বুধবার, ২২ অক্টোবর, ২০১৪ ০০:০০ টা

বাঁওড়ে অবাধে বালু উত্তোলন হুমকিতে পরিবেশ

বাঁওড়ে অবাধে বালু উত্তোলন হুমকিতে পরিবেশ

অবাধে বালু উত্তোলন করায় ফসলি জমি নষ্ট হচ্ছে

যশোর সদর উপজেলার দেয়াড়া ইউনিয়নের বুকভরা বাঁওড় থেকে অবাধে বালু উত্তোলনের ফলে মারাত্মক বিপর্যয়ের আশঙ্কায় পড়েছে বাঁওড় সংশ্লিষ্ট গ্রামগুলোর বাসিন্দারা। বাঁওড়ের চারপাশের জমিতে বালু পড়ায় ইতোমধ্যেই চাষাবাদ বন্ধ হয়ে গেছে। বাঁওড়ের গভীরতা বেড়ে গেছে মারাত্মকভাবে। দীর্ঘমেয়াদে ভূমিধসসহ আরও বড় ধরনের পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে বাঁওড়-সংলগ্ন গ্রামগুলোর কয়েকটি বাড়িতে ফাটলের সৃষ্টি হয়েছে। বালি পরিবহনে ভারী যানবাহন ব্যবহার করায় গ্রামের রাস্তাঘাটের অবস্থাও করুণ হয়ে পড়েছে। যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পেট্রোলিয়াম অ্যান্ড মাইনিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. এইচএম জাকির হোসেন বলেন, 'বালুর স্তর থাকে লুজ। নিচ থেকে তা উত্তোলন করা হলে ভূগর্ভে শূন্যতার সৃষ্টি হয়। এই শূন্যতার কারণে জলাশয়ের দুই পাড়ের অংশ প্রথমে ভাঙতে শুরু করে। এই শূন্যতার কারণে কয়েকবছর পর আরও খারাপ ফলাফল লক্ষ্য করা যাবে।' ১৫৩ হেক্টর জমির উপর অবস্থিত বুকভরা বাঁওড়টি এ অঞ্চলের অন্যতম বৃহৎ বাঁওড়। বাঁওড় সংলগ্ন চান্দুটিয়া, আরিচপুর, হালসা, ইছাপুর, নারাঙ্গালি, মঠবাড়ি গ্রামের ২১৩টি পরিবারের জীবন-জীবিকা এই বাঁওড়ের ওপর নির্ভরশীল। গত মৌসুমেও স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী এ বাঁওড় থেকে বালি উত্তোলন শুরু করেছিল। সেসময় বাঁওড়টি গভীরতা দ্রুত বেড়ে যায়। মাছ চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আশপাশের জমিতে ধান উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। অভিযোগ পেয়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তারা সেবার বালু উত্তোলন বন্ধ করে দেন। মঠবাড়ি গ্রামের কৃষক আতর আলী জানান, তার বাঁওড় সংলগ্ন জমিতে ২০-২২ মণ করে ধান হতো। সেই জমিতে এখন সেচ দেওয়ার আধা ঘণ্টার মধ্যেই পানি শুকিয়ে যায় বালুর কারণে। স্থানীয় মৎস্যজীবীরা জানান, বুকভরা বাঁওড়ে কার্পজাতীয় মাছের পাশাপাশি দেশী সব মাছের চাষ হতো। নিয়মিত বালু তোলার কারণে বাঁওড়ের গভীরতা যেমন বেড়েই চলেছে, তেমনি বাঁওড়ের পলিমাটির স্তর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ কারণে মাছে প্রাকৃতিক ফুড সোর্স নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বুকভরা বাঁওড়ের মৎস্যজীবী শীতল বিশ্বাস বলেন, 'বাঁওড়ে এখন আর আগের মতো মাছ ধরতে পারছি না। বালু তোলার কারণে বাঁওড়ের গভীরতা এতো বেড়েছে যে, দুই-তিনটা বড় বাঁশ জোড়া দিয়েও ঠাঁই পাওয়া যাচ্ছে না।' বুকভরা বাঁওড় মৎস্যজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অভিমন্যু বিশ্বাস জানান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার হস্তক্ষেপে বালু উত্তোলন কিছুদিন বন্ধ ছিল। কিন্তু শুষ্ক মৌসুম শুরুর সঙ্গে সঙ্গে আবার তারা বালু উত্তোলন শুরু করেছে। এভাবে চলতে থাকলে মৎস্যজীবীরা পথে বসে যাবে। যশোর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) কামরুল আরিফ বলেন, 'অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগ আমার কাছেও এসেছে। জেলা প্রশাসকের সঙ্গে আলোচনা করে ২-১ দিনের মধ্যে অভিযান চালিয়ে বালু উত্তোলন বন্ধ করা হবে।' ইউএনও বলেন, যেহেতু এটি একটি বড় ঘটনা, সে কারণে প্রস্তুতি নিয়েই সেখানে অভিযান পরিচালনা করা হবে।

 

 

সর্বশেষ খবর