দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগছে রাজশাহীর শাহ মখদুম বিমানবন্দরে। রানওয়ে সম্প্রসারণ থেকে গ্রাউন্ড স্টেশন আধুনিকায়নের মধ্য দিয়ে নতুন রূপ পেতে যাচ্ছে বিমানবন্দরটি। ইতোমধ্যে আধুনিকায়নের কাজ শুরু হয়েছে। ধীরে ধীরে বিমানবন্দরটিকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নেওয়ার কাজ চলছে বলে জানিয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া।
আধুনিকায়ন প্রকল্পের আওতায় বেশকিছু উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে যাত্রীদের জন্য অত্যাধুনিক টার্মিনাল ভবন নির্মাণ, রানওয়ে সম্প্রসারণ ও কার্গো বিমান ওঠানামার ব্যবস্থা। প্রাথমিকভাবে এর ব্যয় ধরা হয়েছে ১০৭ কোটি টাকা। করোনা মহামারির কারণে উন্নয়ন কাজ বেশকিছু দিন বন্ধ ছিল। তবে সম্প্রতি আবারও কাজ শুরু হয়েছে। ২০২২ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা ছিল। তবে তা বাড়িয়ে ২০২৫ সালের জুনে শেষ করার কথা জানিয়েছেন শাহ মখদুম বিমানবন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের সমন্বয়ক মনোয়ার হোসেন। এ কারণে ব্যয় কিছুটা বেড়েছে বলে জানান তিনি।
বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক দিলারা পারভীন জানান, বর্তমানে একটির বেশি উড়োজাহাজ একই সঙ্গে রানওয়েতে নামতে বা উঠতে পারে না। তবে বিমানবন্দর আধুনিকায়ন প্রকল্পটি শেষে হলে একই সঙ্গে তিনটি উড়োজাহাজ অবস্থান করতে পারবে। কারণ কার্গো বিমান ওঠানামাসহ একসঙ্গে তিনটি উড়োজাহাজ পার্কিং করার ব্যবস্থা রেখেই এবার বিমানবন্দরটির আধুনিকায়ন করা হচ্ছে। তিনি আরও জানান, প্রকল্পের আওতায় বিমানবন্দরের বর্তমানের ৬ হাজার ৬০০ ফুট দৈর্ঘ্যরে রানওয়ে বাড়িয়ে ১০ হাজার ফুট করা হচ্ছে। এর প্রস্থ তখন ১০০ ফুট থেকে বেড়ে হবে ১৫০ ফুট। আর এখনকার ২৬০ বাই ২৫০ ফুটের অ্যাপ্রন হবে ২৭৫ বাই ২৫০ ফুট। নির্মিতব্য আধুনিক টার্মিনাল ভবনটির নিচতলার আয়তন হবে ১৭ হাজার বর্গফুট। দ্বিতীয় তলাটি হবে ১১ হাজার বর্গফুটের। টাওয়ার ও অন্যান্য স্থাপনা মিলিয়ে টার্মিনাল ভবনটিতে জায়গা থাকবে ৩১ হাজার বর্গফুট। সুপরিসর টার্মিনাল ভবনে চেক-ইন কাউন্টারের সংখ্যা এখনকার তুলনায় বেড়ে দ্বিগুণ হবে। সঙ্গে থাকবে বিশালাকৃতির কনকার্স হল, ডিপারচার লাউঞ্জ, অ্যারাইভাল লাউঞ্জ, স্ন্যাকস কর্নার ও একটি ভিআইপি লাউঞ্জ।
বেবিচক চেয়ারম্যান মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়ার নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল সম্প্রতি সরেজমিন রাজশাহী বিমানবন্দর পরিদর্শন করেছেন। এ সময় তিনি বলেন, দেশের অন্যতম এই বিমানবন্দরটিকে শিগগিরই ঢেলে সাজানো হবে। দেশের অন্য বিমানবন্দরগুলোতে যাত্রীরা যেসব সুবিধা পায়, এখানেও সেই ব্যবস্থা থাকবে। অভ্যন্তরীণ আর আন্তর্জাতিকের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ থাকবে না। সব যাত্রী একই সুবিধা পাবে।
এদিকে, রাজশাহী-ঢাকা রুটে প্রতিনিয়ত যাত্রী সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সরকারি-বেসরকারি বিমান পরিবহন সংস্থাও তাদের ফ্লাইট সংখ্যাও বাড়াচ্ছে। ৩৯ বছর আগে নির্মিত এই বিমানবন্দরে বর্তমানে বাংলাদেশ বিমান ও বেসরকারি দুটি সংস্থা মিলিয়ে প্রতিদিন ছয়টি ফ্লাইট যাত্রী পরিবহন করছে। অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর হওয়ায় শাহ মখদুম বিমানবন্দর থেকে বর্তমানে রাজশাহী-ঢাকা রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করছে দেশের তিনটি এয়ারলাইনস। প্রতিটি এয়ারলাইনসের দুটি করে মোট ৬টি ফ্লাইট প্রতিদিন চলাচল করছে। ফলে এই রুটে সপ্তাহে মোট ৪২টি ফ্লাইট পরিচালনা করা হচ্ছে। অথচ যাত্রীর অভাবে ২০০৭ সালের ২০ জানুয়ারি থেকে অভ্যন্তরীণ এই রুটে উড়োজাহাজ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। আট বছর বন্ধ থাকার পর ২০১৫ সালে আবারও রাজশাহী-রুটে ফ্লাইট চলাচল শুরু হয়। রাজশাহীর শাহ মখদুম বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক দিলারা পারভিন জানান, প্রকল্পের কাজ শেষ হলে বিমানবন্দরটি আন্তর্জাতিক মানে গিয়ে দাঁড়াবে। তখন যাত্রীরা আরও সুযোগ-সুবিধা পাবেন।