রংপুর বিভাগের চার জেলায় বন্যার পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে। ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে তিস্তাসহ অন্যান্য নদনদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। তিস্তার ডালিয়া ব্যারাজের ৪৪টি গেট খুলে রাখা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডসূত্রে জানা গেছে, রংপুর বিভাগের তিস্তা, ধরলা নদী ও দুধকুমার নদের পানিসমতল স্থিতিশীল আছে। তবে রংপুর বিভাগ ও তৎসংলগ্ন উজানে অতিভারী বৃষ্টিপাতের প্রবণতার পরিপ্রেক্ষিতে ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমারের পানিসমতল দ্রুত বাড়ার কথা। ওই সময়ে লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর ও কুড়িগ্রাম জেলার তিস্তার পানিসমতল সতর্কসীমায় প্রবাহিত; সংশ্লিষ্ট চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত এবং কুড়িগ্রামের ধরলা ও দুধকুমারের পানিসমতল বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে। গতকাল বিকাল ৩টায় তিস্তার ডালিয়া পয়েন্টে পানির প্রবাহ ছিল ৫১ দশমিক ৮৩ সেন্টিমিটার। সকাল ৬টায় ছিল ৫১ দশমিক ৭৬ সেন্টিমিটার। ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমা ধরা হয় ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার। অন্যদিকে কাউনিয়া পয়েন্টে সকাল ৬টায় পানির প্রবাহ ছিল ২৮ দশমিক ৭০ সেন্টিমিটার। বিকাল ৩টায় পানি বেড়ে ২৮ দশমিক ৭৯ সেন্টিমিটারে প্রবাহিত জয়েছে।
এদিকে আবহাওয়া অফিসসূত্রে জানা গেছে, গতকাল সকাল ৬টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত ১৪ দশমিক ৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।
এদিকে রাজশাহীতে বাড়ছে পদ্মার পানি। বন্যার আতঙ্কে চর এলাকা থেকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে গবাদি পশুসহ ঘরবাড়ি। ভেসে যাচ্ছে ফসলি জমি। পদ্মার ডান তীরে ভারতীয় সীমান্ত লাগোয়া এ চরের কয়েকটি গ্রামে ভাঙন চলছে এক সপ্তাহ ধরে।
ভাঙন চলছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের পাকা ও নারায়ণপুরে। চাঁপাইনবাবগঞ্জে পানিবন্দি প্রায় ৬ হাজার পরিবার। তলিয়ে গেছে নাটোরের লালপুর উপজেলার কয়েক হাজার বিঘা ফসলি জমি। রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জের চরের বাসিন্দাদের অনেকেই এখন ভাঙন আতঙ্কে ঘরবাড়ি সরিয়ে নিচ্ছেন। কেউ কেউ সবকিছু নৌকায় তুলে চলে আসছেন এপারে। খুঁজছেন বসবাসের নতুন ঠিকানা। রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার রেলবাজার ঘাটে এমনই কয়েকটি নৌকা এসে ভিড়েছে। নৌকাগুলোর কোনোটিতে গরু-ছাগল, কোনোটিতে বস্তায় বস্তায় ধান, আবার কোনোটিতে চর থেকে ভেঙে নিয়ে আসা ঘরের চাল, টিনের ছাউনি ও আসবাবপত্র।
চর আষাঢ়িয়াদহ ইউনিয়নের চরবয়ারমারির আসগর আলী বলেন, ‘প্রতি বছর আমাদের গ্রাম পদ্মায় ভাঙে। এরই মধ্যে ১৫ বিঘা কৃষিজমি হারিয়েছি। বাড়ি সরিয়েছি ছয়বার। এবারও নদীর ভাঙন বাড়ির কাছে চলে আসায় এপারে চলে এসেছি।’
রাজশাহী নগরীর ওপারে চরমাজারদিয়াড়ে কিছু ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে গেলেও এখন সেখানে ভাঙন নেই। তবে পাড় ভাঙছে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার চকনারায়ণপুর ইউনিয়নে। ফতেপুর পলাশি রাস্তার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ভাঙনে ওই ইউনিয়নের আতারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পদ্মা নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। চৌমাদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েও পাঠদান বন্ধ আছে। আতারপাড়া, চৌমাদিয়া, দিয়াড়কাদিরপুর গ্রামের প্রায় ৭৫০টি পরিবার পানিবন্দি। এক সপ্তাহের ব্যবধানে এলাকার বেশ কিছু বাড়িঘর পদ্মার গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। রাজশাহীর পবা উপজেলার ৮ নম্বর হরিয়ান ইউপির (চরখিদিপুর) সদস্য সহিদুল ইসলাম বলেন, ‘মধ্যচরে পদ্মার ভাঙন দেখা দিয়েছে। খিদিরপুর চরে বন্যার পানি ঢুকেছে। চরবাসীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। কেউ কেউ লোকালয়ে চলে আসছেন। গবাদি পশুসহ অন্য মালামালের জন্য অনেকেই আসতে পারছেন না।’ রাজশাহী বিভাগীয় কৃষি দপ্তরের হিসাবে, নাটোরের লালপুর উপজেলায় প্রায় সাড়ে ৩ হাজার বিঘা জমির ফসল তলিয়ে গেছে। এ ছাড়া রাজশাহীর ৯ হাজার ৬৮১ বিঘা ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের ১৪ হাজার ৮৫৭ বিঘা ফসলি জমি প্লাবিত হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের হিসাবে এক সপ্তাহ ধরে পদ্মার পানি বেড়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী প্রবীর কুমার গোস্বামী বলেন, ‘এক সপ্তাহ ধরে পদ্মার পানি বেড়েছে। তবে বিপৎসীমা অতিক্রম করেনি। এর মধ্যেই বৃহস্পতিবার চাঁপাইনবাবগঞ্জের পাংখা পয়েন্টে পানি কমেছে। ফলে ভাটিতেও পানি কমবে। পূর্বাভাস অনুযায়ী আগামী পাঁচ দিন পানি কমতে পারে।’