প্রায় পাঁচ মাস বন্ধ থাকার পর আবারও অনিশ্চয়তা সঙ্গী করে উৎপাদনে নেমেছে সিলেটের শাহজালাল সার কারখানা। গ্যাস সংকটের কারণে এত দিন বন্ধ থাকা কারখানাটি শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরদিন থেকে ‘অলৌকিকভাবে’ উৎপাদনে যায়।
কর্তৃপক্ষ বলছে, গ্যাসের বকেয়া বিল ৭৭৯ কোটি টাকা এখনো পরিশোধ হয়নি। ‘ওপরের নির্দেশে’ সীমিত পরিসরে গ্যাস সরবরাহ শুরু হওয়ায় কারখানাটি পুনরায় চালু হয়েছে। তবে গ্যাস সমস্যার সমাধান না হলে কারখানা চালু রাখা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে।
শাহজালাল ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন) গোপাল চন্দ্র ঘোষ জানান, গ্যাস সংকটের কারণে কারখানাটিতে সার উৎপাদন বন্ধ ছিল। শিল্প মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ৬ আগস্ট সীমিত পরিসরে উৎপাদন শুরু হয়েছে। এখনো চাহিদামাফিক গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না। তাই সরবরাহকৃত গ্যাসের ওপরই নির্ভর করছে উৎপাদন। গোপাল চন্দ্র ঘোষ আরও জানান, এখনো বকেয়া গ্যাস বিল পরিশোধ হয়নি। কৃষি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ভর্তুকির টাকা সমন্বয়ের চেষ্টা চলছে। সমস্যা সমাধানে আন্তমন্ত্রণালয় কাজ করছে। এ ছাড়া কারখানাটিতে কিছু ‘টেকনিক্যাল প্রবলেম’ রয়েছে। পুরোদমে উৎপাদনে যেতে হলে সেগুলোও সারাতে হবে। জানা গেছে, গ্যাস সংকটের কারণ দেখিয়ে চলতি বছরের ১৩ মার্চ বন্ধ হয়ে যায় শাহজালাল ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (এসএফসিএল)।
ওই সময় কর্তৃপক্ষ জানায়, গ্যাস বাবদ প্রায় ৭৭৯ কোটি টাকা বকেয়া থাকায় জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম লিমিটেড কর্তৃপক্ষ গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে সার কারখানাটি উৎপাদনে যেতে পারছে না। এ ছাড়া কারখানা বন্ধের আরেকটি কারণ হিসেবে গ্যাসের দাম প্রায় চার গুণ বৃদ্ধিকেও দায়ী করে কর্তৃপক্ষ।
৪ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এসএফসিএল উৎপাদনে যায় ২০১৬ সালের ১৪ আগস্ট। প্রতিদিন ১ হাজার ৭৬০ মেট্রিক টন ইউরিয়া সার উৎপাদনে সক্ষমতাসম্পন্ন কারখানাটি গড়ে ১ হাজার ৪৫০ টন উৎপাদন করে আসছিল। সারের সঙ্গে উপজাত হিসেবে কারখানাটিতে উৎপাদন হতো তরল অ্যামোনিয়া।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানান, শাহজালাল ফার্টিলাইজার সার কারখানা নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখানো হলেও প্রকল্পটি লাভের মুখ দেখেনি। এখন পর্যন্ত কারখানাটি থেকে উৎপাদিত সার বিক্রি বাবদ ৫৫৫ কোটি টাকা সরকারি কোষাগারে জমা হলেও জালালাবাদ গ্যাস কর্তৃপক্ষ কোম্পানিটির কাছে পাওনা ৭৭৯ কোটি টাকা।
এসএফসিএল সূত্র জানান, জালালাবাদ গ্যাস তাদের সরবরাহকৃত গ্যাসের মূল্য চার গুণ বৃদ্ধি করেছে। প্রতি ইউনিট গ্যাস ৪ থেকে ১৬ টাকা করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রতি টন সার উৎপাদনে প্রায় ৩৬ হাজার টাকা ব্যয় হলেও বিক্রি করা হয় ২৫ হাজার টাকায়। অর্থাৎ প্রতি টনে কোম্পানিকে লোকসান গুনতে হয় ১১ হাজার টাকা। সার বিক্রির ভর্তুকির টাকা কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে সমন্বয়ের চেষ্টা করে যাচ্ছে শিল্প মন্ত্রণালয়।