চট্টগ্রাম মহানগর জাতীয় পার্টির (জাপা) ছন্নছাড়া অবস্থা। নগর সভাপতি সোলায়মান আলম শেঠের একক নিয়ন্ত্রণে থাকা সংগঠনটি যেন বিলুপ্তির পথে। দলের একাংশের নেতা-কর্মীদের বাদ দিয়ে করা কমিটির বেশির ভাগ নেতা আগে থেকেই নিষ্ক্রিয়। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে জোট থেকে আসন ‘উপহার’ পেয়ে জামানত হারান নগর জাপার সভাপতি সোলায়মান শেঠ। এরপর আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর লাপাত্তা দলটির বেশির ভাগ নেতা। সব মিলিয়ে চট্টগ্রামে চরম রাজনৈতিক সংকটে পড়েছে জাতীয় পার্টি।
জানা গেছে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রামের ১৬ আসনের মধ্যে ১৫টিতে প্রার্থী দেয় জাপা। এর মধ্যে জোটের হিসাবনিকাশে চট্টগ্রামে দুটি আসনে জাপা প্রার্থীরা জোটের মনোনয়ন পান। এসব প্রার্থীকে সুযোগ করে দিতে নৌকার প্রার্থীদের নির্বাচন থেকে সরিয়ে দেয় আওয়ামী লীগ। দুজনের মধ্যে চট্টগ্রাম-৫ আসনে জাপার সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ সেই নির্বাচনে জিতলেও চট্টগ্রাম-৮ আসনে জামানত হারান নগর জাপার সভাপতি সোলায়মান শেঠ। এর বাইরে চট্টগ্রাম-৯ আসনে দলের চেয়ারম্যানের বিশেষ উপদেষ্টা সানজীদ রশিদ চৌধুরী এবং বাকি ১২টি আসনের প্রার্থীরাও জামানত হারান। যেখানে চট্টগ্রাম উত্তর ও দক্ষিণ জেলা জাপার সিনিয়র নেতারা প্রার্থী হয়েছিলেন।
এদিকে আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর খোঁজ নেই জাপা নেতাদের। গত এক মাসেও তাদের কাউকে জনসম্মুখে দেখা যায়নি। নেতাদের মধ্যে কে কোথায় আছেন সেটাও জানেন না কর্মীরা।
চট্টগ্রাম জাতীয় পার্টির এই দুরবস্থার জন্য নগর সভাপতি সোলায়মান শেঠের স্বেচ্ছাচারিতা, জনসম্পৃক্তহীন রাজনীতি ও সাংগঠনিক দুর্বলতাকে দায়ী করা হচ্ছে। শেঠ তার রাজনৈতিক জীবনে তিনবার সংসদ ও একবার সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে জামানত হারিয়েছেন।
অভিযোগ আছে, সংগঠনের সাবেক সভাপতি মাহজাবীন মোরশেদ দায়িত্বে থাকার সময় চট্টগ্রামে জাতীয় পার্টির রাজনীতি জমজমাট থাকলেও শেঠ দায়িত্ব নেওয়ার পর ছন্নছাড়া অবস্থা শুরু হয়। নতুন কমিটি গঠনের সময় বর্তমানে চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহজাবীনের অনুসারীদের বাদ দেওয়া হয়। বেছে বেছে শেঠ অনুসারীদের দিয়ে কমিটি করা হয়। যাদের বেশির ভাগের উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক কর্মকা- নেই।
সার্বিক বিষয়ে জানতে নগর জাপা সভাপতি সোলায়মান শেঠকে ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। অন্যদিকে সাবেক সভাপতি মাহজাবীন মোরশেদ দেশের বাইরে থাকায় তার বক্তব্য জানা যায়নি।
এ ব্যাপারে জাপা চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ও নগর জাপার সহসভাপতি আবু তাহের বলেন, ‘উনার (শেঠ) সাংগঠনিক অবস্থা নেই। স্বেচ্ছাচারিতার কারণে উনার সঙ্গে জাপার প্রকৃত নেতাদের সম্পর্ক নেই। ৯০ দশক থেকে যারা চট্টগ্রামে জাতীয় পার্টিকে সমৃদ্ধ করেছেন তাদের কাউকে কমিটিতে রাখা হয়নি। সেটার ফল তিনি নির্বাচনে পেয়েছেন। এখনকার দশার জন্যও উনি দায়ী।’
নগর জাপার সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রেজাউল করিম রেজা বলেন, ‘দলীয় সভা দূরে থাক, পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের পর ৯ মাস পার হলেও একটা অভিষেক অনুষ্ঠান পর্যন্ত হয়নি। আগে থেকেই ছন্নছাড়া অবস্থা ছিল। কিন্তু এখন যে পরিস্থিতি হয়েছে সেটা ভাষায় প্রকাশযোগ্য না। সবাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে নিরাপদে আছেন। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন।’
এদিকে নগরীর বাইরে চট্টগ্রাম উত্তর ও দক্ষিণ জেলায়ও দলটির বলার মতো রাজনৈতিক কর্মকান্ড নেই। এর মধ্যে দক্ষিণ জেলার আহ্বায়ক নুরুচ্ছফা সরকার চট্টগ্রাম-১২ এবং উত্তর জেলার সাধারণ সম্পাদক সফিক উল আলম চৌধুরী চট্টগ্রাম-৬ আসন থেকে গত নির্বাচনে লড়ে জামানত হারান। অন্য আসনগুলোতেও পদধারী নেতাদের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়। এ ছাড়া উত্তর জেলা জাপার কমিটি বর্তমানে মেয়াদোত্তীর্ণ। দক্ষিণ জেলার আহ্বায়ক কমিটি থাকলেও দুই সাংগঠনিক জেলায় বলার মতো কার্যক্রম নেই দলটির।