২০ জুন, ২০১৮ ১৬:৩৮

সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের স্কুল স্বাস্থ্যবিধি

প্রেস বিজ্ঞপ্তি

সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের স্কুল স্বাস্থ্যবিধি

প্রাণোচ্ছ্বল শিশুর সঙ্গ কে না পছন্দ করে? সকল মা-বাবাই চান তাদের শিশুটি যেন দৌড়-ঝাপ দিয়ে, হেসে-খেলে তার শৈশব কাটাক। তবে শুধু হাসি-খেলাই নয়, তাদের শিশুটি মন দিয়ে পড়াশোনা করুক এটিও সকল বাবা মায়ের চাওয়া। আর শিশুর এসব কাজকর্ম সঠিকভাবে চলার জন্য শিশুটির সুস্থতা নিশ্চিত করা প্রতিটি বাবা-মায়ের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শিশুটির সুস্বাস্থ্য নিশ্চিতকরণে বাবা মায়ের অনেক বেশি সচেতন হতে হয়। সুষম খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখার পরেও শিশুরা অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে, যার ফলে ক্লাসে অনুপস্থিত থাকাসহ শিশুদের নিয়মিত নানাবিধ কাজকর্মে ব্যাঘাত ঘটে। 

সুষম খাদ্যাভ্যাস ও সঠিক স্বাস্থ্যচর্চার পরেও শিশুদের অসুস্থ হয়ে পড়া এবং স্কুলে অনুপস্থিত থাকার অন্যতম একটি কারণ হলো ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি সঠিকভাবে পালন না করা। একই কারণে বিভিন্ন সংক্রামক ব্যাধি যেমন ডায়রিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জা, ম্যালেরিয়া, মাম্পস, হুপিং কাশি, সর্দিকাশি, টাইফয়েড এগুলোর সংক্রমণ হতে পারে। নিয়মিত গোসল করা, দাঁত ব্রাশ করা, খাওয়ার আগে ও পরে এবং টয়লেট ব্যবহারের পর হাত ধোয়ার মতো সাধারণ কিছু পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বিধি মেনে চলার মাধ্যমেই এসব রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। 
  
সঠিক স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলার কারণে যে শিশুরা অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে, স্কুলে অনুপস্থিতিসহ নিয়মিত সব কাজে ব্যাঘাত ঘটতে পারে এটি উপলব্ধি করার মতো পরিণত শিশুরা নয়। তাই তাদেরকে সঠিক স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার গুরুত্ব উপলব্ধি করানো অতি প্রয়োজন। পরিবারের নানা সদস্য, স্কুল এবং আশেপাশের বন্ধুদের কাছ থেকেই সাধারণত শিশুরা নিজেকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার অভ্যাসটি গড়ে তোলে। 

প্রতিটি শিশুর এই শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়া প্রয়োজন এবং এটাও সত্যি যে, সকল শিশু তাদের পরিবার থেকে এই পরিচ্ছন্নতার শিক্ষা পায় না। বিশেষ করে সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা বেশিরভাগ সময়ই অবহেলিত থাকে, এমনকি তারা তাদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কেও যথেষ্ট জ্ঞান লাভের সুযোগ পায় না। সাধারণত অস্বাস্থ্যকর, নোংরা পরিবেশেই এসব শিশু বড় হতে থাকে যেখান থেকে তাদের বিভিন্ন সংক্রামক বা জীবাণুঘটিত ব্যাধি দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অত্যন্ত বেশি থাকে। যেহেতু তাদের অভিভাবকদের স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে জ্ঞান অত্যন্ত সীমিত বা নেই বললেই চলে তাই তারা এটি মেনে চলার ব্যাপারে খুবই অসচেতন। আর এই কারণেই তারা তাদের সন্তানদেরকে ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে শিক্ষা প্রদান করতে ব্যর্থ হয়। তবে শিশুদের জন্য স্কুল একটি উপযুক্ত স্থান হতে পারে; যেখান থেকে তারা সাবান দিয়ে সঠিক নিয়মে হাত ধোয়া, নিয়মিত দাঁত ব্রাশ করাসহ বিভিন্ন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। 

সুবিধাবঞ্চিত এসব শিশুদের জন্য দেশে এখন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কাজ করে যাচ্ছে। এগুলোর মধ্যে পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে স্কুলে হাত ধোয়া কর্মসূচি চালুকরণের মাধ্যমে ডেটল ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে সচেতনতা তৈরিতে কাজ করে যাচ্ছে। তাই যেসব শিশু পরিবার থেকে পরিচ্ছন্নতা বিষয়ক মৌলিক শিক্ষা পায় না বা যেটুকু পায় তা অপর্যাপ্ত, তারা স্কুলে এসে সেই শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। প্রতিবছরের মতো এবছরও ডেটল ইতোমধ্যে তাদের নিয়মিত স্কুল হ্যান্ডওয়াশ কার্যক্রম নাটোর এবং রাজশাহীর বিভিন্ন অঞ্চলে শুরু করেছে। পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে ডেটল পরিবার শৈশবে শুদ্ধতার বার্তা নিয়ে ‘সুস্বাস্থ্যের প্রথম ধাপ, পরিচ্ছন্ন ও জীবাণুমুক্ত হাত’ স্লোগানে হাজির হয়েছিল রাজশাহীর স্কুলগুলোতে। এই কার্যক্রমের মাধ্যমে তিন ধাপে ১২, ১২ ও ১৩টি করে মোট ৩৭টি স্কুলের সকল শিক্ষার্থীর মাঝে ডেটল পরিচ্ছন্নতার বার্তা ছড়িয়ে দিয়েছে, পাশাপাশি সঠিকভাবে হাত ধোয়ার নিয়ম শিখিয়েছে। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের শিশুদের মাঝে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বিষয়ক সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে এবছরের এপ্রিলের মাঝামাঝি সময় থেকে এটি খুলনা এবং চট্টগ্রামের বিভিন্ন অঞ্চলে স্কুলশিশুদের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বিষয়ক প্রশিক্ষণ দেওয়ার কার্যক্রম শুরু করেছে। 

এ বিষয়ে অধ্যাপক মোহাম্মদ আবুল খায়ের, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) বলেন, “সন্তানদের স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি করতে ও সুস্থতা ধরে রাখতে সবচেয়ে বেশি সচেতন হতে হবে অভিভাবকদের। ছোটবেলা থেকে ছোট ছোট অভ্যাস যেমন খাওয়ার আগে ভালো করে হাত ধোয়া, নখ কাটা, রাতে ব্রাশ করা ইত্যাদি বিষয়গুলোর প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। পরিবারের বাইরেও এসব বিষয়ে সচেতনতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে একজন শিক্ষক। স্কুল থেকেও এসব বিষয়ে শিক্ষা দেওয়াটা খুবই দরকার। ডেটলের নেয়া এই  উদ্যোগটি বেশ প্রশংসনীয়। এতে করে শিক্ষার্থীরা পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বিষয়ক মৌলিক শিক্ষাগুলো পাচ্ছে যা একটি শিক্ষার্থীর সুস্থ ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে সহায়ক হবে বলে আমি মনে করি”।  

শিশুরা সমাজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ, কেননা তারাই ভবিষ্যতে এই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। তাই তাদের সুস্থতা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। এই প্রশিক্ষণ প্রক্রিয়ায় এটি সুনিশ্চিত করতে হবে যে সমাজের প্রতিটি শিশু স্বাস্থ্যবিধি, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা এবং তাদের সুস্থতা বজায় রাখার ব্যপারে সঠিকভাবে প্রশিক্ষিত। 

বিডি-প্রতিদিন/২০ জুন, ২০১৮/মাহবুব

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর