আওয়ামী লীগের টানা তিন মেয়াদের শাসনামলে চট্টগ্রামের পাড়ায় পাড়ায় নেতা-কর্মীদের দেখা যেত। অভাব ছিল না নেতা-কর্মীর। মূল দল ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের কমিটিতে শত শত পদ সৃজন করে তৈরি করা হয় অসংখ্য নেতা। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের সঙ্গে সঙ্গে হাজার হাজার নেত-কর্মীর কাউকেই দৃশ্যপটে দেখা যাচ্ছে না। নেই দলীয় কর্মসূচি। শোক দিবসেও চোখে পড়েনি কোনো আয়োজন। নেতারা কোথায় আছেন, জানেন না কর্মীরা। জানা গেছে, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চট্টগ্রাম নগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলার আওয়ামী লীগ, যুবলীগসহ অন্যান্য অঙ্গসহযোগী সংগঠনের শত শত নেতা পালিয়ে গেছেন। এদের মধ্যে যারা দুর্নীতিবাজ, প্রভাব বিস্তারকারী হিসেবে পরিচিত তাদের হদিস একেবারেই মিলছে না। তবে যারা অপেক্ষাকৃত জনপ্রিয় ও জনবান্ধব নেতা ছিলেন তাদের অনেকে নিজ বাসাবাড়িতে আছেন। তবে প্রকাশ্যে আসছেন না।
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, ‘যারা মানুষের সঙ্গে অন্যায় করেছে, তারা পালিয়ে থাকা স্বাভাবিক। কিন্তু সবাই তো অন্যায় করেনি। সারা দেশের যে পরিস্থিতি, সবার মধ্যে অজানা আতঙ্ক বিরাজ করছে। পর্যবেক্ষণ করছি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে দেখি কী করা যায়।’
দলের সুসময়ে নেতা বনে হাইব্রিড তকমা পাওয়া অনেক নেতাকে এই পরিস্থিতিতে দেখাই যাচ্ছে না। উধাও হয়ে গেছে তাদের কর্মী-সমর্থকরাও। যেসব নিবেদিত কর্মী-সমর্থক বিভিন্ন নেতার পেছনে রাজনীতি করেছেন, তাদের নেতারাও উধাও। খোঁজখবর নিচ্ছেন না নিবেদিত কর্মীদের। ফলে নিজেদের মতো করে নিরাপদে থেকে পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করছেন আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের এসব নেতা-কর্মী।
জানতে চাইলে নগর আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতার অনুসারী এক নেতা নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করে বলেন, ‘উনারা (নেতা) নিজেরাও তো বেকায়দায়। কীভাবে খবর নেবেন। আমি কখনোই কারও সঙ্গে অন্যায় করিনি। রাজনৈতিক প্রভাব দেখাইনি। সুতরাং ভয় পাওয়ার কোনো কারণও নেই। তবে নেতারা খবর নিলে কর্মীদের মনোবল কিছুটা হলেও বাড়ে।’
এদিকে চট্টগ্রাম নগর, উত্তর ও দক্ষিণের আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের সভাপতি-সম্পাদকসহ পদস্থ অনেক নেতা-কর্মী নিজ নিজ বাড়িতে থাকলেও আপতত কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনে তাদের আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। ১৫ আগস্টের শোক দিবসেও কোনো ইউনিটের পক্ষ থেকে কর্মসূচি চোখে পড়েনি। কেবলমাত্র চট্টগ্রামের চেরাগী পাহাড়ে সাংস্কৃতিক কর্মীদের একটি মোমবাতি প্রজ্বালন কর্মসূচি দেখা যায়।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘সময়টা খারাপ। সবকিছু বুঝে উঠতে সময় লাগছে। কেন্দ্রীয়ভাবেও এখনো কোনো কর্মসূচি পালন করতে বলা হয়নি। তবে আমাদের অনেক নেতা-কর্মী আছেন, যারা কখনোই কোনো অপকর্মের সঙ্গে ছিলেন না। মানুষের সেবা করেছেন। তারা সবাই বাড়িঘরে আছেন। পরিস্থিতি আরেকটু স্বাভাবিক হলে, হাইকমান্ডের নির্দেশনা এলে আমরা রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করব।’