বগুড়ার দুপচাঁচিয়ায় দেড় যুগের বেশি সময় ধরে দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন অধ্যক্ষ মো. ছাইফুল ইসলাম সোনার। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এলাকার প্রভাবশালী নেতাদের সহযোগিতায় তিনি এ অসাধ্যকে সাধন করেছেন। জানা গেছে, বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলার গোবিন্দুপর ইউনিয়নের সজ্জনকুড়ি গ্রামের তছলিম উদ্দিন সোনারের ছেলে মো. ছাইফুল ইসলাম সোনার দুপচাঁচিয়া কারিগরি কলেজের অধ্যক্ষ পদে চাকরির পাশাপাশি কাহালু উপজেলাধীন কাহালু আদর্শ মহিলা ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক হিসেবে চাকরি করে আসছেন। এর মধ্যে তার নামে বর্তমান বাজারমূল্যে ৫ থেকে ৬ কোটি টাকার সম্পদের অভিযোগ উঠেছে। দুপচাঁচিয়া কারিগরি কলেজটি ২০০১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়ে ২০১৯ সালে এমপিওভুক্ত হয়েছে। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে আয়-ব্যয়ের নেই কোনো হিসাবনিকাশ। শিক্ষক প্রতিনিধি, অভিভাবক সদস্য ও সভাপতি কেউ জানে না কলেজের আয়-ব্যয়ের খবরাখবর। এসব তথ্য বেরিয়ে আসে বাংলাদেশ প্রতিদিনের অনুসন্ধানে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই কলেজের একাধিক শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন, তাদের কাছ থেকে প্রতি বছর রসিদ বই ছাড়া অবৈধভাবে অধ্যক্ষ নিজেই প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীর কাছ থেকে মাসিক বেতন বাবদ ৩ হাজার ৬০০ টাকা, ভর্তি ফি ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকা, সেশন ফি বাবদ ৩ হাজার থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা, ফরম ফিলাপ বাবদ ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা ও বিবিধ খরচ বাবদ সাড়ে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকা আদায় করেন। অধ্যক্ষের চাহিদামতো টাকা দিতে না পারলে সে শিক্ষার্থীর ফরম ফিলাপ আটকিয়ে রাখা হয়। এ ছাড়া ফাইনাল পরীক্ষায় পাস করে নিজের সনদ নিতে পরীক্ষার্থীকে গুনতে হয় ১ হাজার টাকা। গত সেশনে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অবৈধভাবে টাকা দাবির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সেটি সমাধান করেছিলেন। শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষ বলছেন, তিনি একই সঙ্গে দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কীভাবে চাকরি করতে পারেন।
এদিকে অধ্যক্ষের অসৎ উদ্দেশ্য থেকে রেহাই পাননি বর্তমানে কর্মরত শিক্ষক-কর্মচারীরাও। কলেজটি ২০১৯ সালে এমপিওভুক্ত হলে শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিওভুক্তির অজুহাতে হাতিয়ে নিয়েছেন ১৫ লাখ টাকা। এ ছাড়া প্রভাষকদের মূল নিয়োগপত্র, নম্বরপত্র, যোগদানপত্রসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্রাদি এমপিওর অজুহাতে সুকৌশলে আটকিয়ে রেখেছেন তিনি। মোটা অঙ্কের টাকা দিতে না পারায় এখন পর্যন্ত তাদের চাকরির মূল প্রবেশপত্র, নিয়োগপত্র, যোগদানপত্র, নম্বরপত্রসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্রাদি ফেরত দেননি। শিক্ষাবিদ আনোয়ার হোসেন জানান, ‘বেসরকারি কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালায় বলা হয়েছে, শিক্ষক-কর্মচারীরা একই সঙ্গে একাধিক পদে চাকুরিতে বা লাভজনক কোনো পদে নিয়োজিত থাকতে পারবেন না।’
অধ্যক্ষ মো. ছাইফুল ইসলাম সোনার দাবি করেন, ‘আমার বিরুদ্ধে একই সঙ্গে দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চাকরির যে অভিযোগ করা হচ্ছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমি দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চাকরি করি না। অন্যান্য যে অভিযোগ তুলে ধরা হয়েছে সেগুলোও সঠিক নয়।’ এদিকে বগুড়ার জেলা প্রশাসকসহ সরকারের একাধিক প্রতিষ্ঠানে মিজানুর রহমান নামের এক ব্যক্তি অধ্যক্ষ মো. ছাইফুল ইসলাম সোনারের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছেন।