রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক এবং গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ভবনগুলোতে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ক্ষতচিহ্ন। গত কয়েকদিন শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের আড়ালে সরকারি স্থাপনা টার্গেট করে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে শত শত গাড়ি। লুটপাট করা হয়েছে কম্পিউটার, টেলিভিশন, ল্যাপটপসহ গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র। গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার ঘুরে এসব ক্ষতচিহ্ন দেখা যায়।
রামপুরায় বাংলাদেশ টেলিভিশন ভবনের যে দিকেই চোখ যায়, শুধু তান্ডবের ক্ষতচিহ্ন। পুড়ে ছাই হয়েছে মোটরসাইকেল, গাড়িসহ প্রোডাকশন সেট। টিভি ভবন ঘুরে দেখা যায়, মূল ফটকের ডান পাশে ২০-২৫টি পোড়া গাড়ি কঙ্কাল হয়ে পড়ে রয়েছে, বাম পাশে সারি সারি পোড়া মোটরসাইকেল। এ ছাড়া ক্যান্টিন ভবন, প্রোডাকশন সেট, অভ্যর্থনা কক্ষ ও সম্প্রচারের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। মহাখালী দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের পুরো ১০ তলা ভবন পুড়ে গেছে। ভবনের নিচে জেনারেটর, সার্ভার স্টেশনসহ সম্পূর্ণ ফ্লোরই আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভবনের সামনে রাস্তার পাশে পড়ে আছে পোড়া ছয়টি মাইক্রোবাস ও প্রাইভেটকার। আর ভবনের সামনে থাকা ১৫টি গাড়ি ও বেজমেন্টে থাকা ৩০টির বেশি গাড়িসহ সব মিলিয়ে ৫৮টি গাড়ি ভস্মীভূত হয়েছে। নিচ তলায় থাকা ৪০০ কোটি টাকার সার্ভার (ডেটা সেন্টার) আগুনে পুরে ছাই হয়ে গেছে। একই সঙ্গে দুর্যোগের ইমার্জেন্সি রেসপন্স কো-অর্ডিনেশন পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আনসার ক্যাম্প ও বিদ্যুতের সাব-স্টেশন পুরোপুরি পুড়ে গেছে। সবমিলিয়ে ৫০০ কোটি টাকার বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আবদুল ওয়াদুদ। আগুনে পুড়ে বীভৎস হয়ে দাঁড়িয়ে আছে মহাখালীর সেতু ভবন। ১২ তলা ভবনটির ছয় তলা পর্যন্ত দুষ্কৃতকারীদের দেওয়া আগুনে পুড়ে গেছে। ভবনের মূল ফটক দিয়ে ঢুকতেই দেখা যায়, আগুনে পুড়ে যাওয়া সারি সারি গাড়ির কঙ্কাল দাঁড়িয়ে আছে। এমনভাবে পুড়েছে গাড়ির রেজিস্ট্রেশন নম্বরও দেখা যায় না। মোট ৫৫টি গাড়িসহ এসি, কম্পিউটার, ইলেক্ট্রনিক লাইন, আসবাবপত্র পুড়েছে। বাদ যায়নি ক্যান্টিন, আনসার ক্যাম্প, ড্রাইভারদের বিশ্রামাগারও। লুটপাট করা হয় কম্পিউটার, টেলিভিশন, ল্যাপটপ ও আসবাবপত্র। যাত্রাবাড়ী এলাকা ঘুরে দেখা যায়, কোথাও রাস্তার পিচ পুড়ে গর্ত হয়ে গেছে। ভাঙাচোরা সড়ক বিভাজকগুলো পড়ে আছে যত্রতত্র। রাস্তার এক পাশে পড়ে রয়েছে পুড়ে যাওয়া বাসের কঙ্কাল, অন্য পাশে ট্রাক। সেই ট্রাকের কঙ্কালকে সড়কের মাঝ থেকে রেকারে বেঁধে টেনে নিয়ে রাস্তা পরিষ্কার করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
রামপুরায় দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে ধ্বংসযজ্ঞে পরিণত হয়েছে রামপুরা ব্রিজ-সংলগ্ন পুলিশ বক্স। ভিতরে থাকা চেয়ার-টেবিল, খাতাপত্রসহ সবকিছুই পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এ ছাড়া পুলিশের ১৫টি মোটরসাইকেল ও একাধিক ভ্যান পুড়িয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। এদিকে মালিবাগ রেলগেট থেকে আবুল হোটেল হয়ে রামপুরা পর্যন্ত ডিআইটি অ্যাভিনিউতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে গত কয়েক দিনের আন্দোলন ও সংঘর্ষের বিভিন্ন ক্ষতচিহ্ন। সড়কের পাশে কোথাও উপড়ে ফেলা রোড ডিভাইডার। পড়ে আছে ইটের টুকরা।
উত্তরায় দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে বাস র?্যাপিড ট্রানজিট প্রকল্পের (বিআরটি) জন্য আনা এস্কেলেটরগুলো (চলন্ত সিঁড়ি) পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এখানে হাউজ বিল্ডিং থেকে বিএনএস পর্যন্ত রাস্তার পাশে পড়ে আছে অন্তত ১৫টি এস্কেলেটর। ভিতরে থাকা মটরসহ আনুষঙ্গিক প্রায় সবকিছুই আগুনে পুড়ে গেছে। ফ্লাইওভারের ওপরে সারিবদ্ধ এস্কেলেটরগুলোর ধ্বংসাবশেষ দেখা গেছে।
এ ছাড়া ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন অঞ্চল ৩ ও ৪-এ দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে সিটি করপোরেশনের ৩২টি গাড়ি পুড়ে যায়। আরও ১৭টি গাড়িকে ভাঙচুর করা হয়। এসব গাড়ির অধিকাংশই বর্জ্য ব্যবস্থাপনার। বাকিগুলো পিকআপ, ট্রাক ও প্রাইভেটকার রয়েছে।