দেশব্যাপী কয়েক দিনের অস্থিরতায় যোগাযোগব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন থাকায় দক্ষিণাঞ্চলের খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট থেকে ৪০-৫০টি কনটেইনার চিংড়ি সময়মতো শিপমেন্ট (জাহাজীকরণ) করা যায়নি। ওই সময় ইন্টারনেট সচল না থাকায় বিদেশি ক্রেতাদের সঙ্গেও যোগাযোগ হয়নি। সময়মতো চিংড়ি রপ্তানি করতে না পারায় এ শিল্পে ভয়াবহ রকমের ধস নেমেছে। সেই সঙ্গে ব্যাংক ঋণের সুদ, কর্মচারীদের বেতন ও বিদ্যুৎ বিলও বাড়ছে। সব মিলিয়ে এই খাতে ক্ষতি হয়েছে ১০০ কোটি টাকারও বেশি।
খুলনা মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা লিপটন সরদার জানান, চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর দিয়ে গত ১০ দিনে চিংড়ির যেসব কনসাইনমেন্ট ইউরোপে যাওয়ার কথা ছিল তা শিপমেন্ট করা যায়নি। ফলে আবারও ক্ষতির মুখে পড়েছেন চিংড়ি রপ্তানিকারকরা।
আছিয়া সি ফুডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তরিকুল ইসলাম জহির জানান, ১৯ ও ২০ জুলাই তার প্রতিষ্ঠানের ছয়টি কনটেইনার চিংড়ি শিপমেন্ট হওয়ার কথা ছিল। এর মধ্যে দুটি শিপমেন্ট করা গেছে। বাকি চার কনটেইনার অর্থাৎ প্রায় ৮ কোটি টাকার এক্সপোর্ট আটকে গেছে। বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসেসিয়েশনের পরিচালক এস হুমায়ুন কবীর বলেন, ৪০-৫০টি কনটেইনারের মতো চিংড়ি জাহাজীকরণ করতে পারিনি। এটা হয়তো করতে পারব, তার জন্য সময় লাগবে কিন্তু জাহাজ তো এরই মধ্যে চলে গেছে। নতুন আরেকটা জাহাজ আসবে। সেখানে ১৫ দিন থেকে এক মাস সময় পিছিয়ে যাব। এ জন্য আমাদের অতিরিক্ত ব্যাংক ঋণের সুদ দিতে হবে। এমনও হতে পারে বিদেশি ক্রেতা শিপমেন্টটা বাতিল করতে পারে। সব মিলিয়ে ১০০ কোটি টাকার বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছি। জানা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দক্ষিণাঞ্চল থেকে চিংড়ি রপ্তানি হয় ১৪ হাজার ৪৫১ মেট্রিক টন। যার বাজার মূল্য প্রায় ১ হাজার ৭৪৪ কোটি টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে চিংড়ি রপ্তানি হয় ১৯ হাজার ৯০৫ মেট্রিক টন। যার বাজার মূল্য ২ হাজার ৪১২ কোটি টাকা। মৎস্য কর্মকর্তারা বলছেন, করোনা পরিস্থিতি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ অবস্থা কাটিয়ে চিংড়ি রপ্তানি কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু গত কয়েক দিনের অচলাবস্থায় আবারও ক্ষতির মুখে পড়েছেন রপ্তানিকারকরা।
খুলনা মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা উপ-পরিচালক মনিরুল ইসলাম বলেন, আমরা রপ্তানিকারক, বিদেশি ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে সংকট কাটিয়ে ওঠা ও রপ্তানির ধারাবাহিকতা বজায় রাখার চেষ্টা করছি।