চট্টগ্রামের মিরসরাই ও সীতাকুন্ড উপজেলার পাহাড়ি ঝরনাগুলো প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধার। কিন্তু এই অপরূপ ঝরনাতেই ঘটছে কিশোর ও তরুণদের মৃত্যু। গত পাঁচ বছরে এসব ঝরনায় প্রাণ গেছে অন্তত ২০ জনের। লক্ষণীয়, এদের বেশির ভাগই উঠতি বয়সের কিশোর-তরুণ। মৃত্যু হয়নি কোনো নারীরও। মূলত কিশোর-তরুণদের অসর্তকতা, গাইড-ইজারাদার ও বন বিভাগের নির্দেশনাকে পাত্তা না দেওয়ার কারণে ঝরনায় মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ হচ্ছে বলে অভিমত সংশ্লিষ্টদের।
চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের খৈয়াছড়া, নাপিত্তাছড়া, রূপসী, বাওয়াছড়া ও সীতাকুন্ডের সহস্রধারা ঝরনা পর্যটন স্থান হিসেবে বেশ জনপ্রিয়। কিন্তু পর্যটকদের সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এসব স্থানে দুর্ঘটনা এবং মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে।
বন বিভাগ ও স্থানীয় প্রশাসনের তথ্যমতে, গত পাঁচ বছরে এসব ঝরনার সৌন্দর্য উপভোগ করতে গিয়ে ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন শতাধিক। সর্বশেষ গত ৪ অক্টোবর মুসফিকুর রহমান আদনান (২১) ও মাহবুব রহমান মুত্তাকিম (২১) নামের দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়। তাদের একজন পাহাড়ের ওপরে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে ছবি তুলতে গিয়ে পড়ে যান। অন্যজন তাকে বাঁচাতে গিয়ে পড়ে গিয়ে মারা যান। এর কয়েকদিন আগে মাহবুব হাসান নামে আরেক ব্যক্তির মৃত্যু হয়।
বারৈয়াঢালা জাতীয় উদ্যানের অধীনে থাকা ঝরনাগুলোর সৌন্দর্য রক্ষা, রক্ষণাবেক্ষণের দায়িতে আছেন বন বিভাগের নিয়োগকৃত ইজারাদাররা। সার্বিক বিষয় দেখভাল করে চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগ। জানতে চাইলে উত্তর বন বিভাগের বারৈয়াঢালা রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. আশরাফুল আলম বলেন, ‘যারা মারা গেছেন তাদের বেশির ভাগই ১৫-২৫ বছরের মধ্যে। এই বয়সের ছেলেরা কিছুটা স্বাধীনচেতা, অনেক ক্ষেত্রে অতি উৎসাহী। নানারকম ঝুঁকি নিতে চায়। আমরা ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে লাল কাপড় বেঁধে দিই। ব্যানারে ঝুঁকির কথা লিখে দিই। খৈয়াছড়া ঝরনায় হ্যান্ডমাইক দিয়ে সচেতন করা হয়। এরপরও নির্দেশনা মানে না অনেক। এ কারণে প্রায় দুর্ঘটনা ঘটছে। এ ব্যাপারে পর্যটকদের সচেতনতা জরুরি। নির্দেশনা মানতে হবে, গাইড ছাড়া যাওয়া যাবে না।’
বন বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, নারীদের অনেকে শাড়ি পরেও ঝরনায় যান। অনেকে বাচ্চা কোলে নিয়েও যান। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো নারীর মৃত্যু হয়নি। কারণ নারী ও বয়স্ক পুরুষরা নির্দেশনা মেনে চলেন। এ কারণে তারা দুর্ঘটনার শিকার হন না। পাহাড়ের উঁচুতে উঠে এমন ছবি তুলতে চায়, যেটা অন্যরা করতে ভয় পায়। এ কারণে তারা বেশি দুর্ঘটনার শিকার হন। অনেকে আবার বিভিন্ন মাদকদ্রব্য সেবন করেও ঝরনায় গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হন। মিরসরাই ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের কর্মকর্তা ইমাম হোসেন পাটোয়ারী বলেন, ‘বেশির ভাগ হতাহতের ঘটনাগুলো হচ্ছে পর্যটকদের অসতর্কতার কারণে। সৌন্দর্য উপভোগ করতে এসে এমন মৃত্যুর শিকার হওয়া খুবই মর্মান্তিক ঘটনা।’
এতে অন্য পর্যটকদের মধ্যেও বিরূপ প্রভাব আসতে পারে। এ ব্যাপারে সবার সচেতন হওয়া দরকার।’