খুলনার বিভিন্ন বাজারে দুই সপ্তাহ আগেও ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ২১০-২২০ টাকা কেজি দরে। কিন্তু শিক্ষার্থীদের আন্দোলন এবং কারফিউর সময় যোগাযোগবিচ্ছিন্ন ও অধিকাংশ বাজার বন্ধ থাকায় ব্রয়লার মুরগি বিক্রি করতে হয়েছে ১৭০-১৮০ টাকায়। একইভাবে কক ২২০-২৫০ থেকে কমে ১৯০ ও সোনালি মুরগি ২৪০-২৫০ থেকে কমে ১৯০-২০০ টাকায় বিক্রি হয়। মুরগি উৎপাদন খরচের থেকেও কেজিতে ৩০-৫০ টাকা কম দরে বিক্রি করতে হয়েছে। একইভাবে খামারে প্রতিটি ডিম উৎপাদনে ১০-১১ টাকা ব্যয় হলেও অনিশ্চয়তার মুখে ৮-৯ টাকায় ডিম বিক্রি করেছেন খামারিরা। এভাবে কোটা আন্দোলন পরিস্থিতিতে আর্থিক ক্ষতিতে পড়েছেন খুলনা বিভাগের প্রায় ৫২ হাজার খামারি। জানা যায়, কারফিউ শিথিলের পর গত বুধবার থেকে বাজার কিছুটা স্বাভাবিক হলেও এখনো পথে পথে উৎপাদিত ডিম ও মুরগি বাজারজাতকরণে বাধার মুখে পড়ছেন খামারিরা। খুলনা পোলট্রি ফিশ ফিড মালিক সমিতির মহাসচিব সোহরাব হোসেন জানান, জরুরি পরিষেবা হিসেবে পোলট্রি খাত বিবেচিত হলেও নানাভাবে পুলিশ হয়রানি করে। তিনি বলেন, আন্দোলনের কারণে মুরগি ও ডিমের বাজার অস্থির হয়ে পড়েছে। খামারিদের বড় ধরনের বেসিক ক্ষতি হয়ে গেছে। খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় পোলট্রি খামারিরা একই ধরনের ক্ষতিতে পড়েছেন। জানা যায়, খুলনা জেলায় ৪ হাজার ৯৫২ খামারে ৫০ লাখের মতো ব্রয়লার, কক ও সোনালি মুরগি রয়েছে। এখানে প্রতিদিন ডিম উৎপাদন হয় ৪ লাখের মতো। প্রতিটি ডিম গড়ে ২-৩ টাকা কম দরে বিক্রিতে গত ১০ দিনে শুধু খুলনা জেলায় ক্ষতির পরিমাণ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। ব্রয়লার, কক ও সোনালি মুরগি বিক্রিতে ক্ষতির পরিমাণ আরও কয়েক গুণ।
শেখপাড়া বাজারের মুরগি ব্যবসায়ী মো. হোসেন জানান, অবরোধের সময় মুরগি ও ডিম পরিবহনে সমস্যা হয়েছে। এ ছাড়া বাজারে ক্রেতাও তেমন ছিল না। ফলে অনেক মুরগি অবিক্রীত থেকে যায়। আবার অনেক খামারি কম বা নামমাত্র মূল্যে মুরগি বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন। খামারিরা জানান, এমনিতেই ডিম-মাংসের সঠিক দাম পাওয়া যায় না।
তার পরও মুরগির খাদ্যের দাম প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। ফলে চলমান পরিস্থিতি পোলট্রি খাতে আরেকটা ঝাঁকুনি দিল। খুলনা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘মাঝেমধ্যেই পরিস্থিতি অনুযায়ী ডিম-মুরগি ন্যায্যদামে বিক্রির ব্যবস্থা করা হয়। খামারিদের বিষয়টা আমাদের বিবেচনায় আছে। এ বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হবে।’