পর্যটনশিল্পে গতি ফেরাতে ঢাকার ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপী ১১তম এশিয়ান ট্যুরিজম ফেয়ার-২০২৪। গতকাল আইসিসিবির পুষ্পগুচ্ছ হলে এ মেলার পর্দা ওঠে। আগামী ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এ মেলা চলবে।
এবারের মেলার প্রতিপাদ্য ‘খুলবে পর্যটনের দুয়ার- এশিয়ান ট্যুরিজম ফেয়ার। মেলার উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের চেয়ারম্যান অতিরিক্ত সচিব এ কে এম আফতাব হোসাইন প্রামাণিক। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ফাতেমা রহিম ভিনা, বাংলাদেশে নিযুক্ত ফিলিপাইনের রাষ্ট্রদূত লিও টিটো এল অসান জুনিয়র, মালদ্বীপের হাইকমিশনার শিউনীন রাশেদ, ট্যুরিস্ট পুলিশ বাংলাদেশের ডিআইজি মো. আবু কালাম সিদ্দিক। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন মালদ্বীপের জাতীয় পর্যটন বোর্ডের মার্কেটিং ও পাবলিক রিলেশনস করপোরেশনের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক জিহুনি রাশেদ, চীনা দূতাবাসের কালচারাল কাউন্সেলর লি শাওপেং, শ্রীলঙ্কার হাইকমিশনের কাউন্সেলর (বাণিজ্যিক) শ্রীমালী জয়রথনে এবং পর্যটন বিচিত্রার সম্পাদক ও এশিয়ান ট্যুরিজম ফেয়ারের চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন হেলাল প্রমুখ। ট্যুরিজম সেক্টরে ইনভেস্টমেন্ট করার জন্য সবাইকে আহ্বান জানিয়ে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের চেয়ারম্যান অতিরিক্ত সচিব এ কে এম আফতাব হোসাইন প্রামাণিক বলেন, পর্যটন বিচিত্রা আয়োজিত এবারের এশিয়ান ট্যুরিজম ফেয়ার বাংলাদেশে হওয়া এখন পর্যন্ত সব থেকে বড় ট্যুরিজম ফেয়ার।
ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্টের ক্ষেত্রে একটি দেশের রাজনৈতিক, কালচারাল ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের প্রয়োজন আছে। পর্যটনশিল্প বিকাশের মাধ্যমে দেশের সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট পূরণ করা সম্ভব। আমি ট্যুরিজম সেক্টরে ইনভেস্টমেন্ট করার জন্য সবাইকে আহ্বান জানাচ্ছি। ট্যুরিজম একটি ভালো ইনভেস্টমেন্টের ক্ষেত্র। অনুষ্ঠানে মালদ্বীপের হাইকমিশনার শিউনীন রাশেদ বলেন, এবারের এশিয়ান ট্যুরিজম ফেয়ারে মালদ্বীপের অনেক প্রতিষ্ঠান যোগ হয়েছে। এই ফেয়ারের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও মালদ্বীপের জনগণের মধ্যে একপ্রকার নতুন সম্পর্ক গড়ে উঠবে। মালদ্বীপে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় পর্যটন খরচ অনেক কম। তাই আমি আহ্বান জানাব পর্যটকদের মালদ্বীপে আসার জন্য। বাংলাদেশে নিযুক্ত ফিলিপাইনের রাষ্ট্রদূত লিও টিটো এল অসান জুনিয়র বলেন, ফিলিপাইনের অ্যাম্বাসাডর হিসেবে আমি বাংলাদেশের মানুষকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি ফিলিপাইনের ঐতিহাসিক স্থানগুলোতে ভ্রমণের জন্য। আমাদের এখানে সমুদ্র, পাহাড় থেকে শুরু করে অনেক আকর্ষণীয় ট্যুরিস্ট স্পট আছে। আমরা মনে করি, পর্যটনশিল্প মানুষের মধ্যে যেমন সম্পর্ক স্থাপন করে, একইভাবে এটি অর্থনীতিকেও অনেক বেশি শক্তিশালী করে। চীনা দূতাবাসের কালচারাল কাউন্সেলর লি শাওপেং বলেন, আমরা বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পর্যটকদের চায়নার সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। এই এশিয়ান ট্যুরিজম ফেয়ার বাংলাদেশের এবং চায়নার সম্পর্কের মধ্যে এক নতুন দৃষ্টান্ত তৈরি করবে। এই ফেয়ারের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও চায়নার মধ্যে সাংস্কৃতিক বিষয়গুলো আদান-প্রদান হবে। বিগত বছরের ধারাবাহিকতায় পর্যটন বিচিত্রার আয়োজনে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সার্বিক দিকনির্দেশনায় বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন, বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড, ট্যুরিস্ট পুলিশ বাংলাদেশের সহযোগিতায় এ মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। মেলার প্রবেশমূল্য ৩০ টাকা, প্রবেশ কুপনের বিপরীতে র্যাফেল ড্র বিজয়ীদের জন্য থাকছে এয়ারলাইনস টিকিটসহ বেড়ানোর আকর্ষণীয় গিফট ভাউচার। এবারের মেলায় বাংলাদেশসহ মালদ্বীপ, চায়না, ফিলিপাইন, শ্রীলঙ্কা, ভিয়েতনাম, ভুটান, সিঙ্গাপুরের প্রায় শতাধিক পর্যটন সংস্থা অংশগ্রহণ করেছে। মেলায় রয়েছে আসন্ন পর্যটন মৌসুমে দেশ-বিদেশে বেড়ানোর বিভিন্ন আকর্ষণীয় ভ্রমণ অফার, হোটেল, রিসোর্ট বা প্যাকেজ বুকিংসহ বিশেষ ছাড়ের ব্যবস্থা। মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট, ক্রুজলাইনস, এয়ারলাইনস, টার অপারেটর ও থিমপার্কসহ বিনোদনের আরও অনেক প্রতিষ্ঠান। মেলায় বৈচিত্র্যময় আয়োজনে থাকছে পর্যটনবিষয়ক সেমিনার, শিশুদের জন্য চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, বিজনেস টু বিজনেস (বিটুবি) মিটিং। মেলায় প্রতিদিন সন্ধ্যায় থাকছে চায়না, ফিলিপাইন ও বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।