মঙ্গলবার, ১২ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

ডাকাত-ছিনতাইকারীর দখলে মহাসড়ক

ঢাকা-ময়মনসিংহের ১২ কিলোমিটারজুড়ে আতঙ্ক

শেখ সফিউদ্দিন জিন্নাহ্

ডাকাত-ছিনতাইকারীর রাজত্ব এখন ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে। মহাসড়কটির আবদুল্লাহপুর-টঙ্গী থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার এলাকা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ডাকাত ও ছিনতাকারীরা। এই পথে যানজটে আটকে থাকা সাধারণ মানুষের ওপর হঠাৎ ডাকাত-ছিনতাইকারীদের হামলায় সর্বস্ব খোয়াতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। যানজট, জলজটের সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হওয়া ছিনতাই-ডাকাতির ঘটনা শুধু মহাসড়কেই ঘটছে তা নয়। আশপাশের বাসা-বাড়িতেও এখন ডাকাতদের উৎপাত বেড়েছে। মহাসড়কের রাজেন্দ্রপুর চৌরাস্তা, ন্যাশনাল পার্ক গেট, মাস্টারবাড়িসহ কয়েকটি এলাকায়ও ঘটছে ছিনতাই-ডাকাতির ঘটনা। শিল্পনগরী গাজীপুর-টঙ্গীতে এখন ডাকাতি-ছিনতাইয়ের ঘটনায় মহাসড়কে দায়িত্বে থাকা পুলিশ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ভুক্তভোগীদের দাবি, পুলিশের সামনেই ছিনতাই, ডাকাতির ঘটনা ঘটলেও এগিয়ে আসেন না পুলিশ। এতে মহাসড়কের এই পথটুকু এখন যাত্রীদের গলার কাঁটায় পরিণত হয়েছে। ঘটে যাওয়া এসব ছিনতাই-ডাকাতির ঘটনায় থানায় অভিযোগ দিতে গেলে চুরির অভিযোগ দিতে হয় বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এবং গোয়েন্দা প্রধান ড. রুহুল আমিন সরকার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, গাজীপুর-টঙ্গী শিল্পনগরী জনবহুল শহর। আর এ কারণে একটা-দুটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটছে। তবে ইতিমধ্যে আমরা ২৮৫ জন ছিনতাইকারীকে আটক করে বিভিন্ন মামলায় আদালতে পাঠিয়েছি। আমরা শিগগিরই ছিনতাইকারী গ্রেফতারে বিশেষ অভিযান চালাব। তিনি বলেন, জনবহুল এই গাজীপুরে বিভিন্ন দূরপাল্লার গাড়ি এসে রাতে অবস্থান নেয়। এসব দূরপাল্লার গাড়ির হেলপাররা সংঘবদ্ধ হয়ে ছিনতাইসহ নানা অপরাধ করে আসছে। অপরদিকে গাজীপুরের পোড়াবাড়ী র‌্যাব-১-এর কোম্পানি কমান্ডার আবদুল্লাহ আল মামুন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার জন্য সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি এলাকায় অভিযান চালিয়ে ছিনতাইকারীদের গ্রেফতারও করা হয়েছে। রাজধানী ঢাকার সঙ্গে উত্তরাঞ্চলের যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক। আর এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন লাখো মানুষ রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াত করছে। রাজধানীঘেষা টঙ্গী, গাজীপুরে রয়েছে হাজারো শিল্প কারখানা। আর এসব শিল্পকারখানায় পণ্য বহনকারী বড় বড় ট্রাক-লরি ও যাত্রীবাহী বাসের চাপে প্রতিনিয়ত লেগে থাকে যানজট। মহাসড়কের এপাশ-ওপাশ যেতে যখন তখন ইউটার্ন করে যানজটের ভয়াবহতা আরও বেশি দেখা দেয়। পাশাপাশি সড়ক উন্নয়ন কাজের কারণেও সড়কে এখন নিত্যদিনের সঙ্গী যানজট। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হয় যাত্রীদের। এই সুযোগে সংঘবদ্ধ ডাকাত-ছিনতাইকারী দল ঝাঁপিয়ে পড়ে সাধারণ মানুষের ওপর। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি রাতে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক কবির আহমেদ খানের গাড়িতে একদল ছিনতাইকারী হামলা করে লুটে নেয় সর্বস্ব। জানা গেছে, মহাসড়কের টঙ্গী থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত প্রতিদিন এমন ছিনতাই-ডাকাতির ঘটনা ঘটলেও পুলিশ কোনো কার্যকর প্রদক্ষেপ নেয়নি। থানা পুলিশের ছত্রছায়ায়ই নাকি এসব ঘটছে, এমন অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। মহাসড়কে চলাচলকারী যাত্রীবাহী বাস বা নিজস্ব গাড়ি জ্যামে আটকা পড়লেই দিনদুপুরে মোবাইল, স্বর্ণালঙ্কার ছিনিয়ে নেওয়া হয়। সড়কের দুই পাশে ঘাপটি মেরে বসে থাকা ছিনতাইকারীরা যখনই জ্যামে গাড়ি আটকা পড়ে তখনই সুযোগ বুঝে হামলা চালায়। সম্প্রতি টঙ্গীর ভাদাম এলাকার গার্মেন্ট ব্যবসায়ী শরিফ আহম্মেদ মুকুলের ব্যবহৃত গাড়ি থামিয়ে ধারালো অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে দামি মোবাইল ফোন ও নগদ প্রায় এক লাখ টাকাসহ কিছু সেম্পল প্যান্ট ছিনিয়ে নেয়। এ সময় ওই গাড়ির চালককে ছুরিকাঘাত করা হয়। টঙ্গী পূর্ব থানার সামনের সড়ক থেকে টঙ্গী এলাকার বাসিন্দা রিতা রানী ঘোষ নামের এক গৃহবধূ যানজটে আটকা পড়লে অস্ত্র দেখিয়ে নগদ টাকাসহ স্বর্ণালঙ্কার লুটে নেয়।

গৃহবধূ রিতা রানীর স্বামী মিঠু ঘোষ বলেন, যানজটে আটকা পড়লে আমার স্ত্রীকে অস্ত্র দেখিয়ে একদল ডাকাত টাকা-পয়সা, স্বর্ণালঙ্কার লুটে নেয়। আমি থানায় অভিযোগ দিতে গেলে পুলিশ চুরির মামলা দিতে বলে। এমনই ঘটনা ঘটে টঙ্গী এলাকার পার্ল প্রিন্স গার্মেন্ট সুইং অপারেটর দেবাশিস বিশ্বাসেরও। বেতনের টাকা নিয়ে গার্মেন্ট থেকে বাসায় ফেরার পথে সন্ধ্যার দিকে কয়েকজন ছিনতাইকারী ছোরা, চাপাতি দেখিয়ে টাকা, মোবাইল লুটে নেয়। গাজীপুরা সাতাইশ এলাকার থ্রেড ভয়েল লি. কোম্পানির মালামালসহ মহাসড়কের মিলগেট এলাকায় একটি কাভার্ড ভ্যান যানজটে আটকা পড়ে। ওই সুযোগে ছিনতাইকারী-ডাকাত দল গাড়িতে সামনে এসে এক লাখ টাকা দাবি করে। ৩০ হাজার টাকা দিলেও গাড়িটি ছাড়েনি ওই ডাকাত দল। এ ঘটনায় টঙ্গী পূর্ব থানায় অভিযোগ করলে পুলিশ গাড়িটি উদ্ধার করতে পারলেও কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক টঙ্গীর গাজীপুরা এলাকার এক ব্যবসায়ী বলেন, ছিনতাইকারী-ডাকাতদের উৎপাতে আমরা অতিষ্ঠ। প্রতিদিন এই রাস্তায় একটা না একটা ঘটনা ঘটছেই। ছিনতাই বা ডাকাতির ঘটনায় থানায় মামলা দিতে গেলে চুরির মামলা নিতে প্রভাবিত করে পুলিশ। এমন অভিযোগ করলেন, মহসিন নামের এক গার্মেন্ট ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, গত বুধবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে জরুরি প্রয়োজনে মাওনা যাওয়ার পথে ভোগড়া বাইপাস এলাকায় গাড়ি জ্যামে আটকা পড়ে। আর এ সময় কয়েকজন আমার গাড়ির সামনে এসে দেশীয় অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে আমার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন, টাকা লুটে নেয়।

সর্বশেষ খবর