু এখন দেখছি কিছুই ঠিক নেই। গ্রিন সিটির সঙ্গে বসে এর সুরাহা করবেন বলে জানান তিনি। ওই সময় জানা গেল, গ্রিন সিটির কাছ থেকে জমি কিনে একতলা, দোতলা বাড়ি করেছেন অনেকে। সেসব স্থাপনা ভেঙে ফেলা হয়েছে অভিযানে। কথিত ওই মালিকরাও বলেন, তারা আগে বোঝেননি যে নদীর জমি। বুঝলে এই জমি কোনোভাবেই তারা কিনতেন না। তারাও প্রতি কাঠা জমি ২৫ লাখ টাকা করে কিনেছেন। টাকা উদ্ধার নিয়ে তারা মহাদুশ্চিন্তায় আছেন। বিআইডব্লিউটিএ সূত্র জানায়, অভিযানের সময় গ্রিন সিটি-২-এ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ছাড়াও অভিযানে তিন হাজার ফুট দেয়াল ভাঙার পাশাপাশি ১৩টি ইটের স্তূপ অপসারণ করা হয়। এর আগে গত মঙ্গলবার ওই এলাকায়ই একটি ১০ তলা ভবনসহ অন্যান্য অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে গিয়ে বাধার সম্মুখীন হয়ে উচ্ছেদ অভিযান সাময়িক বন্ধ করা হয়েছিল। তবে অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া বিআইডব্লিউটিএর যুগ্ম পরিচালক এ কে এম আরিফ উদ্দিন বলেন, “গতদিন (মঙ্গলবার) বাধা পেলেও অনেক স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। গতদিন যেখান থেকে অভিযান স্থগিত করা হয়েছিল আজ (বুধবার) সেখান থেকেই অভিযান শুরু করে আরও ৪৯টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। অভিযান অব্যাহত থাকবে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এ অভিযান চলছে। কোনো বাধায়ই এটা রোধ করা যাবে না।”

সর্বশেষ খবর