শিরোনাম
বুধবার, ৬ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

বিচার না পেয়ে হতাশ যশোরের মানুষ

উদীচী ট্র্যাজেডির ২০ বছর

নিজস্ব প্রতিবেদক, যশোর

আজ ৬ মার্চ, উদীচী ট্র্যাজেডির ২০তম বার্ষিকী। ১৯৯৯ সালের এদিন মধ্যরাতে যশোর শহরের টাউন হল মাঠে উদীচীর দ্বাদশ জাতীয় সম্মেলনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ভয়াবহ বোমা হামলায় নিহত হয়েছিলেন ১০ জন সাংস্কৃতিক কর্মী। আহত হন শতাধিক মানুষ। গত দুই দশকেও নৃশংস এ হত্যাযজ্ঞের বিচার না পাওয়ায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন যশোরের সাংস্কৃতিক কর্মীরা। তাদের অভিযোগ, উদীচী হত্যাযজ্ঞ মামলায় দুর্বল তদন্তের কারণে ২০০৬ সালের ৩০ মে খালাস পেয়ে যান ওই মামলার সব আসামি। ২০১০ সালে উদীচী ও ২০১১ সালে সরকারের পক্ষ থেকে এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হলে তা গৃহীত হয় এবং সেই থেকে মামলাটি পরবর্তী আদেশের জন্য অপেক্ষমাণ রয়েছে। ২০০৬ সালে খালাস পাওয়া ২৩ আসামির মধ্যে পাঁচজন ইতিমধ্যে মারা গেছেন। ১৭ জন আসামি উচ্চ আদালতের নির্দেশে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করে ২০১১ সালের ২৪ জুলাই থেকে জামিনে আছেন। একজন আসামি মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছেন। উদীচী ট্র্যাজেডিতে পা হারানো সাংস্কৃতিক কর্মী সুকান্ত দাস বলেন, ‘অদ্ভুত ব্যাপার! এত বড় একটা ঘটনা ঘটে গেল, একজন মানুষকেও বিচারের আওতায় আনা গেল না। এ মামলাটা এখন কোর্টে আছে কিনা, তাও আমরা জানি না। এটা নিয়ে প্রশাসনের, সরকারের কারও মাথাব্যথা আছে বলেও আমরা লক্ষ্য করি না। আদৌ উদীচী হত্যাকান্ড ঘটেছিল কিনা, তা নিয়েই এখন আমরা সংশয়ে পড়ে গেছি।’ সুকান্ত বলেন, ‘শুরুর দিকে এ ঘটনার বিচার দাবিতে সাংস্কৃতিক কর্মীদের মধ্যে যে একতা ছিল এখন তাও দেখছি না। সবাই নিজের স্বার্থ নিয়ে ব্যস্ত। সারা দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গন সুরক্ষিত রাখার জন্য উদীচী হত্যাকান্ডের বিচার অপরিহার্য ছিল। কিন্তু সেই বিচার আমরা পাইনি। এটা আমাদের যেমন ব্যর্থতা, দেশের সচেতন মানুষের ব্যর্থতা, এ দেশের প্রশাসন, যারা এ দেশের সরকারে ছিলেন, তাদের ব্যর্থতা।’ ক্ষোভের সঙ্গে সুকান্ত বলেন, ‘আমরা সবসময় উদীচী হত্যাকান্ড সহ পরবর্তীতে সংঘটিত সব হত্যাকান্ডের বিচার চেয়েছি। অনেক পরে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটলেও তার বিচার দ্রুত হয়ে গেছে। এটা খুবই ভালো হয়েছে। তবে আমরা কি দেশের কেউ নই? আমরা সরকারের কাছে জোরালো দাবি জানাচ্ছি, উদীচী হত্যাকান্ডের যদি সুষ্ঠু বিচার করতে চান, বিচার কার্যটা শুরু করেন। আমরা হতাশ। এ হতাশা কাটানোর দায়িত্ব সরকারের।’ উদীচী হত্যাকান্ডে নিহত তপনের বোন নাজমুন সুলতানা বিউটি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ১০ বছর ক্ষমতায় ছিল। আবারও ক্ষমতায় এসেছে। আমরা সরকারের কাছে উদীচী হত্যাকান্ডের বিচার দাবি করছি। আমার মা এখনো বেঁচে আছেন। মরার আগে ছেলের হত্যাকারীদের বিচার দেখে যেতে চান তিনি।’ সাংস্কৃতিক কর্মী যশোর শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাহমুদ হাসান বুলু বলেন, ‘২০ বছরেও এ হত্যাকান্ডের বিচার হয়নি। যেভাবে এ মামলাটার তদন্ত হয়েছে, যেভাবে মামলাটা উপস্থাপিত হয়েছে, তাতে মনে হয় বিচারের নামে প্রহসন হয়েছে। এসব ঘটনায় আমরা আহত, মর্মাহত এবং বিক্ষুব্ধ।’ সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট যশোরের সাবেক সভাপতি হারুন-অর-রশিদ বলেন, ‘আমরা যশোরের সাংস্কৃতিক কর্মীরা ক্ষুব্ধ এবং শঙ্কিত। ২০ বছর আগে সন্ত্রাসবাদীরা উদীচী হত্যাকান্ড দিয়ে সারা দেশে হত্যাকান্ড শুরু করে। সাংস্কৃতিক কার্যক্রম বন্ধ করা তাদের উদ্দেশ্য ছিল, এটা সবাই জানে। আমরা জানি, পুলিশ যদি ইচ্ছা করে তাহলে যে কোনো ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন করতে পারে। কিন্তু এখনো তারা করছে না, এর মানে হলো সরকারের সদিচ্ছা নেই।’

যশোরের পাবলিক প্রসিকিউটর রফিকুল ইসলাম পিটু বলেন, ‘যশোরের মানুষ হিসেবে আমরাও চাই উদীচী হত্যাকান্ডের বিচার হোক। বিষয়টি যেহেতু উচ্চ আদালতে শুনানির অপেক্ষায় আছে, আমি ব্যক্তিগতভাবে অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে যোগাযোগ করে দ্রুত শুনানির ব্যবস্থা করতে অনুরোধ জানাব। অ্যাটর্নি জেনারেল তৎপর হলে মামলাটির শুনানি হবে এবং বিচারে আসবে।’

সর্বশেষ খবর