জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি)-সংক্রান্ত সব সেবা সহজ করার লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন সচিবালয় থেকে নীতিগত সিদ্ধান্ত হলেও মাঠ পর্যায়ে ভোগান্তি কমছে না। ফলে চট্টগ্রাম নগর ও জেলার ১৬ উপজেলার হাজার হাজার ভুক্তভোগী এনআইডি সংশোধন নিয়ে বেকায়দায় আছেন। মাসের পর মাস পেরিয়ে গেলেও অনেকে ছোটখাটো ভুলও সংশোধন করতে পারছেন না। আবার অনেক বড় ভুল থাকলেও নির্বাচন কার্যালয়ের অসাধু কর্মচারীদের অনৈতিক সুবিধা দিয়ে সংশোধন করে নিচ্ছেন।
সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সচিব পর্যায়ের বৈঠকের পর এনআইডি সেবা সহজ করতে ইসি সচিবালয় থেকে মোবাইল অ্যাপস প্রস্তুত, সেবাগ্রহীতাদের সংখ্যা লিপিবদ্ধ করাসহ একগুচ্ছ পরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে মাঠ পর্যায়ের দপ্তরগুলোর নিজস্ব ওয়েবসাইট তৈরিরও। কিন্তু চট্টগ্রাম আঞ্চলিক ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে ভোগান্তি কমার দৃশ্যমান পরিবর্তন চোখে পড়ছে না। উল্টো ভোগান্তির নানা বর্ণনা দিচ্ছেন ভুক্তভোগীরা।
সাইফুল্লাহ চৌধুরী নামে এক ভুক্তভোগী বলেন, ‘আমার নামের খুব ছোট একটা সংশোধন। এটা নিয়ে কত রকমের বেকায়দায় যে আছি! তিন-চার বার নির্বাচন কার্যালয়ে গিয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। তার পরও সংশোধন শেষ হয়নি। সব ধরনের কাগজপত্র দেওয়ার পরও যদি এ রকম ভোগান্তিতে পড়তে হয় তাহলে তাদের অবহেলা আছে-এটা অস্বীকারের সুযোগ নেই।’
নাঈমুল ইসলাম নামে আরেকজন ভুক্তভোগী বলেন, ‘সংশোধনের জন্য আবেদন দিয়েছিলাম ছয় মাস আগে। যত ডকুমেন্ট দিতে বলেছে সব দিয়েছি। উপজেলা কার্যালয় থেকে তদন্ত হয়েছে। এরপর প্রতিবেদন জেলা কার্যালয়ে পাঠিয়েছে। এর পরও অনেক দিন ধরে আমার আবেদন ঝুলে আছে।’
গত বুধবার সরেজমিন চট্টগ্রাম আঞ্চলিক ও জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে দেখা গেছে, এ দুই ভুক্তভোগীর মতো প্রতিদিন এনআইডি সংশোধনের ভোগান্তি নিয়ে নির্বাচন কার্যালয়ে ভিড় করেন অসংখ্য মানুষ। এনআইডি সংশোধন করতে না পেরে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা, সন্তানের জন্মনিবন্ধন করা থেকে শুরু করে নানা কাজে ঝামেলায় পড়ছেন তারা। এদের কেউ কেউ উপযুক্ত সময়ে সংশোধন করতে পারলেও বেশির ভাগ আবেদনকারী নানা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন। এর মধ্যে আবার অনেকে নির্বাচন কার্যালয়ে কিছু অসাধু কর্মচারীকে অনৈতিক সুবিধা দিয়ে দ্রুত সময়ে সংশোধন করে নেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
একজন আবেদনকারী জানান, তার এনআইডিতে বাবার নামে ভুল ছিল। অনেক দিন ধরে নির্বাচন কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও তিনি সংশোধন করতে পারছিলেন না। পরে নির্বাচন কার্যালয়ের কর্মচারীদের সঙ্গে যোগাযোগ আছে এমন একজনের মাধ্যমে ৬ হাজার টাকা দিয়ে তিনি সংশোধন করিয়ে নেন।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. ইউনুচ আলী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা সব সময় চেষ্টা করছি দ্রুত আবেদন নিষ্পত্তির। আমার অঞ্চলে ১৯ হাজারের মতো আবেদন আছে। প্রতিদিনই কাজ হচ্ছে। এরই মধ্যে সচিবের সঙ্গে অনলাইনে মিটিংয়ে অংশ নিয়েছি। সেবা ত্বরান্বিত করতে যা যা দরকার করছি। তবে অনৈতিকভাবে কেউ এসব কাজে অংশ নেওয়ার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ এ ব্যাপারে জানতে চট্টগ্রাম সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ এনামুল হককে ফোন করলেও রিসিভ করেননি।