রংপুর অঞ্চলের মানুষের দুঃখগাথা নদীর নাম তিস্তা। এই নদী প্রতিবছর বর্ষায় এবং খরা মৌসুমে মানুষের দীর্ঘশ্বাস ভারী করছে। এর থেকে পরিত্রাণের একমাত্র উপায় মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন। এ নিয়ে এই অঞ্চলের মানুষ আন্দোলন করে আসছে। আন্দোলনের অংশ হিসেবে গতকাল তিস্তা কর্তৃপক্ষ গঠন করে নিজস্ব অর্থায়নে দ্রুত তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নসহ ছয়দফা দাবিতে তিস্তা পাড়ের পাঁচ জেলার ১২ উপজেলায় মানববন্ধন ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের নেতৃবৃন্দ।
গংগাচড়ায় উপস্থিত ছিলেন তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য আবদুর নূর দুলাল, ছাদেকুল ইসলাম, মাহমুদ আলম, কাউনিয়ায় কেন্দ্রীয় নেতা মোস্তাফিজার রহমান, আশিকুর রহমান, পীরগাছায় কেন্দ্রীয় নেতা বাবুল আকতার, শহিদুল ইসলাম সাজু, রফিকুল ইসলাম, কুড়িগ্রামের উলিপুরে উপস্থিত ছিলেন তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি নজরুল ইসলাম হক্কানী, স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য মশিয়ার রহমান, কেন্দ্রীয় নেতা মোশাররফ মুনশি, রাজারহাটে স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য বখতিয়ার হোসেন শিশির, কেন্দ্রীয় নেতা মোশাররফ হোসেন, মওলানা আবদুস সালাম, মওলানা এস এম জাহিরুল, রাজিকুল ইসলাম, লালমনিরহাটে অ্যাডভোকেট চিত্ত রঞ্জন, হাতিবান্ধায় কর্মসূচিতে ছিলেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শফিয়ার রহমান, কেন্দ্রীয় নেতা ওসমান গনি বাদশা ও মশিউর রহমান, নীলফামারীর ডিমলায় ছিলেন কেন্দ্রীয় নেতা গোলাম মোস্তফা, হাফিজার রহমান, জলঢাকায় ছিলেন কেন্দ্রীয় নেতা গোলাম পাশা এলিচ, জাহাঙ্গীর আলম, কালিগঞ্জে কেন্দ্রীয় নেতা ড. মনোয়ারুল ইসলাম, আমিরুল ইসলাম হেলাল, মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল হক, আদিতমারীতে কেন্দ্রীয় নেতা দেলোয়ার হোসেন, দিলীপ কুমার রায়, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মুন্সি সাজু, মমতাজুর রহমান বাবুসহ অন্যরা।
প্রধান উপদেষ্টা বরাবর প্রেরিত স্মারকলিপিতে বলা হয়, খরা, বন্যা ও প্রতিবছরের উপর্যুপরি ভাঙনে তিস্তা অববাহিকার ২ কোটি মানুষের জীবনে নেমে এসেছে মহাদুর্যোগ। ভাঙনে সরকারি-বেসরকারি সম্পদ, ঘরবাড়ি, ফসলি জমি, রাস্তাঘাট, হাটবাজার ও মূল্যবান অবকাঠামো তিস্তা খেয়ে ফেলছে। হুমকিতে পড়েছে গোটা দেশের খাদ্য নিরাপত্তা। নদীভাঙনে বাড়ছে রংপুর বিভাগের গড় দারিদ্র্যের হার। বালু ও পলি জমে তিস্তার মূল প্রবাহ সমতলের চেয়েও উঁচু হয়ে গেছে। ভাঙনের তান্ডবে নদীর প্রস্থ হয়েছে কোথাও কোথাও ৮ থেকে ১২ কিলোমিটার। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় দিন দিন পরিস্থিতি বেসামাল হয়ে উঠছে। খরাকালে তিস্তার দুই তীরের বিস্তৃত জনপদে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ক্রমাগত নিচে নেমে যাচ্ছে। ভাঙনের কারণে তিস্তার শাখা ও উপনদীগুলো (২২টি) হচ্ছে বেদখল, হচ্ছে তিস্তার সঙ্গে সংযোগ হারা। তিস্তা খনন ও তিস্তা সংযুক্ত শাখা-প্রশাখা নদীগুলোর মুখ খুলে না দিলে ভাঙন ও উপর্যুপরি বন্যার হাত থেকে পরিত্রাণ মিলবে না। তিস্তার জন্মলগ্ন থেকে আজ অবধি কোনো খনন ও পরিচর্যা করা হয়নি। তাই তিস্তা মহাপরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়ন জরুরি হয়ে পড়েছে।