২১ জানুয়ারি, ২০১৮ ২১:২৪

'শুদ্ধতা শৈশব থেকে'

প্রেস বিজ্ঞপ্তি

'শুদ্ধতা শৈশব থেকে'

শিশু, এই শব্দটির সাথে জড়িয়ে আছে কোমলতা। শিশু, এই শব্দটি শুনলে একজন শক্ত ও রাগী প্রকৃতির মানুষের মনও কিছুটা কোমল হয়ে উঠে। কদাচিৎ হাসতে দেখা মানুষটির মুখের হাসির রেখাটি অল্প করে হলেও সম্প্রসারিত হয়। শিশু পবিত্র, কোমল, অনুকরণপ্রিয়। পৃথিবীতে আসার পর একটি করে দিন পার হয়, আর চারপাশ থেকে একটু একটু করে শিখতে থাকে। বিছানায় উল্টে পাল্টে হামাগুড়ি দিতে দিতেই একদিন শিশুটি বসতে শিখে, হাঁটতে শিখে। একদিন দেখা যায় হাঁটতে হাঁটতেই দৌড়াচ্ছে। তারপর শুরু হয় তার দুরন্তপনা। এই ছুটোছুটির মাঝেই সে খেয়াল করে, তার চারপাশের মানুষগুলো কী করছে এবং সেও তাই তাই করার চেষ্টা করে। 

শিশুদের ক্ষেত্রে আদর বা আবেগের মোহে পড়ে আমরা অনেকেই শিশুদের অনেক বিষয়ে খু্ব একটা গুরুত্ব দেই না। যার পরিণাম কখনও কখনও মারাত্মকও হতে পারে। শিশুর বেড়ে উঠার সময় তার সুস্বাস্থ্য রক্ষা করা বাবা-মার কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আর সুস্বাস্থ্যের মূলমন্ত্র হলো পরিচ্ছন্নতা। তাই বাবা-মা’র পরিচ্ছন্নতা বিষয়ে প্রয়োজন সুস্পষ্ট ধারণা। তবে পাশাপাশি শিশুকেও এসব বিষয়ে ভালো ধারণা দেওয়া প্রয়োজন এবং অবশ্যই পরিচ্ছন্নতা বিষয়ক প্রয়োজনীয় অভ্যাসগুলো গড়ে তোলা প্রয়োজন। পরিচ্ছন্নতা বিষয়ক জ্ঞান ধারণের উত্তম সময় হল শৈশব, কারন এই সময়েই জীবনের ভিত তৈরি হয়।

এ বিষয়ে জনপ্রিয় ঔপন্যাসিক ও নাট্যকার, কিশোর আলো’র সম্পাদক আনিসুল হক বলেন, “আমরা যদি শিশুদের পরিচ্ছন্নতা বিষয়ে পর্যাপ্ত জ্ঞান দিতে পারি, তাহলেই ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ পরিচ্ছন্ন হয়ে উঠবে। কেননা, আমাদের আজকের শিশুরাই, আগামীর বাংলাদেশ। আমি মনে করি, এক্ষেত্রে পরিবারের দায়িত্বই সবচেয়ে বেশি।”
   
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাই হলো সুস্বাস্থ্যের মূলকথা। অপরিষ্কার শরীরে বাসা বাঁধে নানান রকমের অসুখ-বিসুখ। অপরিষ্কার পরিবেশে রোগও ছড়ায় বেশি। 

গবেষণায় দেখা গেছে, খাবার ও পানির মাধ্যমে যেসব রোগ ছড়ায়, তার প্রতি চারজনের একজন আক্রান্ত হন শুধু হাত না ধোয়ার কারণে। তাই নিজেকে তো বটেই, আশেপাশের সব কিছুই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা জরুরি। পাশাপাশি খুব ছোটবেলা থেকেই শিশুকে সঠিক নিয়ম মেনে নিজে নিজে সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার অভ্যাস করাতে হবে। ছোট শিশুরা পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারগুলো ঠিক বুঝে উঠতে পারে না। অনেক বাচ্চা এটা-সেটা মুখে দেয় বা নোংরা হাতে খাবার খায়। তাই ছোটবেলা থেকেই শিশুদের মনে গেঁথে দিতে হবে পরিচ্ছন্নতাবোধের খুঁটিনাটি। এ ব্যাপারে মা-বাবাকে হতে হবে সচেতন। ছোটবেলা থেকেই বাচ্চাদের এমন কিছু পরিচ্ছন্নতার অভ্যাস তৈরি করে দিতে হবে, যাতে প্রাত্যহিক কাজে পরিচ্ছন্নতায় সে নিজেও সচেতন হিসেবে বেড়ে ওঠে। আবার, শৈশবেই যেহেতু বিদ্যালয় যাত্রা শুরু হয়, তাই পরিচ্ছনতা বিষয়ক অভ্যাস গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বিদ্যালয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। কেননা শিশুরা দিনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সময় বিদ্যালয়েই কাটায়।

শিশুদের পরিচ্ছন্নতা বিষয়ে সচেতন করার ক্ষেত্রে বিদ্যালয়ের ভূমিকা সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক ডাঃ শাইখ ইমতিয়াজ বলেন, “পাঠ্যপুস্তকের সিলেবাসে নয়, বরং বিদ্যালয় সংস্কৃতিতে পরিচ্ছন্নতা বিষয়ে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা উচিত। কেননা, শিশুরা দিনের একটা গুরুত্বপূর্ণ সময় বিদ্যালয়েই কাটায়।”  
  
যেহেতু শিশুরা দিনের অনেকটা সময় বিদ্যালয়ে থাকছে, তাই তাদের জন্য পরিচ্ছন্নতা বিষয়ক বিশেষ কিছু প্রোগ্রাম রাখা যায়। সম্প্রতি এরকমই কিছু উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশে পরিচালিত পরিচ্ছন্নতা বিষয়ক ক্যাম্পেইন ‘ডেটল-চ্যানেল আই পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশ’। এই ক্যাম্পেইনের অংশ হিসেবে বিভিন্ন বিদ্যালয়ে গিয়ে সঠিক নিয়মে হাত ধোয়ার পদ্ধতি শেখানোসহ পরিচ্ছন্নতা বিষয়ক ধারণা দেওয়ার জন্য নানান কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। পাশাপাশি ‘ডেটল-চ্যানেল আই পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশ’-এর আয়োজনে বেসরকারী টিভি চ্যানেল আই-তে প্রচারিত হচ্ছে পরিচ্ছন্নতা বিষয়ক ১০ পর্বের ধারাবাহিক অনুষ্ঠান। 

সব আয়োজনের স্লোগান একটাই, পরিচ্ছন্নতাই শেষ কথা। আর তার শুরুটা হোক শৈশব থেকেই।  

বিডিপ্রতিদিন/২১ জানুয়ারি ২০১৮/ ই জাহান

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর