জাতীয় বাজেটের সঙ্গে সাধারণ মানুষের সম্পৃক্ততা বাড়াতে চান অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ কাজের জন্য নীতিনির্ধারকদের সর্বোচ্চ সহায়তা চেয়েছেন তিনি। এ জন্য সরকারি হিসাব সম্পর্কিত, সরকারি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত, অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত, খাদ্য, ত্রাণ, কৃষি, সমাজকল্যাণ, প্রবাসীকল্যাণ, বাণিজ্যসহ প্রায় সব সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান ও সদস্যদের সঙ্গে ১৪ মার্চ বৈঠক ডেকেছেন অর্থমন্ত্রী। বৈঠকের বিষয়বস্তু নির্ধারণ করা হয়েছে, বাজেটের সুফল কীভাবে প্রান্তিক মানুষের কাছে পৌঁছানো যায় এবং বাজেটের সঙ্গে জনসম্পৃক্ততা কীভাবে আরও বাড়ানো যায়। বাজেটকে শুধু কাগুজে দলিল হিসেবে না দেখে সমাজ ও দেশ গঠনে বাস্তবতার নিরিখে কীভাবে আরও বেশি কার্যকর করা যায় সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবার পরামর্শ চাওয়া হয়েছে। মূলত এ বৈঠকের মধ্য দিয়েই নিয়ম অনুযায়ী প্রাক্্-বাজেট আলোচনা শুরু হতে যাচ্ছে। ৪ মার্চ অর্থ বিভাগের সচিব আবদুর রউফ তালুকদার স্বাক্ষরিত এক চিঠির সূত্র ধরে এসব তথ্য জানা গেছে। ওই চিঠির কপি সেদিনই বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, এনবিআর চেয়ারম্যান, সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সচিব, ইআরডি সচিব, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব, অর্থমন্ত্রীর দফতরসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠানো হয়েছে। সূত্র জানায়, অনুষ্ঠেয় ওই বৈঠকে বাজেটের মূল বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হবে। বাজেটের সঙ্গে জনসম্পৃক্ততা বৃদ্ধির কৌশলও নির্ধারণ করা হবে। এর জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও মন্ত্রণালয়গুলোর কাছে লিখিত প্রস্তাবও চাওয়া হয়েছে, যা পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সমন্বয় করা হচ্ছে। তবে বাজেট প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সব সময় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) একটা বড় ভূমিকা থাকে। কেননা বাজেটের প্রায় সব ধরনের প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান করে এনবিআর। এ জন্য এনবিআরকে কীভাবে আরও কার্যকর করা যায় সে বিষয়েও সংশ্লিষ্টদের কাছে পরামর্শ চাওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। ১৪ মার্চের বৈঠকে এসব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। এদিকে অর্থ বিভাগের অপর একটি সূত্র জানায়, ২০২১ সালের আগেই দেশের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি দুই অঙ্কে নেওয়ার পরিকল্পনা করছে সরকার। এ জন্য তিন বছর মেয়াদি আগাম বাজেট পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও মানবসম্পদ উন্নয়নকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। সর্বশেষ গত অর্থবছরে ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। চলতি বছর এটা সাড়ে ৮ শতাংশের কাছাকাছি এবং ২০২১ সালের মধ্যেই জিডিপির এই হার দুই অঙ্কে উন্নীত হবে বলে আশা করছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বাজেট ব্যবস্থাপনা ও সম্পদ কমিটির সর্বশেষ বৈঠকে আগামী অর্থবছরের বাজেটের একটি রূপরেখা তৈরি করা হয়েছে। এতে আগামী অর্থবছরের বাজেটের আকার প্রাক্কলন করা হয়েছে ৫ লাখ ২৪ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা, যা এ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা বা সাড়ে ১৩ শতাংশ বেশি। চলতি অর্থবছরের বাজেটের আকার ধরা রয়েছে ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরের বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বা এডিপির আকার প্রস্তাব করা হচ্ছে এক লাখ ৯৮ হাজার ৪০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে এ খাতে ১ লাখ ৭৩ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় ২০২১-২০২২ অর্থবছরের বাজেটের আকার ছয় লাখ কোটি টাকার কাছাকাছি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।