সাফল্যগাঁথা চারটি বছর অতিক্রম করেছে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স। বাংলাদেশের বিমান পরিবহন শিল্পে ২০১৪ সালে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের যাত্রা শুরু। এরপর একের পর এক অর্জন করেছে সাফল্যের মাইলফলক।
আজ থেকে ঠিক চার বছর পূর্বে ৭৬ আসন বিশিষ্ট দু’টি ড্যাশ৮-কিউ৪০০ এয়ারক্রাফট দিয়ে ঢাকা-যশোর ফ্লাইট পরিচালনার মাধ্যমে পথচলা শুরু। শুরু থেকেই নিজস্ব ক্যাটারিংসহ ইন-হাউজ ট্রেনিং সুবিধা, আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ইন-ফ্লাইট সার্ভিস, যা যাত্রী সাধারনের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তুলেছে।
যাত্রা শুরুর এক বছরের মধ্যে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে সকল চালু বিমানবন্দরে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স ফ্লাইট পরিচালনা করে।বর্তমানে অভ্যন্তরীণ রুটে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, সিলেট, যশোর, সৈয়দপুর, বরিশাল, রাজশাহী রুটে প্রতিদিন ফ্লাইট পরিচালনা করছে প্রতিষ্ঠানটি।
ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স যাত্রা শুরুর দু’বছরের মধ্যে ১৫ মে ২০১৬ তারিখে ঢাকা-কাঠমান্ডু রুটে ফ্লাইট পরিচালনার মধ্যেমে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে যাত্রা শুরু করে। বর্তমানে ঢাকা থেকে কলকাতা, মাস্কাট, দোহা, কুয়ালালামপুর, সিঙ্গাপুর, ব্যাংকক ও গুয়াংজু রুটে নিয়মিত ফ্লাইট পরিচালনা করে আসছে।
এছাড়া চট্টগ্রাম থেকে কলকাতা, মাস্কাট ও দোহা রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করছে। নিকট ভবিষ্যতে আবুধাবী, জেদ্দা, রিয়াদ, দাম্মাম, দুবাই, হংকং, দিল্লী ও চেন্নাই রুটে ফ্লাইট পরিচালনার পরিকল্পনা নিয়েছে ইউএস-বাাংলা এয়ারলাইন্স।
বর্তমানে ইউএস-বাংলার বিমান বহরে মোট সাতটি এয়ারক্রাফট রয়েছে, যার মধ্যে ১৬৪ আসনের চারটি বোয়িং ৭৩৭-৮০০ এবং ৭৬ আসনের তিনটি ড্যাশ৮-কিউ৪০০ এয়ারক্রাফট আছে। বর্তমানে সপ্তাহে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুটে ৩৩০টির অধিক ফ্লাইট পরিচালিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে গত চার বছরে ইউএস-বাংলা প্রায় বিয়াল্লিশ হাজার ফ্লাইট পরিচালনা করে বাংলাদেশে আকাশ পরিবহনে এক অনন্য নজির স্থাপন করেছে। যাত্রা শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত ৯৮.৭% অন-টাইম ফ্লাইট পরিচালনার রেকর্ড রয়েছে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের। পঞ্চম বর্ষে পদার্পণ উপলক্ষে দু’টি বোয়িং ৭৩৭-৮০০ ও দু’টি বোয়িং ৭৭৭-২০০ইআর এয়ারক্রাফট বিমান বহরে যুক্ত করার পরিকল্পনা নিয়েছে ইউএস-বাংলা।
যাত্রীসেবার অনন্য নজির স্থাপন করায় স্বীকৃতিস্বরূপ ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স অভ্যন্তরীণ রুটে গত তিন বছর যাবত সেরা এয়ারলাইন্স এর মুকুট অর্জন করতে পেরেছে। দেশে-বিদেশে বর্তমানে প্রায় ১৪০০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী আছে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সে। যা দেশের বেকার সমস্যা সমাধানেও কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়া নিয়মিত ট্যাক্স-সারচার্জ পরিশোধ করে দেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রেখেছে। সাথে আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করে দেশের সুনাম বৃদ্ধি করে চলেছে। বৈদেশিক মূদ্রা অর্জন করে দেশের অর্থনীতিকে করছে আরো সূদৃঢ়।
ইউএস-বাংলার টিকেট সংগ্রহ করার জন্য রয়েছে অন-লাইন বুকিং সুবিধা। রয়েছে হোম ডেলিভারী সুবিধাও। সারাদেশে নিজস্ব ৩০টি সেলস্ অফিস রয়েছে। এছাড়া কাঠমান্ডু, কলকাতা, মাস্কাট, দোহা, কুয়ালালামপুর, সিঙ্গাপুর, ব্যাংকক, গুয়াংজু, কানাডা, নিউইয়র্ক এ নিজস্ব সেলস্ অফিস আছে। ফ্রিকোয়েন্ট ফ্লাইয়ারদের জন্য রয়েছে স্কাইস্টার প্যাকেজ। যার মাধ্যমে শুধু টিকেটেই সুবিধা পাবে না বরং যাত্রীরা বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন ধরনের পণ্য ক্রয়ে ডিসকাউন্ট সুবিধাও পেয়ে থাকে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যাত্রীদেরকে বেশ কয়েকটি স্পেশাল সার্ভিস দিয়ে যাচ্ছে ইউএস-বাংলা, যা অনুকরনীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে এভিয়েশন শিল্পে।
উল্লেখযোগ্য সার্ভিসগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- আন্তর্জাতিক রুটের বিজনেস ক্লাসের যাত্রীদের জন্য রয়েছে পিক-ড্রপ সার্ভিস, আন্তর্জাতিক ফ্লাইট অবতরনের পর ১০ মিনিটে ল্যাগেজ ডেলিভারী, সিনিয়র সিটিজেনদের জন্য ২০%, সামরিকবাহিনীর কর্মকর্তা ও গলফারদের জন্য ১০% মূল্যছাড়সহ আরো নানাবিধ সুযোগ সুবিধা।
ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স শুধু যাত্রীই পরিবহন করে না সাথে বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক গন্তব্যে কার্গোও পরিবহন করে থাকে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স দেশের বিভিন্ন শিক্ষা, সামাজিক, সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন খেলাধূলার উন্নয়নের সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িয়ে আছে।
“ফ্লাই ফাস্ট-ফ্লাই সেফ” স্লোগান নিয়ে যাত্রা শুরু করা ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স সর্বোচ্চ সেবা প্রদানে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল-মামুন চতুর্থ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আনন্দঘন মূহুর্তে বলেন, “প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে আমরা যেকোন ধরনের প্রতিযোগিতার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে প্রস্তুত। আমাদের বিমান বহরে অধিক সংখ্যক আধুনিক বিমান যুক্ত করে চলেছি। বহরে অধিক সংখ্যক বিমান ও অধিক গন্তব্য সম্প্রসারনের লক্ষ্যে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স কাজ করে যাচ্ছে। দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির সাথে সম্পৃক্ত থাকতে পেরে ইউএস-বাংলা পরিবার অত্যন্ত আনন্দিত ও গর্বিত।”
এছাড়া পঞ্চম বর্ষে পদার্পণ উপলক্ষে তিনি বলেন, “ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের সাফল্যে ভরা চার বছর এর সাথে যে সকল সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্ট, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ, বিভিন্ন কর্পোরেট অফিস, বিভিন্ন প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক, অনলাইন মিডিয়ার কর্মরত সাংবাদিকবৃন্দ, সর্বোপরি প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পৃক্ত যেসকল কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছে তাদের সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।”
বিডি-প্রতিদিন/ ই-জাহান