বুধবার, ২৭ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

মশারির লাঠি নিয়ে ভাষণ শুনতে গিয়েছিলাম : সিইসি

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা জানিয়েছেন, বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে লাখ লাখ মানুষের মধ্যে তিনিও ছিলেন। সেদিন মশারি টানানোর লাঠি নিয়েই ভাষণ শুনতে গিয়েছিলেন সিইসি। গতকাল রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের আলোচনায় তিনি এসব কথা জানান। স্বাধীনতাযুদ্ধে যাওয়ার প্রস্তুতির স্মৃতিচারণা করে সিইসি বলেন, ‘যাদের বয়স ’৭১ সালে ১৮ থেকে ২২ ছিল, তারা স্বাধীনতাকে কীভাবে দেখেছিলেন? স্বাধীনতা অর্জনে কীভাবে প্রস্তুতি নিয়েছিলেন? কীভাবে তাদের মধ্যে সংগ্রামী চেতনার উন্মেষ ঘটেছিল? ’৭১-এ যারা যুবক ছিলেন, তারা প্রত্যেকেই নিজের অবস্থান থেকে স্বাধীনতা অর্জনের পথে কোনো না কোনো ভূমিকা রেখেছেন। ৩ মার্চ ’৭১-এ অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করা হয়। ওই দিন ছিল ঢাকা স্টেডিয়ামে ক্রিকেট খেলা। ইয়াহিয়ার ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে সমস্ত দেশ বিক্ষোভে ফেটে পড়েছিল। আমার ওই দিন মাস্টার্সের ব্যবহারিক পরীক্ষা (ঢাবি) ছিল। আমরাও পরীক্ষা রেখে রাস্তায় নেমে আসি।’

তিনি বলেন, ‘৭ মার্চের ভাষণে রেসকোর্স ময়দানে (সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) আমরা কেউ মশারি টানানোর লাঠি, কেউ বাঁশ নিয়ে ছুটে যাই। আমি মশারি টানানোর লাঠি খুলে নিয়ে গিয়েছিলাম। ভেবে ভালো লাগে যে, সেখানে যে লাখ লাখ মানুষ ছিল, তার মধ্যে আমিও ছিলাম।’ সিইসি বলেন, ‘রাতে আমার এক স্যারের সঙ্গে দেখা করে বললাম, বঙ্গবন্ধু তো দিকনির্দেশনা দিয়ে দিয়েছেন, এখন কী করব? স্যার বললেন, ঢাকা শহর কারও জন্য নিরাপদ নয়, তুমি বরং গ্রামে চলে যাও।’

তিনি বলেন, ‘আমি ফরিদপুরের এক বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে গ্রামের দিকে রওনা হই। গ্রামে পৌঁছে দেখি, সব তরুণ, যুবা, কৃষক-শ্রমিক-জনতা, সবার মধ্যেই যুদ্ধে যাওয়ার প্রস্তুতি। আমরা শুধু মনোবল সঙ্গী করে বাঁশের লাঠিকে রাইফেল আকারে ধরে যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নেওয়া শুরু করি। আসলে তখন দেশের সবাই একজন যোদ্ধা। এ দেশের নদী-নালা, খাল-বিল, গাছপালাও ছিল স্বাধীনতার পক্ষে। ওরা (পাক হানাদার বাহিনী) সাঁতার জানত না। ফলে নদী পার হতে পারত না। ওরা গাছে উঠতে পারত না। আমাদের গেরিলা বাহিনীর সদস্যরা তালগাছের ওপর বসেও তাদের আক্রমণ করত। এভাবে পুরো মুক্তিযুদ্ধটা জনযুদ্ধে রূপান্তরিত হয়।’

‘স্বাধীনতা মানে একটা নির্বাচন’ : আলোচনা সভায় নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমার কাছে স্বাধীনতা মানে একটা নির্বাচন (’৭০ সালের নির্বাচন)। ৭ মার্চ সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালির মহাকাব্য, স্বাধীনতাযুদ্ধ আর ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগ।’

নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম বলেন, ‘স্বাধীনতা মানে কেবল একটি পতাকা নয়। স্বাধীনতা মানে শহীদদের আত্মত্যাগ, মা-বোনদের সম্ভ্রম হারানো। আর এই হারানোর বেদনাটা আমাদের লজ্জার নয়, গর্বের।’

অনুষ্ঠানে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, ‘আমাদের সৌভাগ্য, আমাদের সিইসি একজন সম্মুখযোদ্ধা। নির্বাচন কমিশনার রফিকুল স্যার তরুণ যোদ্ধা, মাহবুব তালুকদার স্যার একজন অন্যতম সংগঠক। এ রকম একটি কমিশন আমরা পেয়েছি, এজন্য আমরা গর্বিত। আমি তখন চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র। ফলে মুক্তিযুদ্ধে যেতে পারিনি। মুক্তিযুদ্ধকে আমিও একটি জনযুদ্ধ হিসেবে বিবেচনা করি।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর