সোমবার, ৪ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

ভোগান্তি কমেছে নারী ও পরিবহন শ্রমিকদের

আধুনিক টয়লেট

জিন্নাতুন নূর

লাল-হলুদ রঙের একতলা ভবনটি সবুজ লোহার বেষ্টনী দিয়ে ঘেরা। এর চারপাশে লাগানো হয়েছে গাছের চারা। ছিমছাম ভবনটি নগরের আধুনিক টয়লেটের। এর একপাশে পুরুষ অন্যপাশে নারী ব্যবহারকারীদের জন্য আলাদা টয়লেট। দেখতে আধুনিক আর ভিতরের পরিবেশও বেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। নেই দুর্গন্ধ। আছে টয়লেট শেষে ব্যবহারের জন্য পর্যাপ্ত পানি। রয়েছে প্রতিবন্ধী নারীদের জন্য টয়লেট ব্যবহারের সুব্যবস্থা। নারী-পুরুষের জন্য গোসল করার ব্যবস্থাও আছে ঢাকার আধুনিক টয়লেটে। পুরুষদের জন্য সেখানে আছে আলাদা ওজুখানাও। কেউ চাইলে এখানে এসে ফিল্টারে ফোটানো বিশুদ্ধ পানিও পান করতে পারবেন। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ ও অ্যাকশন এইড ঢাকার আধুনিক এই টয়লেটগুলো নির্মাণ করায় পাবলিক টয়লেট নিয়ে ঢাকাবাসীর যে অস্বস্তি ছিল এর অনেকটাই এখন দূর হয়েছে। বিশেষ করে প্রতিদিন বিভিন্ন প্রয়োজনীয় কাজে ঘর থেকে বের হওয়া নানা বয়সী নারী ও পরিবহন শ্রমিকদের টয়লেট নিয়ে যে ভোগান্তি ছিল, তা অনেকটাই কমে এসেছে। মিরপুর ১২ নম্বর (বাস ডিপো) পাবলিক টয়লেটটি আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয় গত বছর ডিসেম্বরে। টয়লেটটিতে গিয়ে দেখা যায়, নারীদের জন্য কাপড় বদলানোর আলাদা কক্ষ, গোসল করার কক্ষ ছাড়াও দুটি হাই কমোডযুক্ত টয়লেট এবং দুটি নিচু কমোডযুক্ত টয়লেট। এর বাইরে প্রতিবন্ধী নারীদের জন্য হাতলের সুবিধাযুক্ত টয়লেট ব্যবহারের ব্যবস্থা আছে। এই টয়লেটে আসা কেউ সঙ্গে বহনকারী ব্যাগ বা মোবাইল ফোন চাইলে লকারে রেখে প্রয়োজনীয় কাজ সারতে পারেন। আছে বিশুদ্ধ পানি পান করার জন্য গ্লাসসহ ফিল্টারের ব্যবস্থা। আর ছেলেদের টয়লেটে দুটি প্রস্রাবখানা, চারটি টয়লেট ছাড়াও আছে ওজু করার ব্যবস্থা। টয়লেটের দায়িত্বে থাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মী রবিউল ইসলাম ও নুরুন্নাহার  জানান,  প্রতিদিন ভোর ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত এই টয়লেট খোলা থাকে। লকারসহ টয়লেট ব্যবহার করতে চাইলে ১০ টাকা আর সাধারণ টয়লেটের জন্য শুধু পাঁচ টাকায় যে-কেউ ব্যবহার করতে পারেন। গড়ে প্রতিদিন আড়াই শ পুরুষ এবং ২০ জনের বেশি নারী এই টয়লেট ব্যবহার করেন। পুরুষদের মধ্যে বিভিন্ন পেশাজীবী, শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা ছাড়াও সবচেয়ে বেশি এই টয়লেট ব্যবহার করেন যানবাহন শ্রমিকরা। আর নারীদের মধ্যে বিভিন্ন কর্মজীবী ও শিক্ষার্থীরা টয়লেট ব্যবহার করে থাকেন। কথা হলে বেসরকারি এনজিও কর্মকর্তা শাহনাজ বেগম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘শহরে নারীবান্ধব টয়লেট নেই। দেরিতে হলেও সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ নারীদের এই সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নিয়েছে। এতে আমার মতো বিভিন্ন বয়সী নারী, যাদের প্রতিনিয়ত প্রয়োজনীয় কাজে ঘরের বাইরে যেতে হয়, তাদের ভোগান্তি কমেছে।’ মিরাজ মিয়া নামে মিরপুর-মতিঝিলগামী বেসরকারি একটি বাস কোম্পানির চালক বলেন, ‘পরিবহন শ্রমিকদের সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ডিউটি করতে হয়। কিন্তু আমাদের টয়লেট করার জন্য কোনো ব্যবস্থা ছিল না। শহরে নতুন এই টয়লেট তৈরি করায় পরিবহন শ্রমিকদের বেশ সুবিধা হয়েছে।’ ২০১৭ সালে ডিএনসিসি এলাকায় ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৭০টি আধুনিক টয়লেট নির্মাণের প্রকল্প অনুমোদন দেয় একনেক। চলতি বছরের জুনে এসব টয়লেট নির্মাণের কাজ শেষ হওয়ার কথা। ডিএনসিসির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (পরিবেশ, জলবায়ু ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সার্কেল) ড. তারিক বিন ইউসুফ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ডিএনসিসি এলাকায় আমরা মোট ১০০টি আধুনিক টয়লেট নির্মাণের টার্গেট নিয়েছি। তবে টয়লেট নির্মাণের জমির ব্যবস্থা করাই মূল সমস্যা। এ বছর জমি পাওয়া সাপেক্ষে আরও ৩০টি টয়লেট নির্মাণ করতে পারব বলে আশা করছি। এই টয়লেট ব্যবহারে নারী ও বিভিন্ন পরিবহন শ্রমিকদের সুবিধার বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, ভবিষ্যতে যখন আরও অনেক সংস্থা এই টয়লেট নির্মাণে এগিয়ে আসবে, তখন এর রক্ষণাবেক্ষণ খরচও কমবে। এতে সেবা গ্রহণে অর্থের পরিমাণও কমে আসবে। তখন পথচারীরা এটি ব্যবহারে আরও উৎসাহিত হবেন।

সর্বশেষ খবর