রবিবার, ১০ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

ফাইলচাপায় চাঞ্চল্যকর সব মামলা

উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় বাদী উৎসাহিত অপরাধী

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

প্রায় তিন বছর আগে ২০১৬ সালের ৫ জুন ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে চট্টগ্রাম নগরীর জিইসির মোড়ে খুন হন সাবেক এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু। এর এক মাসের মধ্যেই খুনে সরাসরি অংশ নেওয়া ও অস্ত্র সরবরাহের অভিযোগে সাতজনকে করা হয় গ্রেফতার। পুলিশের ভাষ্য মতে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন খুনে সরাসরি অংশ নেওয়া রাশেদ ও নবী। দেশের চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডের প্রায় তিন বছর হলেও এখনো গ্রেফতার করতে পারেনি অভিযুক্ত মাস্টারমাইন্ড কামরুল ইসলাম ওরফে মুছা সিকদার ও কালুকে। পুলিশ জানতে পারেনি ঘটনার প্রকৃত ‘ক্লু’। অথচ এ ঘটনায় ব্যবহৃত অস্ত্র মামলার চার্জশিট শেষে বিচার কার্য শুরু করেছে আদালত। অথচ মিতু খুনের মামলাটিই তিন বছর ধরেই স্থির রয়েছে এক জায়গায়। পুলিশ দিতে পারেনি মামলার চার্জশিট। এভাবে চট্টগ্রাম নগরের এক ডজনের বেশি চাঞ্চল্যকর মামলা বছরের পর বছর ধরে ফাইল চাপায় রয়েছে। মামলার বাদী ও নিহতদের পরিবারের অভিযোগ আসামিদের রক্ষায় পুলিশ ধামাচাপা দিয়ে রেখেছে মামলার ফাইল। চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার মাহাবুবর রহমান বলেন, ‘চাঞ্চল্যকর মামলাগুলোর তদন্ত দ্রুত সময়ের মধ্যে শেষ করা হবে। এর ধারাবাহিকতায় শিগগির চার্জশিট দেওয়া হবে মিতু ও অঞ্জলি রানী দেবী হত্যা মামলার।’

অভিযোগ রয়েছে আলোচিত প্রায় সব মামলার মূল হোতাদের সিংহভাগই প্রভাবশালী। তাদের রয়েছে রাজনৈতিক ছত্রছায়া। তাই হোতাদের রক্ষা করতেই পুলিশ মামলার তদন্ত ফাইল বন্দী অবস্থায় রেখেছে। এ ছাড়া কিছু কিছু মামলা সিএমপির আলোচিত মামলার মনিটরিং সেলের তদারকির অভাবে থমকে আছে তদন্ত। সিএমপির আলোচিত মামলাগুলোর তদারকি সেলের প্রধান ও অতিরিক্ত কমিশনার (অপারেশন ও ক্রাইম) আমেনা বেগম এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘প্রায় তিন বছর ধরেই এক জায়গায় স্থির মামলার তদন্ত। তদন্তের গতি দেখে মনে হচ্ছে মারা যাওয়ার আগে মিতু হত্যার বিচার দেখে যেতে পারব না। এ মামলার তদন্তে পুলিশের ভূমিকা সন্তোষজনক নয়।’ যদিও সম্প্রতি  আইজিপি জাবেদ পাটোয়ারী চট্টগ্রামে এক অনুষ্ঠানে দ্রুত সময়ের মধ্যে এ মামলার তদন্ত কাজ শেষ করতে পুলিশকে নির্দেশ দেন। অপরাধ বিশ্লেষকদের অভিযোগ, চট্টগ্রামে চাঞ্চল্যকর মামলার গতি থমকে থাকায় অপরাধীরা নতুন করে অপরাধ সংঘটনে উৎসাহিত হচ্ছে। এতে করে চট্টগ্রামে ঘটছে একের পর এক খুন, অপহরণসহ নানা অপরাধমূলক ঘটনা। সিএমপির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ২০১২ সালে নগরীতে ৮৮ জন খুন হয়। এর পরের ছয় বছর লাশ পড়েছে ৯২, ১১৮, ১০২, ৯০, ৭০ এবং ৭৫টি। এ বছরের প্রথম দুই মাসে খুন হয়েছেন ৯ জন।

২০১৫ সালের ১০ জানুয়ারি খুন হন নার্সিং কলেজের শিক্ষিকা অঞ্জলি রানী দেবী। এ ঘটনায় অজ্ঞাতপরিচয় যুবকদের আসামি করে পাঁচলাইশ থানায় মামলা করা হয়। বর্তমানে মামলাটি তদন্ত করছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। খুনের চার বছর পার হলেও এখনো মামলাটি ক্লুবিহীন অবস্থায়। পুলিশ গ্রেফতার করতে পারেনি খুনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের। ২০১৭ সালের ৬ অক্টোবর নগরীর নালাপাড়ার বাসা থেকে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয় নগর ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক সুদীপ্ত বিশ্বাসকে। এ ঘটনা চট্টগ্রামসহ সারা দেশে আলোচিত হয়। ওই সময় খুনের মদদদাতাদের  গ্রেফতারে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও  সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের পুলিশ প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। বর্তমানে এ খুনের নেপথ্য হোতারা এখনো রয়েছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। পুলিশ মামলার দায়সারা চার্জশিট দিলেও আদালত তা গ্রহণ না করে পুনরায় তদন্তের নির্দেশ দেন। দীর্ঘ সময় ধরে ফাইল বন্দী হয়ে পড়ে আছে চট্টগ্রামের আলোচিত স্কুলছাত্রী ইলহাম বিনতে নাছির, স্কুলছাত্র আদনান ইসফারসহ অন্তত এক ডজন আলোচিত হত্যা মামলা।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর