মনুষ্যজীবন চিরতরে অন্তর্হিত হলে তা চাইলেও আর ফেরত পাওয়া যায় না। আর সেই যাওয়াটা যদি হয় অকালে অপঘাত-দুর্ঘটনায় তবে শোকবিহ্বল স্বজনরা কিছুতেই সান্ত্বনা খুঁজে পান না। নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন ট্র্যাজেডির এক বছর আজ। সেদিন স্বামীহারা স্ত্রীর আহাজারি, পুত্রহারা মায়ের হাহাকার, সন্তানহারা পিতার আর্তনাদ বড় বেদনার্ত করে দিয়েছিল সবাইকে। গত বছরের ১২ মার্চ ছিল এক ভয়াল দিন। এই দিনে নেপালে বিমান বিধ্বস্ত হয়ে মারা যান অনেক যাত্রী। তাদের পরিবারে এখন শোকের মাতম। কথা বলতে গেলে কান্না ছাড়া আর কোনো কথাই নেই সেদিনের ঘটনার। ভাগ্যক্রমে প্রাণে বেঁচে যাওয়া যাত্রীরা ভুলতে পারেনি সেই ভয়াবহতা। এদিন কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন বিমানবন্দরে বিধ্বস্ত ইউএস-বাংলা বিমানের ক্যাপ্টেন ছিলেন আবিদ সুলতান। তার সঙ্গে কো-পাইলট হিসেবে ছিলেন পৃথুলা রশিদ। দুর্ঘটনায় তারা দুজনসহ বিমানের মোট ৫১ জন যাত্রী এবং ক্রু নিহত হন। ২০ জন প্রাণে বেঁচে গেলেও তাদের অনেকের আঘাত ছিল গুরুতর। নিহতদের মধ্যে ২৭ জন ছিলেন বাংলাদেশি নাগরিক। আর ৯ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। নিহতদের একজন বৈশাখী টেলিভিশনের সাংবাদিক ফয়সাল আহমেদ। ঘটনার ১০ দিন পর লাশ দেশে এনে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে সরকার। গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুরের ডামুড্যায় নিজ বাড়ির আঙিনায় তাকে সমাহিত করা হয়। ছেলের মৃত্যুর এক বছর পার হলেও মায়ের কান্না থামেনি। বৃদ্ধ বাবার বুকেও রয়েছে ছেলে হারানোর চাপা কষ্ট। বিধ্বস্ত বিমানের পক্ষ থেকে ৫০ হাজার ইউএস ডলার সহায়তা পেয়েছিল ফয়সালের পরিবার। এরপর এক বছরে আর কেউ পরিবারের খোঁজখবর নেয়নি। ফয়সাল আহমেদ ছিলেন তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে দ্বিতীয় আর ভাইদের মধ্যে বড়। তার উপার্জনে তখন চলত সংসার। কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছেন বাবা সামসুদ্দিন সরদার। ফয়সালের অকাল মৃত্যু এখনো মেনে নিতে পারেননি স্বজন ও স্থানীয়রা।